হাসিনার বিরুদ্ধে দুদকের প্রথম মামলা
পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি পুতুলসহ আসামি ১৬ জন- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহরে জমি বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের এটিই প্রথম মামলা দায়ের। গতকাল রোববার বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি জানান দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো: আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক বিবেচনায় রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগাসাজশে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ৬টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্বজনরা।
দেড় দশক দেশ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।
গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম সরকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের সাবেক পিএ মো: আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব:), উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) মো: হাফিজুর রহমান, উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) হাবিবুর রহমান, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম এবং রাজউকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো: নুরুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার প্লট নং ১৭ সায়মা ওয়াজেদের নামে বরাদ্দ নিয়ে এবং প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রিমূলে প্লট গ্রহণ করেছেন।
মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় নিজের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও সেটা গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে মা শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সায়মা ওয়াজেদ। সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকা অবস্থায় তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গণকর্মচারীদের প্রভাবিত করেছেন।
এর আগে গত ৮ জানুয়ারি দুদকের মহাপরিচালক (ডিজি) মো: আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে আমাদের অনেক অগ্রগতি আছে। অনুসন্ধান দল এ নিয়ে অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য এসেছে। যেগুলোর মধ্যে বিশেষ করে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের ৬০ কাঠা বরাদ্দসংক্রান্ত বিষয়ে শিগগিরই ভালো কিছু তথ্য আপনাদের (সাংবাদিক) জানাতে পারব। আমরা যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি, সেগুলোতে স্পষ্টভাবেই ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা গত ২৭ ডিসেম্বর দুদক থেকে জানানো হয়েছিল।
অভিযোগে বলা হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজে ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
এ ছাড়া দুদক গত ২২ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। তার আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করেছে। একই দলকে নতুন করে আসা ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় কমিশন। সবগুলো অভিযোগই অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা