১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

এবার রেহানা ও তিন সন্তানের নামে মামলা

পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম
-


তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকার পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে শেখ রেহানা ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক (রূপন্তী) এবং ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাগুলোতে রেহানার আরেক মেয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক এবং রেহানার বোন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আখতার হোসেন গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে মামলার বিষয়ে জানান। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে রোববার শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদসহ (পুতুল) ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট নিজেদের নামে করিয়ে নেয়ার অভিযোগে এ মামলা হয়।

শেখ রেহানার মামলার বাদি দুদকের উপপরিচালক মো: মো: সালাহউদ্দিন, ববির মামলার বাদি সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান, আজমিনার মামলার বাদি সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
পৃথক তিনটি মামলায় শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিককে প্রধান আসামি করা হয়েছে। অন্য দিকে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক এবং শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি মামলায় ১২ থেকে ১৩ জনকে আসামি করা হয়।

দুদক জানায়, ঢাকা শহরে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় নিজ পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকলে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ পাওয়ার সুযোগ নেই। শেখ রেহানা ও তার পরিবারের সদস্যরা এসব তথ্য গোপন করে পূর্বাচলে তিনটি প্লট বরাদ্দ নেন। ব্রিফিংয়ে দুদকের মহাপরিচালক আখতার হোসেন বলেন, পূর্বাচল নতুন শহরে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে টিউলিপ সিদ্দিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করেন। এ বিষয়ে দুদকের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন এলাকায় বাড়ি, ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও হলফনামায় তা গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কূটনৈতিক এলাকায় একটি ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন শেখ রেহানা। প্লট বরাদ্দ নিতে তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে বিশেষ ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করেন। আর শেখ হাসিনা তৎকালীন সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও সরকারি কর্মচারী হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে প্লট বরাদ্দ দেন।

দুদক মহাপরিচালক জানান, শেখ রেহানার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় টিউলিপ রিজওয়ানা ও শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজমিনা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে করা মামলায় টিউলিপ ও শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব মো: অলিউল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএএ মো: আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য তন্ময় দাস (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ), সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (অব:) ইঞ্জিনিয়ার সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ ও সাবেক পরিচালক মো: নুরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। তাদেরকে প্রত্যেক মামলায় আসামি করা হয়েছে।

রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকসহ রাজউকের অন্য কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।
আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তীর মামলায়ও টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বোন রেহানাসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে শেখ হাসিনা রাজউকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেন। বরাদ্দ করা প্লটগুলো পূর্বাচল নতুন শহরের সেক্টর ২৭-এর কূটনৈতিক জোনে সড়ক নম্বর ২০৩-এ অবস্থিত। বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে ১০ কাঠার তিনটি প্লটসহ মোট ৩০ কাঠা জমি।

শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ দুদক থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা গত ২৭ ডিসেম্বর জানিয়েছিল দুদক। দেড় দশক দেশ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা।
এ দিকে দুদক গত ২২ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। তার আগে হাসিনা ও রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। একই দলকে নতুন করে আসা ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় কমিশন। সবগুলোই অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement