বৈষম্যহীন বাংলাদেশ কায়েম না হওয়া পর্যন্ত জামায়াত থামবে না : ডা: শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মজলুম দল। সাড়ে ১৫ বছর জামায়াতের নেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেয়া হয়েছে, হাজার নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। ক্রস ফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে। হাটঘাট, মসজিদ-মাদরাসা এমনকি মন্দিরেও লুটপাট চালিয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা। কিন্তু ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ ও তার দুর্নীতিবাজ দোসররা সবাই চাটি-বাটি নিয়ে পালিয়ে গেছে। তাই বৈষম্যহীন, মানবিক, দুর্নীতি দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থামবে না। গতকাল বিকেলে চুয়াডাঙ্গা শহরের টাউন মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন দলটির আমির ডা: শফিকুর রহমান।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রতি ইঙ্গিত করে জামায়াত আমির বলেন, ‘ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তারা দেশের জ্ঞানী, শিক্ষিত, মার্জিত ও অভিজ্ঞ মানুষদের হত্যা করেছে। হাজারো মানুষকে নির্যাতন করেছে। তারা শত শত মানুষকে গুম করেছে, খুন করেছে। মানুষের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে। তারা দেশের সম্পদও লুট করেছে। তারা উন্নয়নের বুলি শুনিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘পরপর তিন তিনটি নির্বাচনে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। জুলাই-আগস্টে আমাদের সন্তানরা বিপ্লব ঘটিয়ে ২৪-এ স্বাধীনতা এনেছেন। ফলে স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশের মানুষের সামনে দাঁড়ানোর মতো সৎসাহস শেখ হাসিনার ছিল না; যে কারণে তিনিসহ তার দোসররা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

ছাত্র-জনতার অবদানকে স্মরণ করে ডা: শফিক বলেন, ‘ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে এই জাতি দেশবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবে, ইনশা আল্লাহ। তরুণ-যুব সমাজ চাঁদাবাজমুক্ত, দখলবাজমুক্ত ও পেশিশক্তিমুক্ত নতুন দেশ চায়। আমরাও সাম্যের বাংলাদেশ চাই। এই প্রজন্ম বুকের রক্ত দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। প্রয়োজনে আমরাও রক্ত দিয়ে হলেও এই স্বাধীনতা ধরে রাখব, ইনশা আল্লাহ।
এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা কারো টাকার কাছে নিজেদের ভোট বিক্রি করব না। ষড়যন্ত্র চলছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। আগামী নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ। কালো টাকা ও পেশিশক্তির কাছে আমরা মাথা নত করব না। যারা কালো টাকা দিয়ে ভোটের মাঠে আসবে, তাদেরকে না বলে দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে জামায়াত নেতা বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা ২৬ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করেছে। এসব টাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করে দেশে ফেরত আনতে হবে। পাচারকারীদের খুঁজে খুঁজে এনে ওই কাশিমপুর জেলে পাঠাতে হবে। তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো: জাহিদুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসেন, এ অঞ্চলের টিম সদস্য খন্দকার আলী মোহসিন, যশোর আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, ঝিনাইদহ আমির আলী আজম, কুষ্টিয়া আমির মাওলানা অধ্যাপক আবুল হাশেম, মেহেরপুর জেলা আমির মাওলানা তাজ উদ্দীন খান, চুয়াডাঙ্গার সাবেক আমির আনোয়ারুল হক মালিক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলার আহ্বায়ক আসলাম অর্ক, জেলা জামায়াতের জয়েন্ট সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াত আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদা কিভাবে পূরণ করা যায় সেটি জাতির সামনে কিভাবে পেশ করা যায় তারই এক মাইলফলক হয়ে থাকবে জেলা জামায়াতের আজকের সম্মেলন। মানবতার কল্যাণে জামায়াত কাজ করবে এবং করে আসছে।
আসলাম অর্ক বলেন, চুয়াডাঙ্গায় মেয়েদেরকেও কোপানো হয়েছে। এর বিচার করতে হবে। দেশ আবার স্বাধীন হলেও চাঁদাবাজি থেমে নেই। সাবধান হয়ে যান। তিনি বলেন, আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। আমরা একটি সুন্দর দেশ গড়তে চাই।
শহীদ শুভর বাবা মো: আবু সঈদ মণ্ডল বলেন, আমার সন্তান অধিকার আদায়ের জন্য জীবন দিয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ স্বাধীনতার অপব্যবহার করছে। একটা কথা বলতে চাই, আমার সন্তানদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করবেন না।
সভাপতির বক্তব্যে মো: রুহুল আমিন বলেন, এত দিন চুয়াডাঙ্গায় কেবল রাসের শাসন চলেছে। এবার আমরা চুয়াডাঙ্গাকে নতুন করে গড়তে চাই।
কর্মী সম্মেলন শুরুর আগেই সম্মেলনস্থল কানায় কানায় ভরে যায়। নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় পুরো চুয়াডাঙ্গা শহর। কর্মী সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।

দেড় দশক পর রাজশাহীতে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন আজ
রাজশাহী ব্যুরো জানান, আজ শনিবার রাজশাহীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেড় দশক পর নগরীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে রাজশাহী জেলা ও মহানগর জামায়াত যৌথভাবে এই কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এতে লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবেন বলে আশা করছেন দলটির ঊর্ধ্বতন নেতারা। সকাল ৯টায় কর্মী সম্মেলন শুরু হবে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান।
কর্মী সম্মেলন শেষে দুপুর ২টায় নগরীর নাইস কমিউনিটি সেন্টারে দলটির মহিলা কর্মী সম্মেলন ও পরে চিকিৎসক সমাবেশ হবে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত, আর বাদ মাগরিব রাজশাহী চেম্বার ভবনে ব্যবসায়ীদের নিয়ে সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে।
২০১০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে জামায়াতের সর্বশেষ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আর প্রকাশ্যে বড় কোনো কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, এটা শুধু রাজশাহীর কর্মী সম্মেলন। অন্যান্য জেলা থেকে কোনো গাড়ি ঢুকবে না। অন্য জেলায় আলাদাভাবে প্রোগ্রাম হবে। মাদরাসা ময়দানে আমাদের রাজশাহী মহানগরী ও জেলার সব উপজেলার কর্মীরা অংশ নেবেন। অন্তত লক্ষাধিক কর্মীর সমাগম হবে এই সম্মেলনে। কর্মী সম্মেলন সফল করতে এরই মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নাটোরে পথসভা
বড়াইগ্রাম (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ একটা মানবিক দেশ না হবে, দুর্নীতিমুক্ত, দুঃশাসনমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ না হবে তত দিন পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলতেই থাকবে। এ লড়াইয়ে দেশের মানুষকে আমরা পাশে চাই। এ দেশ হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবার। কাজেই সুন্দর দেশ গড়তে সবার সহযোগিতা লাগবে।
তিনি গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাইপাস চত্বরে আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে জেলা জামায়াতের আমির ড. মীর নুরুল ইসলাম, জেলা অ্যাস্টিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল হাকিম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আবুল হোসাইন, নাটোর শহর আমির রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, সেক্রেটারি আবু বকর সিদ্দিক এবং উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি নাজমুল ইসলামসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জামায়াতের আমির উপজেলার রাজাপুর বাজার ও ধানাইদহ বাজারে পৃথক পথসভায় বক্তব্য রাখেন।