সংবেদনশীল বিষয়ে ভুল : তিনটি বইয়ের ছাপা সাময়িক বন্ধ
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩১
স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর আগেই তিনটি শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে সংবেদনশীল বিষয়ে কয়েকটি ভুল ধরা পড়েছে। ভুলগুলো সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট তিনটি বইয়ের মুদ্রণের কাজ সাময়িকভাবে স্থগিতও করা হয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি গতকাল থেকেই ভুলগুলো সংশোধনের কাজ শুরু করেছে। আজ কিংবা আগামীকাল সংশোধন শেষ হলে পুনরায় ছাপার কাজ শুরু হবে। তবে বিনামূল্যের অন্যান্য পাঠ্যবই (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) যথারীতি পুরোদমে মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ের কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, নবম ও দশম শ্রেণীর (স্কুল ও মাদরাসা) পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইয়ের ৭৩ নম্বর পৃষ্ঠায় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন ব্যবস্থা অধ্যায়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও গঠন বিষয়ে আলোচনায় দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) গঠন বিষয়ে বলা হয়েছে, সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলটি গঠন করা হয়েছে। এখানে সামরিক শাসনের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছে। একই সাথে এই অধ্যায়ে আওয়ামী লীগকে দেশের বৃহত্তম ও পুরনো রাজনৈতিক দল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়েও আপত্তি রয়েছে সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। এখানে পরিবর্তন আনতে কাজ করছে কমিটি। গতকাল এ বিষয়ে কমিটির একটি সভাও হয়েছে। তারা এক দু’দিনের মধ্যে সংশোধন করে নতুন করে বই ছাপার কাজ শুরুর অনুমতি দেবে।
দ্বিতীয় ভুলটি বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এখানে ভুলটি হচ্ছে, পাঠ্যবইয়ের একটি প্রচ্ছদে আদিবাসী শব্দ সন্নিবেসিত হয়েছে। নবম ও দশম এবং দাখিলের ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের ব্যাক কভারে একটি গ্রাফিতিতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নামের সাথে আদিবাসী শব্দটিও যুক্ত রয়েছে। আদিবাসী শব্দটি আমাদের সংবিধানের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। আদিবাসী শব্দের পরিবর্তে সংবিধানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শব্দটি আগে থেকেই লিখিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি গত রোববার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) এসে প্রতিবাদও জানিয়েছে। পরে এনসিটিবি এ বিষয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শব্দটি বাদ দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছে। ফলে এই বইটিতে এখন নতুন করে প্রচ্ছদ ও গ্রাফিতি যুক্ত করা হচ্ছে। অপর দিকে গত জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত একজন শহীদের নামে বিভ্রাট হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে শহীদ নাফিসার নাম ভুলক্রমে নাহিয়ান হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এ ভুলটিও সংশোধন করা হচ্ছে। এনসিটিবি থেকে শহীদের এই নামের ভুলটি যে অসাবধানতাবশত হয়েছে সে বিষয়ে এর আগে বক্তব্য দিয়েছে।
এদিকে পাঠ্যবইয়ের এসব সংবেদনশীল বিষয়ের ভুলগুলো সংশোধন করতে ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজও শুরু করেছেন। এই কমিটির সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম এবং এনসিটিবি’র পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন কমিটির অন্যতম সদস্য ও শিক্ষাবিদ সাজ্জাদুর রহমান (রাখাল রাহা)।
এনসিটিবি’র প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক ফাতিহুল কাদীর সম্রাট গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে জানান, আপাতত আমরা তিনটি বইয়ের ছাপা সাময়িক বন্ধ রেখেছি। যেসব বই ছাপা হয়ে গেছে সেগুলো বাতিল না করে আমরা সংশোধনী দিয়ে দেবো। আর যেহেতু এখন সংশোধন করা হচ্ছে কাজেই নতুন করে ভুলগুলোর পৃষ্ঠার ট্রেসিং পরিবর্তন করে দিয়ে নতুন করে মুদ্রণ করা হবে। এজন্য আমাদের খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। এক বা দু’দিনের মধ্যেই পুনরায় ছাপার কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা