১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২ মাঘ ১৪৩১, ১৫ রজব ১৪৪৬
`

গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে দ্বিমত বিএনপি জোটের

ঠাকুরগাঁওয়ের জগন্নাথপুর ইউনিয়নে শৈশবের বন্ধুদের সাথে মিলনমেলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সাথে আজ বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের বিষয়বস্তু নিয়ে বিএনপি ও তাদের আন্দোলনের শরিকদের দ্বিমত আছে। তাই আজ বৈঠকে গেলেও এই মুহূর্তে ঘোষণাপত্র দেয়া ঠিক হবে না বলে বিএনপি জোট তাদের অবস্থান জানিয়ে আসবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা গত রাতে জানিয়েছেন, বৈঠকে না গেলে ড. ইউনূসকে বর্জন করা হয়েছেÑ এমন নেতিবাচক বার্তা যাবে । তাই বৈঠকে গিয়ে বিএনপি তাদের অবস্থান তুলে ধরার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছ থেকে ঘোষণার খসড়াপত্র পেয়েছি। তিনি আমাদের মতামত জানাতে অনুরোধ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এত বেশি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ যে এক দিনের নোটিশে এটা করা সম্ভব নয়। আমরা (দলে) এ বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং আরো আলোচনা করব। অন্যান্য দলের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, সংবিধান বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তাদের সাথেও কথা বলতে হবে। কারণ সংবিধানের ব্যাপারেও বহু কথা আছে, যেগুলো আমাদের দেখতে হবে।’
দলটির নেতারা জানান, মির্জা ফখরুল ইসলামের এই বক্তব্যে বিএনপির অবস্থান উঠে এসেছে। এই বক্তব্য বৈঠকেও উল্লেখ করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের দেয়া খসড়া ঘোষণাপত্রের বেশ কিছু বিষয়ে বিএনপি একমত নয়। বিএনপি এ বিষয়ে দলীয়ভাবে আলোচনা করেছে। তা ছাড়া বিএনপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দায়সারাভাবে গত ১৫ বছরের গুম, খুন ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে মনে করছে দলটি। এ ছাড়া ’৭২ সালের সংবিধান বাতিল বা সংশোধনের বিষয়টি উল্লেখ করা আছে খসড়া ঘোষণাপত্রে। দলটির নেতারা মনে করছেন, এর মানে ’৭২ সালের সংবিধান বাতিল করার লক্ষ্য নিয়েই এই ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়েছে।
এর আগে গত ৩১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ঘোষণাপত্র দেয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। মূলত বিএনপির বিরোধিতার কারণেই ঘোষণাপত্র দেয়ার ওই কর্মসূচি বাতিল করতে বাধ্য হয় বৈষম্যবিরোধীরা।
বন্ধু মিলনমেলায় ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ আবৃত্তি মির্জা ফখরুলের : গতকাল বুধবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় হাওলাদার হিমাগার চত্বরে শৈশবের বন্ধুদের আয়োজনে মিলনমেলা বসেছিল। আর সেখানেই দীর্ঘ দিন পর স্কুলের সহপাঠীদের কাছে পান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাদের সময় কাটে হাসি, গান আর আড্ডায়। কিছু সময়ের জন্য তারা যেন ফিরে যান শৈশব-কৈশরে।
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার একফাঁকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতা আবৃত্তি করেন মির্জা ফখরুল। আবৃত্তি শুরুর আগে এটি ‘সবচেয়ে প্রিয় কবিতা’ বলে জানিয়ে দেন তিনি। বলেন, একসময় আবৃত্তি করতাম, এখন করি না, এখন বক্তৃতা করি। তারপরও আমি চেষ্টা করব। কারণ একসময় আমিও নাটক করেছি, রঙ মেখেছি, একসময় নাট্যগোষ্ঠী করতাম।

অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুরনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে স্মরণ করেন ফেলে আসা দিনের কথা। শৈশবের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। ফখরুল বলেন, আমার অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু কুদ্দুস আমাদের মাঝ থেকে অনেক আগেই চলে গেছে। মনোয়ার চলে গেছে, যার সাথে সারা দিনে একবার দেখা না হলে খারাপ লাগত। অনেকেই আমাদের কাছ থেকে চলে গেছে। যারা এখনো বেঁচে আছি, আমরা একটু বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। এই বাঁচাটা হচ্ছে নিজেকে অনুভব করা আমি আছি, আমি বেঁচে আছি।
তিনি বলেন, আমাদের বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ। আজ সকালে বন্ধু আনিসুরকে দেখতে গিয়েছিলাম। একেবারেই শয্যাশায়ী, নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছে। জানি না আমরা কে কখন চলে যাবো; কিন্তু যাওয়ার আগে অন্তত আজকের দিনটা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
স্কুল-জীবনের স্মৃতিচারণে বিএনপির মহাসচিব বলেন, স্কুলে খুবই দুষ্টু ছিলাম। বখরান সাহেব ছিলেন আমাদের ক্যাপ্টেন। আমরা দুষ্টুমি করতাম আর ক্যাপ্টেন আমাদের নামে হেড স্যার রোস্তম আলী স্যারকে নালিশ করলেন। তার কিছুদিন পর হেড স্যার আমাদের সবাইকে ডেকে পাঠালেন। ঘরের ভেতরে লাইন করে দাঁড় করালেন এবং সবাইকে একটা করে বেত মারলেন। আমাদের সেই শৈশব ও স্কুলের জীবন আমি কখনোই ভুলতে পারি না। আমার সবসময় মনে হয় আমার সেই দিনগুলো যদি আমার ফিরে পেতাম।
ফখরুল বলেন, স্বাধীনতার পরে বন্ধুদের সাথে রংপুরে এক কাজে গিয়েছিলাম। রাতের কী করব? তাই ঠিক করলাম সিনেমা দেখব। কিন্তু সিনেমা দেখার জন্য তখন আমাদের হাতে টিকিট ছিল না। তারপরও ভিড় ডিঙিয়ে টিকিটের ব্যবস্থা করে সিনেমা দেখেছি। এগুলো আমার কাছে এখনো মধুর স্মৃতি হয়ে আছে।
মির্জা ফখরুলের ছোট ভাই ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন বলেন, অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার শৈশবের বন্ধু, এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি, সিনিয়র-জুনিয়র অনেকের সাথে সারা দিন সময় কাটিয়েছেন। এটি উনার একান্ত ব্যক্তিগত প্রোগ্রাম ছিল। অনুষ্ঠানস্থলে দু’টি পুকুর ছিল। সেখানেই বসে সময় কাটিয়েছেন সারা দিন।
বিকেলে খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আয়োজনের সমাপ্তি হয়।


আরো সংবাদ



premium cement