১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১, ১০ রজব ১৪৪৬
`
ধরতে রেড অ্যালার্ট জারি

চোখের পলকে পালিয়ে যান আটক ওসি শাহ আলম

-

ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ও হত্যাযজ্ঞের মামলার আসামি ছিলেন উত্তরা পূর্ব থানার তৎকালীন ওসি শাহ আলম। সেই মামলায় গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে উত্তরা পূর্ব থানায় আনা হয়। কিন্তু তাকে হাজতে না পাঠিয়ে থানার বর্তমান ওসি মহিবুল্লাহ জামাই আদরে নিজ কক্ষে চেয়ারে বসতে দেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপে সিদ্ধান্ত হয় শাহ আলমকে আদালতে তুলে রিমান্ডের আবেদন করতে হবে। সব কথা শুনে ওসি মহিবুল্লাহ সাবেক ওসি শাহ আলমকে বলেন, ‘স্যারদের নির্দেশ আপনাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’। এ কথা শুনেই শাহ আলম অসুস্থতার ভান ধরেন। এরপর টয়লেটে যাবেন- এ কথা বললে এএসআই মো: সাজ্জাদ হোসেন তাকে টয়লেটে নিয়ে যান। টয়লেট শেষে ডিউটি অফিসার রুমের পাশে একটি চেয়ারে বসতে দেন। তখন এএসআই সাজ্জাদ তাকে রেখে আরেকজনের সাথে কথা বলার সময় দৌঁড়ে পালিয়ে যান শাহ আলম। চোখের পলকেই পালিয়ে গেলেও তাকে আর পাওয়া যায়নি। এর পর থেকেই তিনি পলাতক। গতকাল পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ওসি মহিবুল্লাহ ও এএসআই মো: সাজ্জাদ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ দিকে ওসি শাহ আলমকে গ্রেফতারে ইতোমধ্যে সারা দেশে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। গতকাল সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের একাধিক টিম তাকে ধরতে অভিযানে নেমেছে।
পুলিশের সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের এই কর্মকর্তা সরাসরি ছাত্রজনতার ওপর গুলি চালায় এবং খুনের সাথে জড়িত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রওনক জাহান জানান, ওসি শাহ আলম ছাত্রজনতার ওপর সরাসরি গুলির করেছেন সেই অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে ধরতে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো ও রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। সেই সাথে তাকে গ্রেফতারের জন্য সারা দেশে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ যৌথ অভিযানে নেমেছে।
আর সাময়িক বরখাস্ত উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মো: মহিবুল্লাহ গতকাল দুপুরে জানান, পলাতক সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের সব ক’টি ইউনিট কাজ করছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তাও নেয়া হচ্ছে। আশাকরি, খুব দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করা হবে।
থানা পুলিশ সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় একটি মামলায় উত্তরা পূর্ব থানার ওসি শাহ আলমকে পুলিশ গ্রেফতার করে। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি ছিলেন শাহ আলম। এরপরও গত ১ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানায় যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে পরিদর্শক কুষ্টিয়ায় কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের একাধিক হত্যার মামলার আসামি তিনি। পরে মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর আদালতে সোপর্দের প্রক্রিয়া চলাকালে তিনি কৌশলে পালিয়ে যান। তবে এর সাথে থানা পুলিশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
এ বিষয়ে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, থানা থেকে একজন হত্যামামলার আসামি কিভাবে পালিয়ে যায় সেটা আমার বোধগম্য নয়। থানা পুলিশ এর দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। আসামি যেহেতু পুলিশের সাবেক একজন, তার জন্য আলাদা নিরাপত্তার দরকার ছিল। তিনি অবশ্যই কৌশলী হবেন এটা স্বাভাবিক। বর্তমান ওসির রুমে তাকে রাখার মানে হয় না। অবশ্যই পুলিশের কেউ না কেউ এর সাথে জড়িত। পুলিশ বাহিনীর এই ক্রান্তিকালে যে ঘটনাটি ঘটল এতে বাহিনী আরো ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রশ্নের মুখে পড়ল।


আরো সংবাদ



premium cement