অস্ত্র আইনের মামলায় বাবরসহ ৬ জন খালাস

বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাসের পর এবার অস্ত্র আইনের মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জন। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
এ দিকে অস্ত্র আইনের মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মরহুম মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা না থাকায় তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। মূল বিষয়বস্তু বিবেচনা করে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামীকে খালাস দেয়া হয়েছে।
রায়ে খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন- রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন।

অপর দিকে বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন পাওয়া ১৪ জনের মধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বাধীনতাকামী নেতা পরেশ বড়ূয়াসহ পাঁচজনের সাজা কমানো হয়েছে। পরেশ বড়ুয়ার সাজা ১৪ বছর করা হয়েছে। আর চার আসামির সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। তারা হলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তৎকালীন মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, এনএসআইয়ের সাবেক উপপরিচালক মেজর (অব:) লিয়াকত হোসেন, তৎকালীন পরিচালক উইং কমান্ডার (অব:) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ ও হাফিজুর রহমান।
আর মৃত্যুবরণ করায় এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মো. আবদুর রহিম, শ্রমিক সরবরাহকারী দ্বীন মোহাম্মদ ও ট্রলার মালিক হাজি সোবহানের আপিল অকার্যকর করা হয়েছে।

রায় ঘোষণার পর লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আদালত বলেছেন, আজকে একটি অ্যাডভান্স অর্ডার সই করে দেবেন। আমি আশা করি আজকেই এই আদেশ পৌঁছানো হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি জেল থেকে মুক্তি পাবেন। বাবর কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন। তিনি বলেন, এই মামলায় ১৪ জনের সাজা হয়েছিল। তার মধ্যে ৫ জন খালাস পেয়েছেন। ৫ জনের সাজা কমিয়ে দিয়েছেন। মৃত্যুজনিত কারণে চারজনের আপিল নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, মোহাম্মদ আহসান প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগ এনে দু’টি মামলা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, পরেশ বড়ুয়া এবং দু’টি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের।