১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২ মাঘ ১৪৩১, ১৫ রজব ১৪৪৬
`
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের ১৫০ সুপারিশ

কোনো আসনে ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনর্নির্বাচন

-


জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনে যদি ৪০ শতাংশ ভোট না পড়ে তবে সেই আসনে পুনর্নির্বাচনের সুপারিশ করেছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া এক ব্যক্তি যাতে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন এবং তিনি যাতে পরবর্তীতে আবার রাষ্ট্রপতি হতে না পারেন সে বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে। একটি স্থায়ী জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিয়োগ প্রদান করা, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এবং নাগরিক সমাজের অর্থবহ অংশগ্রহণের মাধ্যমে যোগ্য ও সুনামসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ প্রদান করা। ২০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১৬টি ক্ষেত্রে ১৫০টি সুপারিশ করেছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় সংসদ ভবনে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের এসব জানান, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। এ সময় অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সাথে আইসিটি আইনে সাজাপ্রাপ্তদের কোনো দলের সদস্য না করা এবং যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গুম-খুনের সাথে জড়িত তাদেরকে নির্বাচনের বাইরে রাখার সুপারিশের কথাও জানান কমিশন প্রধান। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করে দায়বদ্ধ করতে হবে। আগের কমিশন দায়বদ্ধ না থাকার কারণে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে। হলফনামায় যারা মিথ্যা তথ্য দিবে তাদের প্রার্থিতা বাতিল হবে। নির্বাচিত হয়ে গেলেও বাতিল হবে। তিনি বলেন, অন্যায় করে যাতে কেউ পার না পায় সেটি সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, উচ্চকক্ষের অর্ধেক সদস্য হবেন দলীয়, বাকি অর্ধেক হবেন নির্দলীয়। নির্দলীয় সদস্যদেরও রাজনৈতিক দলগুলোই মনোনয়ন দেবে। কিন্তু সেখানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ হবে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে। সংসদের আসন ১০০টি বাড়িয়ে ৪০০ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ নারীদের জন্য সংরক্ষিত করা এবং এগুলো ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নির্বাচন করা, যার মাধ্যমে নারীরা সরাসরি নির্বাচিত হবেন।
দলনিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য এবং সুনামসম্পন্ন ব্যক্তি যাতে রাষ্ট্রপতি হতে পারেন সেজন্য নির্দলীয় রাষ্ট্রপতি সুপারিশ করা হয়েছে। একটি বৃহত্তর নির্বাচকমণ্ডলী দ্বারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এই নির্বাচকমণ্ডলী হবে সংসদ সদস্যগণ এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ। নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের বিধান বাতিল চাওয়া হয়েছে।
কার্যকর সংসদের জন্য সংসদ সদস্যদের শুল্ক ফ্রি ফ্ল্যাট সুবিধা উঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার আমলে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের আগে সাধারণ সদস্যদের তালিকা থাকতে হবে। আইসিটি আইনে সাজাপ্রাপ্তদের কোনো দলের সদস্য না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি কার্যক্রম না রাখার পরামর্শ। পাঁচ বছর পরপর দলের নিবন্ধন রিনিউ করার প্রস্তাব দেযা হয়েছে। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। ২০১৮ সালে যারা রাতের ভোটের আয়োজন করেছে এবং তাদেরকে সহযোগিতা করেছে এমন সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রতিটি নির্বাচনের পর গেজেট প্রকাশের আগে নির্বাচন কমিশন সার্টিফাই করবে।

নির্বাচন কমিশন গঠন : নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। আইনটির উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এবং নাগরিক সমাজের অর্থবহ অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যোগ্য ও স্বনামখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ প্রদান এবং কমিশনারদের দায়িত্ব, স্বার্থের দ্বন্দ্ব, ক্ষমতা ও দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করা। বিকল্প হিসেবে একটি স্থায়ী জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে, যার জন্য অবশ্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা : নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল এবং পুনর্নির্বাচনের ক্ষমতা প্রদান করা। নির্বাচন কমিশনের সচিব নিয়োগের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা। নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে নির্বাহী বিভাগের পক্ষ থেকে এমন কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নেয়ার বিধান করা। বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে লিখিতভাবে যুক্তিসঙ্গত কারণ প্রদর্শনপূর্বক, সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে, ৯০ দিনের জন্য নির্বাচন স্থগিত করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে মতামত চাওয়ার বিধান করা।

 


আরো সংবাদ



premium cement