অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে রেফারেন্স প্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৪
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামত প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করা রিট আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এ সময় আদালত বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধ বলে মেনে নিয়েছে, কাজেই এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না। আন্তর্জাতিকভাবেও এ সরকার স্বীকৃত। যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তাই এটা বৈধ সরকার।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ। সাথে ছিলেন আইনজীবী এস এম মনিরুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন।
এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ বলেন, আমরা রিট আবেদনে রুল চেয়েছিলাম। হাইকোর্ট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এখন আপিল বিভাগে যাব। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। তার সাথে সাথে তার ক্যাবিনেট ও সংবিধান চলে গেছে। আমি গত নভেম্বর মাসে এ রিট আবেদন করেছি। তিনি বলেন, এখানে বিপ্লবী সরকার হওয়া প্রয়োজন ছিল। আর সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান নেই। অথচ এ সংবিধানের অধীনে এ অন্তর্বর্তী সরকার কেন শপথ নিলো।
আদেশের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক বলেন, জনগণ অন্তর্বর্তী সরকার মেনে নিয়েছে। মেলিশিয়াস প্রসিকিউশন (প্রক্রিয়ার অপব্যবহার) হওয়ায় রিটটি খারিজ করা হয়েছে। রিট খারিজ হওয়ায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আবারো বৈধ বলে প্রতিষ্ঠিত হলো।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, যে বিষয় (অন্তর্বর্তী সরকার) সংবিধানে নেই, সে বিষয়ে রেফারেন্স চাওয়া যায় না। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে রেফারেন্সের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রুলস অনুসরণ করতে হবে। আপিল বিভাগের এ রুল অনুসারে অ্যাটর্নি জেনারেল ও অন্যদের নোটিশ দিয়ে শুনানি করতে হবে। শুনানির জন্য নোটিশ দেয়া হয়নি।
অন্য দিকে রেফারেন্স প্রক্রিয়া সঠিক ছিল বলে আদালতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো: আবদুল ওয়াহাব বলেন, রেফারেন্সের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নোটিশ করা হয়েছিল এবং তিনি শুনানিতে অংশ নেন।
গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন এবং রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান। গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন।
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যদি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয়, আইনের এরূপ কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেয়া প্রয়োজন, তা হলে তিনি (রাষ্ট্রপতি) প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করতে পারবেন এবং ওই বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানির পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করতে পারবেন।
রাষ্ট্রপতির বিশেষ রেফারেন্সের (১/২৪) পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ গত বছরের ৮ আগস্ট মতামত দেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শোনা হয়। মতামতে বলা হয়, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার নিমিত্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি ওই রূপ নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের শপথ পাঠ করাতে পারবেন।
এ রেফারেন্সের বৈধতা নিয়ে গত নভেম্বর মাসে হাইকোর্টে রিট করেন সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা