১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬
`
টিটিসিতে কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘নিজ খরচে’ বানানো সেই অধ্যক্ষ এখনো বহাল

-

সরকারিভাবে কোনো অর্থই বরাদ্দ ছিল না। তবুও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার প্রশাসনকে খুশি রাখতে ‘নিজের পকেট’ থেকেই লাখ লাখ টাকা খরচ করে অফিসের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বানিয়েছিলেন দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদ রানা। গত বছর ৫ আগষ্টের পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ম্যুরালটির সামনের অংশ গুঁড়িয়ে দিলেও রহস্যজনক কারণে তিনি সেটিকে এখনো আগলে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এখনো তিনি তার পদেও বহাল রয়েছেন। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও ট্রেনিং সেন্টারে আসা প্রশিক্ষার্থীরা নানা ধরনের মন্তব্য করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়ের একজন পরিচালকসহ একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে শেল্টার দেয়ায় তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য কেনাকাটা থেকে শুরু করে পদে পদে অনিয়ম দুর্নীতি চালাতে পারছেন।
গত সপ্তাহে সরেজমিন দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া যায় এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদ রানা, কম্পিউটার বিভাগের সাবেক চিফ ইনস্ট্রাক্টর নিমাই কুমার দত্ত ও ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডের চিফ ইনস্ট্রাক্টর শেখ রাকিবুল হাসানের যোগসাজশে ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩ টাকা আত্মসাতের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিনের দফতরে। একই অভিযোগ জমা পড়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফরের দফতর ও জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ে।
ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণে সরকারি অর্থের সাড়ে ৬ লাখ টাকা অপচয় করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদ রানা। পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের হুইপ ইকবালুর রহিমের কাছ থেকে তিনি চেক গ্রহণ করেন। টিটিসির কম্পিউটার ট্রেডের অনারিয়াম প্রদানের নামে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ, প্রতিষ্ঠানের বেতনভাতার খাত থেকে এরিয়া বিলের নামে ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ২৬৭ টাকা আত্মসাৎ, বাসভবন মেরামতের নামে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ, ভুয়া ভাউচারের নামে ২৮ হাজার ৫৬৫ আত্মসাৎ, ডিজিটাল ইন্টারেকটিভ বোর্ড ক্রয়ে সরকারি ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ, অভ্যন্তরীণ অডিট আপত্তিতে ৪৫ লাখ ২৭ হাজার ৪৫২ টাকা, পিডিও সার্টিফিকেট জালিয়াতিসহ তার এবং তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এসব অভিযোগের তদন্ত রহস্যজনকভাবে ধামাচাপা পড়ে আছে বলে অভিযোগ করছেন দিনাজপুর টিটিসির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
গত সপ্তাহে দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সরেজমিনে খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, মূল ভবনে ঢোকার বাম পাশে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি কাপড়ের ব্যানার দিয়ে সযতেœ বেঁধে রাখা হয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল সেকশনে গিয়ে দেখা গেছে, ৫ বছর আগে কেনা মেশিনটি কাচের ঘেরা ঘরে অচল হয়ে পড়ে আছে।
একাধিক প্রশিক্ষণার্থী নয়া দিগন্তকে অধ্যক্ষ ও তার সহকর্মীদের নানা অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে বলেন, বর্তমান টিটিসির অধ্যক্ষ মাসুদ রানা দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে থেকে অনিয়ম লুটপাট চালিয়ে গেলেও মন্ত্রণালয় বা জনশক্তি ব্যুরো থেকে তার বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। তার বদলির ফাইল উঠলেই সেটি ব্যুরো থেকে একাধিক কর্মকর্তা ধামাচাপা দিয়ে দেন। টাকার বিনিময়ে তিনি তার পদ আগলে আছেন অভিযোগ করে বলেন, একজন অফিসার কিভাবে একই জায়গায় ১৪ বছর থাকতে পারেন? আবার তাকেই আবার কিভাবে অধ্যক্ষ পদে বহাল রাখছেন কর্তৃপক্ষ? বর্তমানে তিনি এখানে ফিরে এসে শিক্ষকদের নানারকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন এবং তাদের কাছ থেকে জোর করে দুর্নীতির সাফাই হিসেবে লিখিত দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ করছেন তারা।
গতকাল শুক্রবার রাতে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে দিনাজপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ মাসুদ রানার সাথে যোগাযোগ করে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিজ খরচে বানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমি না, এমপি সাহেব বানিয়েছিলেন। এখন কি সেটি আছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না, না, এটা ভাইঙ্গা দিছে লোকজন। আপনার এবং আপনার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে তিন কোটি টাকারও বেশি সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে মাসুদ রানা বলেন, আমার নামে যত অভিযোগ জমা পড়েছিল সবগুলোই তদন্তে ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement