খালাস পেলেন খালেদা জিয়া-তারেক রহমান
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৮
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টের দেয়া ১০ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুর করে তাকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসাথে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টের রায় বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। একইসাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ এ মামলার অন্য সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আদালত বলেছেন রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার প্রক্রিয়া ছিল বিদ্বেষপূর্ণ। এ কারণে আপিলকারী এবং যারা আপিল করেনি সবাইকে খালাস দেয়া হলো। গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়েছে, সব আপিল, এই বিভাগের (আপিল বিভাগ) সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত দ্বারা মঞ্জুর করা হলো। সে অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগ এবং বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করা হলো। সব আপিলকারী তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেয়া হলো। এই মামলায় বিদ্বেষপূর্ণ বিচারের প্রক্রিয়া হিসেবে আইনের অপপ্রয়োগের প্রকাশ পাওয়া গেছে। এই রায় অন্যান্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে, যারা কোনো আপিল করেননি।
এই সিদ্ধান্তের ফলে আপিলকারী এবং অন্য যারা আবেদন করতে পারেননি তাদের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা হবে, তাদের নির্দোষ পুনঃনিশ্চিত করা হবে এবং এর ফলে, তাদের বিরুদ্ধে হওয়া অযৌক্তিক কার্যক্রমের অবসান ঘটাবে।
জামিনে থাকা সব আপিলকারীকে অবশ্যই তাদের নিজ নিজ জামিন বন্ড থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, মো: মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ। কাজী সালিমুল হক কামালের আপিলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও মোহাম্মদ অনীক আর হক। সাথে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এ এম মোক্তার কবির খান, মো: আক্তারুজ্জামান, সালমা সুলতানা, আনিছুর রহমান খান প্রমুখ। দুদকের পক্ষে শুনানি করে আইনজীবী মো: আসিফ হাসান।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন আইনজীবীরা : রায়ের পর সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, যে মামলায় কিছুই ছিল না। সেই মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ পাঁচ বছর থেকে ১০ বছর করেছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। সেই মামলার মধ্যে কোনো সারবত্তাই ছিল না। অর্থাৎ বিচারব্যবস্থা বলে কিছু ছিল না। ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে বলতো সেভাবে রায় হতো। আজকে মনে হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। রায়ে আদালত বলেছেন, আপিল ইজ অ্যালাউ (আপিল মঞ্জুর)। আরো বলেছেন, বিচারিক আদালতের যে রায় দেয়া হয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগের যে রায় দেয়া হয়েছে সেগুলো বাতিল করে দেয়া হলো। এবং আরো বলেছেন, যারা আপিল করতে পারেন নাই, তারেক রহমানসহ সবাইকে খালাস দিয়েছেন। এই প্রসিকিউশন ছিল ম্যালিসাস। একটা বিদ্বেষমূলক এবং প্রতিহিংসামূলক। কার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা? পুরো জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে। সারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা। আজ আপিল মঞ্জুর করা হয়েছে নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টের রায় বাতিল করা হয়েছে। এবং যারা আপিল করতে পারেননি তারাও নির্দোষ প্রমাণিত হলো।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ফুলকোর্ট থেকে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ অপর সব আসামি ন্যায়বিচার পেয়েছেন। তিনি বলেন, এই মামলাটা ছিল শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জিঘাংসা, প্রতিহিংসা এবং রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারকে খাটো করার জন্য নিশ্চিহ্ন করার জন্য রাজনৈতিক চিন্তা চেতনায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, আজ আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো খালেদা জিয়া নির্দোষ। সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। আজকের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ এবং ফ্যাসিজমকে দীর্ঘায়িত করার জন্য খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ অপরাপর আসামিদের এখানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সব কিছু ছিল রাজনৈতিক স্কিমের অংশ। আজকে রায়ে প্রমাণিত হলো খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের ওপর অবিচার করা হয়েছিল।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান জানান, মোট চারটা আপিল ছিল। চারটাই মঞ্জুর করেছেন। হাইকোর্ট ডিভিশন এবং বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করেছেন। এবং সাথে সাথে যারা আপিল করতে পারেননি, তাদেরকেও (খালাস দিয়েছেন)। যেহেতু পুরো মামলাটাই ম্যালিসাস প্রসিকিউশন (বিদ্বেষপূর্ণ কার্যধারা)। তাই তারাও এ সুবিধা পেয়ে খালাস পেলেন। দু’জনের মধ্যে একজন তারেক জিয়া। আরেকজন কামাল সিদ্দিকী। তিনি বলেন, রায়টির বিষয়ে দুদককে জানাব। তারপর দুদক সিদ্ধান্ত নিবে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো: আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসাথে খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
পরে একই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। ওই বছরের ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল দেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।
এই মামলায় নি¤œ আদালত ও হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেনÑ প্রবীণ আইনজীবী মরহুম খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মরহুম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মরহুম এ জে মোহাম্মদ আলী, আবদুর রেজাক খান, মরহুম সানা উল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ।
এতিম তহবিলের জন্য কুয়েতের আমিরের পাঠানো দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন এই টাকা এখনো ব্যাংকে জমা আছে এবং তা বৃদ্ধি পেয়ে এখন প্রায় ৯ কোটি টাকা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা