মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে বাংলাদেশকে সংস্কারের আহ্বান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে স্থায়ী সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। গত বৃহস্পতিবার সংস্থাটির ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৫-এ এ কথা জানানো হয়। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। সেখানে বলা হয়েছে, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে জোরপূর্বক গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য কমিশন গঠন করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। কর্তৃত্ববাদী হাসিনার শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। জুলাই-আগস্ট মাসে তিন সপ্তাহব্যাপী ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমনের নামে প্রবল দমন-পীড়নের মাধ্যমে নির্বিচারে গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী সদস্যরা। এতে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
৫৪৬ পৃষ্ঠার ওই ওয়ার্ল্ড প্রতিবেদনের ৩৫তম সংস্করণে বিশ্বের শতাধিক দেশের মানবাধিকার বিষয়ে পর্যালোচনা পেশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটির পরিচালক তিরানা হাসান লিখেছেন, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদের ওপর অন্যায়ভাবে দমন-পীড়ন চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়া তাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সরকারি বাহিনী বেআইনিভাবে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করেছে। অনেককে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।
২০২৪ সালে বিশ্বের ৭০টির বেশি দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে বেশির ভাগ দেশের কর্তৃত্ববাদী শাসনকাঠামোর মাধ্যমে বৈষম্যমূলক বক্তব্য এবং নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সমর্থন না পেলে এসব পদক্ষেপের অগ্রগতি হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে।
মীনাক্ষী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা দেয়া, গুম নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বেসামরিক তদারকির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী অধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অধিকারকর্মীরা। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে বিরোধী সমর্থক ও সাংবাদিকদের নির্বিচারে গ্রেফতারের ঘটনাও রয়েছে। তাদের যথাযথ প্রক্রিয়া ও আইনি পরামর্শের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসঙ্ঘে জোরপূর্বক গুম সংক্রান্ত কনভেনশনে সম্মতি দিলেও, নিরাপত্তা বাহিনী বেআইনিভাবে আটককৃতদের মুক্তি দিতে বা তাদের সাথে কী ঘটেছে সে সম্পর্কে তাদের পরিবারকে উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এবং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে। অনিবন্ধিত শরণার্থীরা ক্ষুধার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এসব শরণার্থীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হতে পারে এই ভয়ে স্বাস্থ্যসেবাও গ্রহণ করছেন না তারা।
এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের সাথে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
এ ছাড়া বিতর্কিত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ভেঙে স্বাধীন তত্ত্বাবধান ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সংস্কার করারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা