০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ৮ রজব ১৪৪৬
`

মা-ছেলের পুনর্মিলন

খালেদা জিয়াকে ভর্তি করা হলো লন্ডন ক্লিনিকে
মা-ছেলের পুনর্মিলন -


লন্ডনে সেই কাক্সিক্ষত দৃশ্য। মা-ছেলের পুনর্মিলন। হিথ্রো বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালের গেট দিয়ে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে হুইলচেয়ারে বসা মা বেগম খালেদা জিয়াকে গভীর মমতায় জড়িয়ে ধরেন তারেক রহমান। এ দৃশ্য ছিল সত্যিই আবেগের। চোখ আটকে যাওয়ার মতো। জেল-যন্ত্রণার ইতিহাস পেরিয়ে সাড়ে সাত বছর পর এ যে একটি পরিবারের পুনর্মিলন।

গতকাল বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকারী রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে বেগম জিয়াকে ভিআইপি প্রটোকল দেয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরে কী দৃশ্যের অবতারণা হয় সে দিকে আগে থেকেই বহু দৃষ্টি ছিল অপেক্ষমাণ। বেগম জিয়ার লন্ডনে পৌঁছার খবর জানতেও নেতাকর্মীরা ছিলেন উদগ্রিব। বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে দেয়া ছবি ও ভিডিও দেখা যায়, মাকে স্বাগত জানাতে টার্মিনাল গেটে অপেক্ষমাণ ছিলেন তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানসহ অন্যরা। গেট থেকে হুইলচেয়ারে করে বেরিয়ে আসেন খালেদা জিয়া। এ সময় মাকে জড়িয়ে ধরেন তারেক রহমান। ছেলেকে কাছে পেয়ে ‘আরে...’ বলে আবেগমাখা ধ্বনি উচ্চারণ করেন খালেদা জিয়া। জুবাইদা রহমান, কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানসহ অন্যরাও এ সময় ছিলেন উৎফুল্ল ও আবেগাপ্লুত।

বিমানবন্দরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খালেদা জিয়ার সাথে আসা অন্য সফরসঙ্গীদের সাথে সহাস্য কুশলবিনিময় ও কোলাকুলি করেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীদের বিমানবন্দরে ভিড় জমাতে বারণ করা হলেও সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদসহ অনেক নেতাকর্মী সেখানে বেগম জিয়াকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত হন।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হজরত আলী খান বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
বিমানবন্দর থেকে ছেলে তারেক রহমান নিজেই খালেদা জিয়াকে ড্রাইভ করে নিয়ে যান লন্ডন ক্লিনিকে। সেখানে তাকে প্রফেসর ড. পেট্রিক কেনেডির অধীনে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সফরসঙ্গী ড. মামুন।
বিএনপির চেয়ারপারসন সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডন সফরে এসেছিলেন। এরপর তার আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি। এই সময়ের মধ্যে তার সাথে ছেলে তারেক রহমানেরও সরাসরি দেখা হয়নি।

তারেক রহমানও ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে রয়েছেন। এক-এগারো সরকারের সময়ে কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার পর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তারেক রহমান। এরপর তিনি ফিরতে পারেননি। স্বৈরাচার হাসিনা সরকার তার দেশে ফেরার সব পথ বন্ধ করে দেয়। স্পর্শকাতর সব মামলায় ঢুকিয়ে দেয়া হয় তারেক রহমানের নাম। কয়েকটিতে দেয়া হয় সাজা। ফলে সেই থেকে লন্ডনে এক ধরনের নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন তারেক রহমান।
গত ১৭ বছরে খুব কমই এই পরিবারের মিলন ঘটেছে। খালেদা জিয়া ছিলেন দেশে। ২০১৮ সালে তাকে যেতে হয় জেলে। এরপর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছিলেন গৃহবন্দী। অন্যদিকে তারেক রহমান আছেন নির্বাসিত অবস্থায়। আরেক ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুও হয় বিদেশের মাটিতে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে এই পরিবারের এক হওয়া গত দেড় যুগে ছিল স্বপ্নের মতো।

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার এই লন্ডন সফর তাই ভালোবাসা ও আবেগে মোড়া। গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা ছাড়ার সময় বিমানবন্দর সড়কে ছিল নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড়। বেগম জিয়াকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে তারা ছিলেন রীতিমতো উদ্বেল। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের টালবাহানা এবং তার আগে তাকে জেলে ঢুকানো ও গৃহবন্দী করে রাখার দীর্ঘ ইতিহাসই ছিল এই ভালোবাসার কারণ।
বহু রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার দাবি ছিল বিএনপির দীর্ঘদিনের। দলটি এই দাবিতে আন্দোলন করেছে। পরিবারের তরফ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৮ বার শেখ হাসিনার সরকারের কাছে আবেদন করেও কোনো সাড়া মেলেনি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সব দ্বার উন্মুক্ত হয়, বেগম জিয়া মুক্তি পান। একই সাথে তার উন্নত চিকিৎসার প্রস্তুতি শুরু করে দলটি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে একাধিকবার বিদেশ যাওয়ার তারিখ পরিবর্তন করে অবশেষে লন্ডনে গেছেন তিনি।

বেগম খালেদা জিয়ার সাথে চিকিৎসকসহ ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল লন্ডনে গেছেন। তাদের মধ্যে আছেন- খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. এনামুল হক চৌধুরী, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, মো: সাহাবুদ্দিন তালুকদার, নুর উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ আল মামুন, শরীফা করিম স্বর্ণা, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার, সহকারী একান্ত সচিব মো: মাসুদুর রহমান, প্রটোকল অফিসার এস এম পারভেজ এবং গৃহকর্মী ফাতিমা বেগম ও রূপা শিকদার।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, লন্ডন ক্লিনিক পুরনো ঐহিত্যবাহী হসপিটাল। সেই হসপিটালে খালেদা জিয়াকে ভর্তি করা হয়েছে। হিথ্রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে ওনাকে সরাসরি সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা বলেছেন, লন্ডনের হাসপাতালে লিভার ট্রান্সপারেন্টেরও সুবিধা আছে। এ বিষয়ে সেখানকার চিকিৎসকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
সাভারে দুর্ঘটনায় নিহত ৪ জনের পরিচয় মিলল চাদে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে হামলায় নিহত ১৯ দাবানল ছড়িয়ে পড়ায় বাইডেনের ইতালি সফর বাতিল গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি নিয়ে ট্রাম্পকে সতর্ক করল জার্মানি-ফ্রান্স ২২৭৬ নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ার, ১৫৩ জনকে গুমের অভিযোগ বিএনপির দিনাজপুরে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে মাঠে আদালত স্থাপনের প্রতিবাদে স্থানীয় ও ঢাকা আলিয়ার শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ রাজশাহীসহ ৫ জেলার ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বিস্তৃত হতে পারে ইউক্রেনে রাশিয়ার বোমা হামলা, নিহত ১৩ হালুয়াঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, নিহত ২ জামায়াত নেতা আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রিভিউ শুনানি ২৩ জানুয়ারি

সকল