২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬ মাঘ ১৪৩১, ১৯ রজব ১৪৪৬
`

২৫০ জন সাবেক বিডিআর সদস্যের জামিন মঞ্জুর

বিডিআর বিদ্রোহ
-


বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২৫০ জন সাবেক বিডিআর সদস্যকে জামিন দিয়েছেন আদালত। ১৫ বছর পর তারা জামিন পেলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন খান বলেন, ‘যারা আগের মামলায় (হত্যা মামলা) খালাসপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের পরে আপিল নেই তারা আজকে জামিন পেয়েছেন। এ ছাড়া যে ৩০ জনের নাম বিস্ফোরক মামলার চার্জশিটে ছিল তাদেরকে বাদ দিয়ে বাকিদের জামিনের আদেশ দিয়েছেন আদালত।’
আসামিদের এক আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত বলেছেন, হত্যা মামলায় যারা নিম্ন আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন এবং যাদের ক্ষেত্রে সেই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেনি এবং তাদের হাইকোর্ট পর্যন্ত আর কোনো সাজা নেই, সেই ২৫০ জনকে জামিন দিয়েছেন আদালত।’ এই সংখ্যা প্রায় আড়াই শ’ হতে পারে বলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ধারণা দিয়েছেন। অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেছেন, যাদের জামিন দেয়া হয়েছে, সঠিকভাবে তাদের তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে জামিনের ব্যবস্থা করার জন্য দুই দিন সময় লাগতে পারে। দুই দিন পরে তারা জামিন পেয়ে যাবেন বলে আশা করেন এই আইন কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে পিপি বোরহান উদ্দিন বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় কতজন আসামি জামিন পেয়েছেন, সেটি নির্দিষ্ট করে এখন বলা সম্ভব নয়। বিচারিক এবং উচ্চ আদালত থেকে হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যারা বিস্ফোরক দ্রব্য মামলার আসামি, তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দু’টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতোমধ্যে রায় দিয়েছেন। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্য দিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এ মামলার সাক্ষী এক হাজার ৩৪৪ জন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৭৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি) সদর দফতর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। সে দিন বিডিআরের কয়েক শ’ সদস্য পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালান। প্রায় দুই দিনব্যাপী চলা বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও সে দিন নৃশংসতার শিকার হন।
পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় মামলা। বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ মামলার রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান। যেকোনো হত্যাকাণ্ডের মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে অনুমোদনের জন্য আসে। পিলখানা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়।

রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামির পক্ষে পৃথক তিনটি আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। অন্য দিকে হাইকোর্টের রায়ে যারা খালাস পেয়েছেন এবং যাদের সাজা কমেছে-এমন ৮৩ জন আসামির বিষয়ে ২০টি লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এই শুনানি হবে আপিল বিভাগে। পরবর্তী শুনানির জন্য ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০০৯ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস বা বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় রোববার কেরানীগঞ্জের আদালতে শুনানির পর জামিনের এই আদেশ দেন আদালত। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি মামলার শুনানির কথা থাকলেও আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে সে দিন শুনানি স্থগিত করেছিলেন আদালত। এর পর স্থান পরিবর্তন করে সেটি কেরানীগঞ্জে নির্ধারণ করা হয়। ২০০৯ সালের ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিচার শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে।

 


আরো সংবাদ



premium cement