পটপরিবর্তনেই খরচ কমলো ৪৮ শতাংশ
- হামিদ সরকার
- ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বিদ্যুৎপদ্ধতির নির্ভরযোগ্যতা ও দক্ষতা উন্নয়ন
- ৪ বছরের প্রকল্প এখন ৮ বছরে
- কমে গেল অনেক খাতের কার্যক্রম
- পরামর্শকের চুক্তি কার্যকর করতেই ৩০ মাস পার
দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর খরচ ধরা হতো লাগামছাড়া। প্রকল্প অনুমোদনের পর খরচ ও সময় বাড়ানোর জন্য ঢিমেতালে চলে বাস্তবায়নকাজ। আবার অনেক ক্ষেত্রেই নামকাওয়াস্তে সমীক্ষা করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় সরকার, মন্ত্রণালয়, ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের সুবিধার্থে। কিন্তু দেশের পটপরিবর্তনের পর অনেক প্রকল্পের ব্যয় কমে গেছে। পটপরিবর্তনের পর বিশ^ব্যাংকের ঋণে সাত বছর ধরে চলমান বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম নির্ভরযোগ্যতা এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ৪৭.৯১ শতাংশ বা ২৭৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা কমলো। চার বছরের প্রকল্পের বয়স এখন আট বছরে উন্নীত। সাত বছর পরে এসে প্রকল্পে কিছু কাজ বাদ দেয়াতে খরচ প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। এই প্রকল্পে নিয়োগকৃত আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পাদিত চুক্তি কার্যকরে ৩০ মাস দেরি হয়। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৭৯.৭৮ শতাংশ বলে পিজিসিবির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি কর্তৃক বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেম রিলায়েবিলিটি অ্যান্ড ইফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট শীর্ষক প্রকল্পটি মোট ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন খরচের জোগান দেবে জিওবি থেকে ৯২ কোটি ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ ৪৩০ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বাকি অর্থের জোগান দেবে পিজিসিবি ৫৭ কোটি দুই লাখ ৯৬ হাজার টাকা। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ বিভাগ ২০২১ সালের ১৭ জুন ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করে। তাতেও প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় না। অতঃপর পরিকল্পনা কমিশন ২০২২ সালের ২৫ মে খরচ বৃদ্ধি ছাড়াই প্রকল্পের মেয়াদ আরো আড়াই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে।
আবারো মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে দেয়া হয় ডিসেম্বরে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পরিবর্তন, প্রকল্পের কার্যপরিধির পরিবর্তন, কিছু অঙ্গের ব্যয় হ্রাস বা বৃদ্ধি এবং ছয় মাস মেয়াদ বৃদ্ধিসহ প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধন প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় কমিয়ে ৩০২ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা করা হয়েছে। যেখানে জিওবি ৫১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, বিশ্বব্যাংকের ঋণ ২১৮ কোটি ৬৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব ৩১ কোটি ৭৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা, যা অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় অপেক্ষা ২৭৭ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা ৪৭.৯১ শতাংশ কম।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ (পিজিসিবি) পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, প্রকল্পের আওতায় বরিশাল (উত্তর)-বরিশাল (৯.৩৪ কিলোমিটার) ও সৈয়দপুর-পূর্বসাদীপুর (২৪.৯৭ কিলোমিটার) ১৩২ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন রিকন্ডাক্টরিং, ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফ্রি গভর্নর মোড অব অপারেশন (এফজিএমও) বাস্তবায়ন এবং এনএলডিসি স্ক্যাডা বা ইএমএস সিস্টেম আধুনিকায়ন ও ডেসপাস ইঞ্জিন স্থাপনের সংস্থান রয়েছে। এ ছাড়া পাওয়ার সিস্টেমের দক্ষতা ও নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য সিস্টেম স্ট্যাডি এবং কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য পরামর্শক নিয়োগের সংস্থান রাখা হয়েছে।
মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, প্রকল্পের কার্যপরিধি হতে প্যাকেজ-২ এর অধীন ডিএলআর ডিভাইস ইনস্টল করা ও প্যাকেজ-৩ এর লট-৪ এর অধীন টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম ও গেটওয়ে হালনাগাদকরণ কাজ দু’টি বাদ দেয়া হয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয় ৪৭.৯১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বাস্তবায়নকারী সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, কাজের ধরন বিবেচনায় ও কাজের দ্বৈধতা পরিহার করার জন্য বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী অনুমোদিত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত দু’টি পরামর্শক সার্ভিস প্যাকেজকে একীভূত করা হয়েছে। এছাড়া, প্রকল্পের আওতাধীন নির্ধারিত লাইনসমূহে বর্তমানে ডিএলআর ডিভাইস প্রয়োজন না থাকায় পরামর্শকের সুপারিশ এবং পিএসসির সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্যাকেজ-২ এর কাজটি প্রকল্প হতে বাদ দেয়া হয়েছে। আর প্যাকেজ-৩ এর অধীনে ভিন্ন ভিন্ন একাধিক কাজ অন্তর্ভুক্ত আছে। পাওয়ার গ্রিডের পরিচালক পর্ষদের সিদ্ধান্তক্রমে ও পিএসসির সুপারিশ অনুযায়ী কাজের সুবিধার্থে প্যাকেজ-৩ এর কাজগুলো পাঁচটি লটে বিভক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, বিদেশী ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের ব্যাপারে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তা বলেন, বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের জন্য চুক্তিবদ্ধ ঋণের অবিতরণকৃত অংশের জন্য কমিটমেন্ট চার্জ দিতে হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলে অধিক পরিমাণে কমিটমেন্ট চার্জ পরিশোধ করতে হয়। কাজেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন করা উচিত। ওই প্রকল্পের জন্য বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য বলা হয়েছে।
শিল্প ও শক্তি বিভাগ বলছে, প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ আবশ্যিকভাবে জুন ২০২৫ এর মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। প্রকল্পের মেয়াদ আর বৃদ্ধি করা যাবে না। বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের বাস্তবায়ন আবশ্যিকভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। পিইসি সভা থেকে দেয়া পরামর্শ যথাযথভাবে পরিপালনপূর্বক আরডিপিপি পুনর্গঠন করে বিদ্যমান পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করতে হবে।
প্রকল্পের ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমানের সাথে গতকাল সন্ধ্যায় তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রকল্পটি তো শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্পটি রিভিশনে যাচ্ছে না। প্রকল্পটি গত ১ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্যের সভাপতিত্বে পিইসি সভায় সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া বলে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি বারবারই বলেন প্রকল্পের কাজ শেষ, সামান্য কিছু বাকি আছে। এক-দু’ মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আমরা ক্লোজিংয়ে যাচ্ছি। তিনি এ কথাও বলেন যে, ক্লোজিং করতেও দু’তিন মাস লাগে। তিনি বলেন, সবাই তো ব্যয় বাড়ায়, আমার প্রকল্পে ব্যয় কমেছে। পিইসির সভার কার্যবিবরণী তাকে পড়ে রেশানালে তিনি বলেন, এটা ভুল উঠেছে মনে হয়। অনেক প্রকল্পই সংশোধন হচ্ছে।
পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রশীদ খানের মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রকল্পের মেয়াদ সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো: মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, অনেক দিন আগে পিইসি হয়েছে। আমার যতটা মনে করে প্রকল্পটি শেষ হয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা