১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬
`

কনকনে শীত কয়েক জেলায় : তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ৭.৩ ডিগ্রি

প্রচণ্ড কুয়াশায় চুয়াডাঙ্গার রাস্তায় ঘুটঘুটে অবস্থা। দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি : নয়া দিগন্ত -

সারা দেশে পড়েছে কনকনে শীত। শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের ১০ জেলায়। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত ঘেঁষা জেলাগুলোতে প্রচণ্ড শীত, তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। গতকাল শুক্রবার পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে যে ১০ জেলায় এগুলোর বেশির ভাগই সীমান্ত এলাকায়। গতকাল সারা দিন কনকনে শীত থাকলেও আজ শনিবার কিন্তু দেশের সার্বিক তাপমাত্রা স্বস্তিদায়ক থাকতে পারে বলে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে।
বছরের এ সময়টায় সব সময় তাপমাত্রা অনেকটা কমে অস্বস্তি রকমের ঠাণ্ডা পড়ে থাকে বাংলাদেশে। এ সময় বাংলাদেশের আকাশে জেটবায়ু প্রবাহের স্তর নেমে আসে ভূপৃষ্ঠের প্রায় কাছাকাছি স্তরে। এই জেটবায়ু যেমন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা তেমনি এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। বিমানের গতিতে চলে বলে একে জেটবায়ু বলে। জেটবায়ু ছাড়াও উপমহাদেশের উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিম বাংলা পর্যন্ত আসে বছরের এই সময়ে। মাঝে মাঝে তা বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলগুলো পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে। তখনই দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে শুরু করে।
আজ শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায়। এই অঞ্চলগুলোতে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ এসব অঞ্চলে ১০ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নি¤œ তাপমাত্রা। তবে আবহাওয়া দফতর বলছে, আজ শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে থাকলেও সার্বিক তাপমাত্রা একটু বেড়ে যেতে পারে।
গতকাল শুক্রবার দিনের বেশির ভাগ সময় ঘন কুয়াশা ছিল না। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ থাকায় এর প্রভাব দেশের অন্যান্য অংশেও পড়েছে। গতকাল ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যায়। শীতের এ সময়ে খোলা প্রান্তরে অথবা গাছ-গাছালিবিহীন এলাকায় বাতাসের এ বেগটাই শরীরে হিমশীতল স্পর্শ বইয়ে দিয়েছে। সাধারণত জানুয়ারির এ সময়টা বাংলাদেশে তীব্র ঠাণ্ডা বয়ে যায়। সামনের কয়েকটা দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। শীতের অল্প ক’দিন থাকলেও এখনো রাজধানীবাসী গরম কাপড় কিনছেন। রাজধানীর ফুটপাতে গরম কাপড়ের বাজার গতকালও জমজমাট দেখা গেছে। হালকা বাতাসের কারণে বয়ে যাওয়া ঠাণ্ডা মোকাবেলা করার জন্য মানুষ এখনো জ্যাকেট-সুয়েটার কিনেছে। তেঁতুলিয়ার সর্বনিম্নœ তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রিতে নামলে আজ পুরো রংপুর বিভাগের শীত সর্বত্রই বেশ ঠাণ্ডা।
ঢাকার তাপমাত্রা এখনো বেশ স্বস্তিদায়ক। গতকাল সর্বনিম্নœ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু ঢাকার কাছেই টাঙ্গাইল ও গোপালগঞ্জ এলাকার তাপমাত্রা বেশ কম হওয়ায় এর আঁচ ঢাকাতেও লাগছে। শৈত্যপ্রবাহের ধাক্কা রাজধানীতেও লাগছে। ফলে রাজধানীর নিম্ন তাপমাত্রার খুব বেশি উন্নতি হবে না আজ।
গতকাল ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। ঢাকায় শীতটা অনেক কম থাকার এটাও একটা কারণ।
আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি তাপমাত্রায় শীতের প্রকোপে কাঁপছে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা ও চায়ের রাজ্য খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তীব্র শীতে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছেন চা শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের মানুষ। এ অবস্থায় ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।
স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তথ্য নিশ্চিত করে স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মো: মুজিবুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন রেকর্ড ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে চলতি শীত মৌসুমে তৃতীয় দফায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলছে। গতকাল শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৯০ শতাংশ।
তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি উত্তরের হিমেল হাওয়ায় তীব্র শীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটেখাওয়া মানুষজন। ভোর থেকে যেসব শ্রমজীবী মানুষ ঘর থেকে বের হয় তাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়ছে। অনেকে কাজ পাচ্ছেন না। অলস বসে সময় পার করছেন ভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা। মাঠে বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষকরাও ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। তীব্র শীতে কৃষিকাজও ব্যাহত হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, পশ্চিমে ঝড় সরে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাপমাত্রা নেমে যাওয়াসহ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর ১৪ জানুয়ারি থেকে তাপমাত্রা আবারো বৃদ্ধি পেতে পারে।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, শীতের জেলা পঞ্চগড়ে চলতি শীত মৌসুমের প্রথম মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার; যা চলতি শীত মৌসুমের মধ্যে সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিসের হিসাবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬.১ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। গত শুক্রবারও তেঁতুলিয়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। আর গত বৃহস্পতিবার এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সকাল থেকে ঝলমলে রোদের কারণে গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে; যা আগের দিনের চেয়ে ৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।


আরো সংবাদ



premium cement