ঐকমত্যের ভিত্তিতে আসবে ঘোষণাপত্র, বাড়তে পারে সময় : মাহফুজ আলম
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫, আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:৩০
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে নিজেদের অবস্থান আরো স্পষ্ট করলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানিয়েছেন, সরকার কোনো ঘোষণাপত্র দেবে না। এটি আসবে শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবনা এবং সব রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বা এর থেকে কিছু সময় বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
মাহফুজ আলম বলেন, ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দল ও শিক্ষার্থীরা কথাবার্তা বলছেন। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছিল ৩১ ডিসেম্বর তারা একটা ঘোষণাপত্র দেবে, কিন্তু সরকার তখন অনুভব করল, বৃহৎ প্রক্রিয়ার বাইরে শুধু শিক্ষার্থীরা ঘোষণাপত্র দিলে জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতার প্রতিকূল হতে পারে। তাই সরকার দায়িত্ব নিয়েছে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, গণ-অভ্যুত্থানের যতগুলো পক্ষ আছে সবার সঙ্গে কথা বলে সরকার আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদনটির ব্যাপারে, কবে এ ঘোষণাপত্র, কিভাবে ঘোষণাপত্র প্রকাশিত বা ঘোষিত হবে তা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তটি জানাবে।
৫ আগস্টের পরে মাজার, কাওয়ালী ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের হামলার বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, বিভিন্ন জায়গায় হামলা হয়েছিল কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে স্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি, সে জন্য দুঃখিত। কিন্তু এখন থেকে মাজার, কাওয়ালী বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে হামলা হলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো। কাউকে ছাড় দেবো না। এ বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ময়মনসিংহের ঘটনার পদক্ষেপ নিচ্ছি। ৫ আগস্টের পরে সব ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করেছি, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। একই সঙ্গে ক্ষুব্ধদের মামলা করার অনুরোধ জানান তিনি।
১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণপত্রের দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাহফুজ আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল ১৫ জানুয়ারি। যেহেতু সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে, সে ক্ষেত্রে কিছু সময় বাড়তে পারে। কিন্তু খুব বেশি দেরি হবে না। হয়তো তাদের সময়সীমার কয়েক দিনের মধ্যে এটা হয়ে যাবে। সরকার চাচ্ছে সব পক্ষের সঙ্গে ঐকমত্যের মাধ্যমে হোক। আমরা মনে করি শিক্ষার্থীরা ধৈর্য ধারণ করবে, সংযম দেখাবে। এটা সর্বসম্মতিক্রমে হলে বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কবে থেকে আলোচনায় সরকার বসবে- এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে ৩১ ডিসেম্বর থেকেই অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী সপ্তাহ থেকেই বসা শুরু করব।
বসার ধরন ও প্রক্রিয়ার বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ঘোষণাপত্রের দুটো দিক থাকে। সেটা হলো কী কারণে করছি এবং কী চাচ্ছি। আমরা যে কারণে ঘোষণাপত্র চাচ্ছি তা হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্য আছে, সেটা হচ্ছে শেখ হাসিনার ফ্যাসিজম ও সেটার ধারাবাহিকতা হয়তো ঘোষণাপত্রে বর্ণনা করব। ঘোষণাপত্রের দ্বিতীয় ভাগে থাকবে রাষ্ট্রটা কিভাবে পরিচালিত হবে। সেসব বিষয়ে কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্য বা বিতর্ক থাকতে পারে অথবা আরো বেশি আলোচনার দরকার হতে পারে।
তিনি বলেন, বিএনপি বলেছে তাদের ১৬ বছরের দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের স্বীকৃতি হোক। শুধু তাদের নয়, যত রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক সংগঠন বা বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষের সংগ্রামের ইতিহাস আছে। যারা যারা নিপীড়নের শিকার হয়েছে সবার কথাই ঘোষণাপত্রে থাকবে। এ ছাড়া যে কেউ তাদের প্রস্তাবনা দিতে পারে। কারণ আমরা চাচ্ছি একটা অংশগ্রহণমূলক প্রতিবেদন।
সংবিধান নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের অবস্থানের বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি আছে। বাহাত্তরের সংবিধান যখন তৈরি হয়েছিল তখন থেকেই সমালোচনা করেছিল রাজনৈতিক দলগুলো। বর্তমান বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে যেটা দরকার তা হচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য দরকার। সংবিধানের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবনা আছে। আবার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা আছে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য আছে, তা আমরা লিপিবদ্ধ করব। সংবিধান সংস্কার নাকি বাতিল হবে তা আলোচনার ভিত্তিতেই হবে।
ঘোষণাপত্রের একটি প্রস্তাবনা এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা দিয়েছে। ঘোষণাপত্র কিন্তু সরকার দেবে না। সরকার ঘোষণাপত্র ও তার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে। কিন্তু ঘোষণাপত্র আসবে সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে। সরকার বানিয়ে কোনো ঘোষণাপত্র দেবে না। শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবনা ও সবার ঐকমত্যে ঘোষণাপত্র আসবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, প্রশাসক দিয়ে জনগণের কাছে সেবা পৌঁছাতে পারব কি না? তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সরকারের অনেক সেবা জনগণ নিয়মিত পাচ্ছে না। তাই প্রশাসক দিয়ে সামলানোতে আমরা ঘাটতি দেখতে পাচ্ছি। তাই প্রস্তাবনা আকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে নাগরিকদের সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ তৈরি হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে অগ্রসর হতে পারব।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ ও আনসার প্রস্তুত কি না- এমন প্রশ্নে মাহফুজ আলম বলেন, পুলিশে সংস্কার করা হবে। একই সঙ্গে আনসারকেও ঢেলে সাজানো হবে। কিন্তু এমন না যে আমরা আগামী মাস বা তিন মাস পরে নির্বাচন দিয়ে দিচ্ছি। আমরা সময়সীমা বলিনি। বলেছি প্রস্তুতি চলমান আছে, যার অনেকগুলো পর্ব থাকতে পারে, যার প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে আইনশৃঙ্খলার প্রস্তুতি নিচ্ছি না। আমরা মনে করি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে জনগণের কাছে দ্রুত সেবা পৌঁছে দিতে পারব। পুলিশ সংস্কার ও আনসারকে ঢেলে সাজানো সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ। এটা যখন ঘটবে, তখন আমরা চাইব পুলিশ যেন আগের ভূমিকায় না থাকে।
জাতীয় নির্বাচন কবে হতে পারে এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এরই মধ্যে বলেছেন জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে সংস্কার সাপেক্ষ। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন এ মাসেই পাব। তাদের প্রস্তাবনাগুলো হবে নির্বাচন কেন্দ্রিক। সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করব। সেখানেই রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক করবে কতটা সংস্কার করতে চায়। সংস্কারের মেয়াদ বা পরিধির ভিত্তিতে নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হবে। এটা আজকালের মধ্যে ঠিক হওয়াটা যৌক্তিক হবে বলে মনে করি না।
পাঠ্যপুস্তকের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত আলোচনায় এসেছে জানিয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সবাই আগামী মাসের মধ্যে বই হাতে পাবে। আগের সরকার (আওয়ামী লীগ) এক দিনের জন্য বই উৎসব করত। সেখানে দেখাতে চাইতো সবাই জানুয়ারির প্রথমে বই পেতো। কিন্তু সরকারি তথ্য বলছে, ২০১০ সালের পর থেকে বই সরবরাহ হতে হতে মার্চ বা কোনো কোনো বছর জুলাই মাসও হয়ে গিয়েছিল। দ্রুত বই ছাপানোর জন্য সরকার কাগজ উৎপাদনকারীদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন বলে জানান প্রেস সচিব। আগামী বছরের শুরু থেকেই বই সরবরাহ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় শফিকুল আলম জানান, ২০২২ সালে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের সর্বশেষ তারিখ ছিল ২৪ মার্চ, ২০২৩ সালে ছিল ১৭ মার্চ এবং ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ বই সরবরাহ করা হয়েছিল।
নোটবুক একটি জটিল বিষয় উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, এখানে অনেক বেসরকারি কোম্পানি জড়িত। তা কাঠামোগত বিষয়। হঠাৎ করে সমাধান হয় না।
বর্ষায় চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। যানজট নগরবাসীকে ভোগাচ্ছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, যানজট নিরসনের পদক্ষেপের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আগামীতে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ দেখবেন।
আগামী মাসের মধ্যেই সব শিক্ষার্থী বই পাবে : প্রেস সচিব
পাঠ্যপুস্তকের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত আলোচনায় এসেছে জানিয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সবাই আগামী মাসের মধ্যে বই হাতে পাবে। আগের সরকার (আওয়ামী লীগ) এক দিনের জন্য বই উৎসব করত। সেখানে দেখাতে চাইতো সবাই জানুয়ারির প্রথমে বই পেতো। কিন্তু সরকারি তথ্য বলছে, ২০১০ সালের পর থেকে বই সরবরাহ হতে হতে মার্চ বা কোনো কোনো বছর জুলাই মাসও হয়ে গিয়েছিল। দ্রুত বই ছাপানোর জন্য সরকার কাগজ উৎপাদনকারীদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন বলে জানান প্রেস সচিব। আগামী বছরের শুরু থেকেই বই সরবরাহ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় শফিকুল আলম জানান, ২০২২ সালে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের সর্বশেষ তারিখ ছিল ২৪ মার্চ, ২০২৩ সালে ছিল ১৭ মার্চ এবং ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ বই সরবরাহ করা হয়েছিল।
নোটবুক একটি জটিল বিষয় উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, এখানে অনেক বেসরকারি কোম্পানি জড়িত। তা কাঠামোগত বিষয়। হঠাৎ করে সমাধান হয় না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা