শিবগঞ্জ সীমান্তে দফায় দফায় ধাওয়া, সংঘর্ষ
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জ সংবাদদাতা
- ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০, আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:৩৯
-ভারতীয়দের ককটেল সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ আহত ৫ বাংলাদেশী
-আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে বিএসএফ : বিজিবি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচ বাংলাদেশী নাগরিক আহত হন। সীমান্ত এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে অন্তত অর্ধশত ককটেল। এ ছাড়া সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ভারতীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, সকাল ৯টার দিকে ভারতীয় কয়েকজন নাগরিক সীমান্তের শূন্যরেখায় বাংলাদেশ অংশে এসে বেশ কিছু আম ও বরই গাছ কাটা শুরু করে। এ সময় বাংলাদেশীরা বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাগি¦তণ্ডা হয়। পরবর্তীতে ভারতীয় নাগরিকরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে শূন্যরেখার কাছাকাছি অবস্থান নেয় এবং বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। বাংলাদেশী নাগরিকরাও সীমান্ত এলাকায় জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে উভয়পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। কয়েক দফায় দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। ভারতীয়দের ছোড়া হাঁসুয়া, পাথর ও ইটপাটকেলে পাঁচ বাংলাদেশী আহত হন। আহতরা হলেন বিনোদপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামের জিয়ারুল ইসলামের ছেলে রনি (২৫) ও কালিগঞ্জ গ্রামের সেরাজুল ইসলামের ছেলে ফারুক (৩৫), বিশ্বনাথপুর গ্রামের ঝাইটনের ছেলে আসমাউল (১৬) ও কালিগঞ্জ গ্রামের জিন্নুরের ছেলে তরিকুল (৫৫)। অপরজনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, শিবগঞ্জের চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তের ১৭৭ পিলারের ১ থেকে ৩ নম্বর এস এলাকায় সকালে ঘটনার সূত্রপাত হলেও বিকেলেও সংঘর্ষ চলে। উত্তেজনার পর প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ।
চৌকা এলাকার বাসিন্দা আইয়ুব আলী, মারুফুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, ভারতীয়রা সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুতি নিয়েই সীমান্তে আসে। তারা সাথে ককটেল ও বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র নিয়ে আসে। বাংলাদেশীদের লক্ষ্য করে তারা কমপক্ষে অর্ধশত ককটেল বিস্ফোরণ করেছে। এ ছাড়াও এলোপাতাড়িভাবে ছোড়া ইটপাটকেল ও পাথরে কয়েকজন আহত হয়। আহত কিশোর মেসবাউল হক জানান, ভারতীয় নাগরিকরা সীমান্তের এপারে থাকা একজন বিজিবি সদস্যকে লক্ষ্য করে হাঁসুয়া ছুড়ে ছিলেন। বিজিবি সদস্যকে বাঁচাতে গিয়ে ওই হাঁসুয়া এসে আমার পায়ে লাগে। পায়ের অনেকখানি কেটে গেছে। আহত আসমাউল হোসেন বলেন, ভারতীয় নাগরিকের ছোড়া পাথর এসে তার মাথায় লাগে। এতে মাথা ফেটে রক্ত বের হয়। তিনি স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
কবিরুল ইসলাম, আবদুল মালেকসহ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, সীমান্তের ওপারে দুই থেকে আড়াই হাজার লোক জড়ো হয়। তাদের বেশির ভাগেরই হাতে ছিল ধারালো অস্ত্র। তারা বস্তায় ভরে পাথর ও ইটের টুকরো নিয়ে এসেছে। কয়েকজন মুখোশধারীও সীমান্তের ওপার থেকে ককটেল ছুড়েছে বাংলাদেশীদের লক্ষ্য করে। কালিগঞ্জ ঘুমটোলা গ্রামের রবু আলী জানান, মোটরসাইকেলে ফারুক সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি দেখার জন্য গিয়েছিলেন। উত্তেজনার মধ্যে তীব্র বেগে আসা পাথরের আঘাত পান মাথায়। স্থানীয় বাসিন্দা মিঠুন জানান, সীমান্তের বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার সময় কয়েকজন ভারতীয় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে রনির ওপর আক্রমণ করে। এতে রনি আহত হন। জানা যায়, বাংলাদেশীদের লক্ষ্য করে বিএসএফ ইট-পাথর ও কাঁদানো গ্যাস নিক্ষেপ করে। বাংলাদেশীরাও পাল্টা ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। স্থানীয়রা জানান, চৌকা সীমান্তের কালিগঞ্জ এলাকার ওপারে গাছ কাটা শুরু করে বিএসএফের সহায়তায় ভারতীয়রা। এ সময় বাংলাদেশ সীমান্তের লোকজন বাধা দিলে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে চৌকা সীমান্তের কাছে বিএসএফ ও ভারতীয়রা ঢুকে বাংলাদেশীদের ফসল কেটে নিয়ে যায়।
এ দিকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক শেষে ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, ভারতীয় নাগরিকরা আমাদের এলাকার আমগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয় ভারতীয় ও বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সীমান্তে আমরা অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করেছি। তিনি জানান এ ঘটনায় সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে গাছ কাটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএসএফ। পাশাপাশি তাদের দিক থেকে তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে বলে জানায়। আমরাও ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত সতর্ক আছি। অভিযোগ উঠেছে বিজিবি সদস্যসহ কয়েকজন আহত হয়েছে এবং বিএসএফ বোমা নিক্ষেপ করেছে-গণমাধ্যমকর্মীরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এটা হচ্ছে আমাদের মব কন্ট্রোল করার জন্য...উল্লেখযোগ্য আহত হওয়ার পরিসংখ্যান নেই। বিএসএফের কেউ আহত হয়েছে কি না আমরা এখনো জানতে পারিনি।’ মব কন্ট্রোল করার জন্য ওরা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। এতে তারা আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে।
এর আগে গত ৫ জানুয়ারি চৌকা সীমান্তের ওপারে ভারতের মালদা জেলার সুকদেবপুর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে বিজিবি বাধা দেয়। এ নিয়ে টানা চার দিন ওই সীমান্তে চলে উত্তেজনা বিরাজ করেছে। দুই বাহিনীই নিজ নিজ সীমানায় অতিরিক্ত শক্তি ও জনবল মোতায়ের করেছে। পরে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন ও সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে চারবার পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ করে দেয় বিএসএফ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা