হাসিনাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থান চলাকালীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) কাছে থাকা ওই সময় চলাকালীন ঘটনাবলির বিবরণ সংক্রান্ত সব তথ্য (ডাটা) আলাদাভাবে অক্ষুণœ অবস্থায় সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থাকে তদন্ত কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে দেশের সব টেলিকম অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গতকাল চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
আদেশের বিষয়টি জানান ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা আদেশ ছাড়াই যেকোনো ব্যক্তি, কর্তৃপক্ষকে ডাকতে ও যেকোনো ডকুমেন্টস চাইতে পারার আইনি এখতিয়ার রাখেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থান চলাকালীন যেসব ঘটনাবলির বিবরণ এনটিএমসি ও বিটিআরসির কাছে সংরক্ষিত আছে যত ডাটা। এসব ডাটা একটি সময় পর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিলিট হয়ে যায়। আদালত তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ডাটাগুলো যেন আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা হয়। ভবিষ্যতে বিচারের প্রয়োজনে এগুলোর দরকার হতে পারে। এজন্য জুলাই আগস্টের সময়ে যত ডাটা সংরক্ষিত আছে তা অক্ষত ও অক্ষুণœ অবস্থায় সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে যতগুলো টেলিকম অপারেটর এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার আছে তারা যেন জুলাই আগস্টের তথ্যগুলোর ব্যাপারে তদন্ত করতে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করে। নেটওয়র্কে সিস্টেম ডিভাইস, আইটি লগ, সিস লগ এবং অন্য সহায়ক ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট। এগুলোর ব্যাপারে তদন্ত কাজে তাদের সহায়তা করে সে ব্যাপারে তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ দিকে দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় ৭৫ জনের সম্পদ বিবরণি ট্রাইব্যুনাল থেকে চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবে এ সংক্রান্ত কোনো আদেশ ট্রাইব্যুনাল থেকে দেয়া হয়নি উল্লেখ করে সংবাদটির প্রতিবেদক আলী ইব্রাহিমকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আগামী ২০ জানুয়ারি হাজির হতে স্বপ্রণোদিত নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে ডা: ফয়েজ হত্যার অভিযোগ : লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ডা: ফয়েজ আহমদকে নিজ বাসায় গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে এ অভিযোগ দাখিল করেন ডা: ফয়েজ আহমদের বড় ছেলে ডা: হাসানুল বান্না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারেক আহাম্মদ ছিদ্দিকী, সাবেক এডিজি রথ্যাব মে জে জিয়াউল আহসান, রথ্যাব-১১ এর সাবেক সিইও তারেক সাইদ মোহাম্মদসহ ৪১ জনের নামে এ অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগ দাখিলের পর এক লিখিত বক্তব্যে হাসানুল বান্না জানান, ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ডা: ফয়েজ আহমেদের নিজ বাসার ছাদে নিয়ে আঘাত করে, গুলি করে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। ডা: ফয়েজ আহমেদ অত্যন্ত মানবিক ডাক্তার হিসেবে পরিচিত এবং লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ছিলেন।
২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারি বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রথ্যাবের স্টিকার যুক্ত একটি গাড়িতে করে ঘটনাস্থলের বাসায় এসে লোহার গেট ভেঙে ফেলে এবং ভিকটিম ডা: ফয়েজকে নিজের বাসার দোতলার কক্ষ থেকে ধরে নিয়ে বিল্ডিংয়ের ছাদে নিয়ে যায়। এই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা (আসামিরা) বিল্ডিং ঢুকে সব কক্ষের দরজার তালা ভেঙে তল্লাশি ও ভাঙচুর চালায়। ডা: ফয়েজ আহমেদকে ছাদে নিয়ে তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রের বাঁট দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার সম্মুখ ভাগ ও নাকেমুখেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর জখম করে।
ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশে আসামি তারেক সাইদ মোহাম্মদ তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ফয়েজ আহমেদের ডান হাঁটুর ওপরে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে, তাতে ওই স্থানে গভীর ক্ষত হয়ে ব্যাপক রক্তপাত হয়। এই সময় গুরুতর আহত অবস্থায় মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ফয়েজ আহমেদকে তিনতলার ছাদের ওপর থেকে উপুড় করে (অর্থাৎ মাথা নিচের দিকে দিয়া) বিল্ডিংয়ের সামনের অংশের নিচে ফেলে দেয়। পরে তার লাশ সদর হাসপাতালে রেখে যায়। তৎকালীন সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধটির সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে ওই ঘটনাটির সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন বলে লিখিত বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা