ইসরাইল ও হামাসকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া হস্তান্তর
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩২
- গাজায় ৫ দিনে ৭০ শিশুকে হত্যা ইসরাইলের
- হামাসের অনুমোদন পেলে চুক্তি কার্যকর : ইসরাইল
দীর্ঘ আলোচনার পর গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরাইল ও হামাসকে একটি চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া দিয়েছে মধ্যস্থতাকারী কাতার। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স ও আলজাজিরা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূতের উপস্থিতিতে মধ্যরাতে আলোচনায় ‘সাফল্যের’ পর চুক্তির চূড়ান্ত খসড়া হস্তান্তর করা হয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, দোহায় ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, ট্রাম্প প্রশাসনের দূত স্টিভ উইটকফ ও শিন বেটের প্রধান কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আলে সানির সাথে যুদ্ধবিরতি ও বন্দীদের মুক্তির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন।
বিদায়ী মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও এতে অংশ নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আগামী ২৪ ঘণ্টা সময়টি গুরুত্বপূর্ণ। ইসরাইলের কান রেডিও গতকাল সোমবার এক ইসরাইলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, কাতারে ইসরাইলি ও হামাস প্রতিনিধি উভয়ই একটি খসড়া পেয়েছে। প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে ইসরাইলি নেতাদের ব্রিফও করেছে। আরব নিউজ জানিয়েছে, ইসরাইল, হামাস এবং কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নিশ্চিত বা মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
এ দিকে ইসরাইলের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এক রাতের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। হামাসের কাছ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হতে পারে। চ্যানেল ১২ নিউজ জানিয়েছে, এই প্রস্তাবিত চুক্তিটি তিনপর্যায়ে হতে পারে, যা গত মে মাসে আলোচনা হয়েছিল। প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রথম ধাপে মানবিক অবস্থা বিবেচনায় নারী, শিশু, ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের মুক্তি দেয়া হবে।
পরবর্তী ১৬তম দিনে পুরুষ সেনাসদস্যদের মুক্তির জন্য আলোচনা শুরু হবে এবং তৃতীয় ধাপে গাজার প্রশাসনিক কাঠামো ও পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হবে। কাতারের রাজধানী দোহায় এক কর্মকর্তা আর্মি রেডিওকে বলেন, অতি সতর্কতার সাথে এগিয়ে চলছে এবং এটি ইতিবাচক দিকে যাচ্ছে। চ্যানেল ১৩-এ ইসরাইলি এক কর্মকর্তা জানান, যদি হামাস শিগগিরই সাড়া দেয়, তবে সব বিস্তারিত চূড়ান্ত করতে কিছু দিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এ দিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব মধ্যস্থতাকারীরা হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছেন, তবে এখনো একটি চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। একাধিক কর্মকর্তার মতে, এগিয়ে যাওয়ার পথ কিছুটা পরিষ্কার হলেও এখনো কিছু সমস্যা মেটাতে হবে এবং আগামী কয়েকদিন এই আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। একটি সূত্র জানায়, মধ্যস্থতাকারীরা দুই প্রতিপক্ষের কাছে চুক্তির খসড়া তুলে দিয়েছেন এবং পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
মিসরীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আলোচনা ভালোভাবে এগোচ্ছে, তবে আরো কিছু দিন সময় লাগবে এবং তারা আশা করছেন ট্রাম্পের ২০ জানুয়ারির শপথের আগে চুক্তি সই হবে। হামাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিছু বিরোধের বিষয় এখনো মীমাংসিত হয়নি, যেমন যুদ্ধ শেষ করার বিষয়, ইসরাইলি সেনার প্রত্যাহার এবং বন্দিমুক্তির বিস্তারিত পরিকল্পনা। আলোচনার সাথে ঘনিষ্ঠ এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেন, দোহা থেকে পাওয়া তথ্য ‘খুবই আশাব্যঞ্জক’। শেষ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে একটি চুক্তির দিকে বড় ধরনের চাপ দেয়া হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে আলোচনায় কাজ করেছে। হামাসের হাতে বন্দী ও ইসরাইলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে লড়াই বন্ধের নীতিতে উভয় পক্ষই কয়েক মাস ধরে মোটামুটি একমত হয়েছে। তবে হামাস বরাবরই জোর দিয়ে বলেছে, এই চুক্তির অধীনে অবশ্যই যুদ্ধের স্থায়ী অবসান ঘটাতে হবে এবং গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্য দিকে ইসরাইল বলে এসেছে, হামাসকে ভেঙে না দেয়া পর্যন্ত তারা যুদ্ধ শেষ করবে না।
রয়টার্সকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত আলোচনা চলে। মার্কিন প্রতিনিধিরা ইসরাইলি প্রতিনিধিদলকে চাপ দেন এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আলে সানি হামাস কর্মকর্তাদের চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য চাপ দেন।
গাজা চুক্তি একটি বিপর্যয় : অন্য দিকে ইসরাইলের ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম কট্টরপন্থী জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় দলের প্রধান ও দেশটির অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং বন্দীদের ফেরত দেয়ার জন্য কাতারে যে চুক্তি হচ্ছে তা ‘আত্মসমর্পণ’ চুক্তি বলে নিন্দা করেছেন। স্মোট্রিচ এক বিবৃতিতে বলেন, চুক্তিটি যে রূপ নিচ্ছে তা ইসরাইল রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপর্যয়।
৫ দিনে নিহত ৭০ শিশু : এ দিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যেও ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এই হামলায় নিহত হয়েছেন ৪৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। তবে দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে এই হামলা চললেও কমেনি ইসরাইলি বর্বরতা। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে ইসরাইলি হামলায় গত পাঁচ দিনে ৭০ শিশু নিহত হয়েছে। এক খবরে বার্তা সংস্থা আনাদোলু বলেছে, গত পাঁচ দিনে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় প্রায় ৭০টি শিশু নিহত হয়েছে বলে ভূখণ্ডটির সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস রোববার জানিয়েছে।
সংস্থাটি নিহত শিশুদের বয়স সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দেয়নি, শুধু বলেছে, ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডজুড়ে বেশ কয়েকটি এলাকা লক্ষ্য করে চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছে তারা। মূলত ১৬ মাসে গড়ানো এই যুদ্ধে গাজার ফিলিস্তিনি শিশুরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকারবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল গত ৮ জানুয়ারি বলেন, ‘নতুন বছর গাজার শিশুদের জন্য আরো বেশি মৃত্যু ও দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে’।
অন্য দিকে গাজা শহরের সালাহুদ্দীন স্কুলে হামলায় ইসরাইলি বাহিনী কমপক্ষে পাঁচজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যেখানে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। চিকিৎসা সূত্রের বরাত দিয়ে আলজাজিরা আরবি জানিয়েছে, সোমবার ভোর থেকে গাজায় মোট ৩৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা