১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

৩৬৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ১৫ হাজার কোটি টাকা জব্দ

৬ রাঘব বোয়াল পাচারকারীর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চূড়ান্ত
-


বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) জালে আটকা পড়েছে দেশের আর্থিক খাতের ৩৬৬ প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। চার মাসে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ১৫ হাজার কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন রেহানাসহ তাদের পরিবার, সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো, নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, কাজী নাবিলের জেমকন গ্রুপসহ প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী-এমপি, আমলা ও ব্যবসায়ীরা। গত ৫ মাসে (আগস্ট-ডিসেম্বর) তাদের অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করা হয়েছে। অধিকতর তদন্ত করে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য এ সময়ে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট থেকে প্রায় আড়াইশ’ তদন্ত প্রতিবেদন দুদক ও সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। সংস্থাটি ২০টি বড় গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করছে। ইতোমধ্যে চূড়ান্তভাবে এস আলম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাভেদ, বেক্সিমকো, জেমকন গ্রুপসহ ৬টি বড় গ্রুপের প্রতিবেদন সিআইডি ও দুদকে পাঠানো হয়েছে। দেশে-বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দ করার জন্য তিনটি গ্রুপের বিষয়ে আদালত থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল এস আলমের ৬৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ১৬টি সম্পদ জব্দের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বাকিদের বিষয়েও কাজ চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এ দিকে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো: সাইফুল আলমসহ তার পরিবারের নামে থাকা ৬৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। পাশাপাশি তাদের ১৬টি সম্পত্তি জব্দের (ক্রোক) আদেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ মো: জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী দুঃশাসনের অবসান হয়েছে গত ৫ আগস্ট। এ সময় পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। কিন্তু রেখে গেছেন মহাদুর্নীতির ভয়াবহ ক্ষত। যে ব্যাংকেই হাত দেয়া হচ্ছে, বড় বড় দুর্নীতির চিত্র বের হয়ে আসছে। বিশেষ করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অর্থের প্রধান যোগানদাতা এস আলম, নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদার, বেক্সিমকোর সালমান এফ রহমান, সামিটের আজিজ খান গংসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপের দুর্নীতির প্রমাণ প্রকাশ পাচ্ছে। দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে বের করে বিদেশে পাচার করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দ ইউনিটসহ বিভিন্ন সংস্থা। শুধু এস আলম আট ব্যাংক থেকেই ঋণের নামে বের করে নিয়েছে সোয়া দ্ইু লাখ কোটি টাকা। আরও প্রায় ডজন খানেক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে এস আলম এমন সম্পৃক্ততা পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেড় লাখ কোটি টাকা। এস আলমের চূড়ান্ত হিসাব এখনও সম্পন্ন হয়নি।

বেক্সিমকো গ্রুপ দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে নামে-বেনামে বের করেছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পতিত সরকারের শেষ তিন বছরে আইএফআইসি থেকে বের করে নিয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে। নাসা গ্রুপ, এক্সিম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের নামে কী পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়েছে তা ৫ আগস্টের পরই তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিএফআইইউ থেকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের একটি অংশ বের করে দেয়া হয়েছে। এর পর থেকেই বিএফআইইউ এ কাজের গতি ফিরেছে। যদিও এখন বেশ কিছু কঠোর আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে প্রশ্ন রয়েছে।

বিএফআইইউ সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে প্রায় ২৫০টি তদন্ত রিপোর্ট সিআইডি এবং দুদকে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২১ কেসের অডিট রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। সবাই বিগত সরকারের আমলে অবৈধ সুবিধা নেয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। খুব শিগগিরই বাকিগুলোর অডিট সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দুদক ও সিআইডিতে পাঠানো হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা।
সূত্র আরও জানায়, আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা জোট এগমন্টের সাথে যুক্ত ১৭৭টি দেশ ছাড়াও একাধিক দেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে বিএফআইইউর। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্ভাব্য সব দেশে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সবরকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।
পাচারের টাকা ফেরাতে প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের সময় পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহায়তা চেয়েছেন তারা। এ ছাড়া বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থসম্পদ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন দেশে চিঠি দেয়া শুরু করেছে। সিআইডি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমস, পরিবেশ অধিদফতর, বিএসইসি ও দুদক অর্থপাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় ৬ জন নিহত : ফিলিস্তিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গৌরনদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ ফিল্ড ট্যুর নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নোবিপ্রবির ফিমস বিভাগের ২ শিক্ষক অপরাধ-বিতর্কিত ভূমিকায় জড়িত কর্মকর্তাদের ধরা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চীনের আরো ৩৭ কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার শেষ মুহূর্তে বিক্ষোভের মুখে বাইডেন, ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে স্লোগান পারিশ্রমিক নিয়ে টালবাহানা, রাজশাহীর ক্রিকেটারদের অনুশীলন বয়কট গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ রয়েছে : কাতার গলাচিপায় ‘তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালা ফ্যাসিবাদ ঠেকানোর দায়িত্ব সবাইকে নিতে হবে : দুদু

সকল