রাজধানীর যানজট নিরসনে নামছে ৬০০ সহায়ক ট্রাফিক পুলিশ
- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
রাজধানী ঢাকায় অসহনীয় যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রথম পর্যায়ে সহায়ক ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে ৬০০ জনকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সহায়ক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তরা প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে দুই শিফটে কাজ করবেন। এ জন্য তাদের প্রতিদিন ভাতা হিসেবে দেয়া হবে ৫৬০ টাকা। এসব সহায়ক ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবেন আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থাৎ মোট ২৪৫ দিন। এতে মোট খরচ হবে আট কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। সাত শর্তে অর্থ বিভাগ এই অর্থ অনুমোদন করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে এ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়,গত ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ এর ১০ ধারা অনুযায়ী নিয়োজিত সহায়ক ট্রাফিক পুলিশের দৈনিক ভাতার হার পুনঃ উপযোজন ও অর্থ ব্যয়ের অনুমতি দেয়ার জন্য অর্থ বিভাগের বাজেট-১ শাখায় একটি চিঠি দেয়া হয়। পরবর্তীতে বাজেট শাখা ভাতার হার নির্ধারণে মতামতের জন্য প্রবিধি অনুবিভাগে চিঠিটি পাঠায়। সে পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ নভেম্বর প্রবিধি অনুবিভাগ থেকে তাদের দৈনিক ভাতার হার নির্ধারণ করে বাজেট শাখায় চিঠিটি ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
জানা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন এলাকায় ৩৩৯টি পয়েন্টে চার হাজার ১১৫ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ৪ নভেম্বর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, শৃঙ্খলাজনিত কারণে অঙ্গীভূত আনসার ব্যবহার করতে পারছে না ডিএমপি। এ পরিস্থিতিতে, ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরো জোরদার করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী সহায়ক পুলিশ নিয়োগের অনুরোধ করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রস্তাবে সহায়ক পুলিশের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৬০০ জন। প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে নিয়োগকৃত সহায়ক ট্রাফিক পুলিশ পালাক্রমে কাজ করবে। এর মধ্যে প্রথম পালায় সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পালায় বিকেল ৪টা রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রতিজন চার ঘণ্টা কর্মকালের জন্য ভ্যাট-ট্যাক্সসহ প্রতিদিন পাবেন ৫৬০ টাকা করে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ২৪৫ দিন এই নিয়োগ বহাল থাকবে। এতে মোট খরচ হবে আট কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের চিঠিটি অর্থ বিভাগ পরীক্ষা করে। এতে দেখা যায় যে, সহায়ক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের প্রস্তাবিত দৈনিক কর্মঘণ্টা অনুযায়ী প্রথম পালা ৮.০০-১২.০০ ঘটিকা এবং দ্বিতীয় পালা ১৬.০০-২০.০০ ঘটিকা পর্যন্ত মোট দুই শিফটে প্রতিজন, প্রতি পালা অর্থাৎ চার ঘণ্টা কর্মকালের জন্য ভ্যাট/ট্যাক্সসহ ৫৬০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী সম্ভাব্য ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত সময় হিসেবে মোট আট কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে বলে পুলিশ অধিদফতরের চিঠিতে জানানো হয়েছে। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি পর্যালোচনার পর সার্বিক বিবেচনায় অর্থ বিভাগ ৫৬০ টাকার স্থলে ৪৫০ (টাকা ভাতা নির্ধারণ করে সম্মতি জ্ঞাপন করে।
অর্থ বিভাগ ৫৬০ টাকার স্থলে ৪৫০ টাকা হারে ভাতা নির্ধারণ করে সম্মতি জ্ঞাপন করলে আবার প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় ৫৬০ টাকা হারে ভাতার পরিমাণ নির্ধারণেরে জন্য অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠায়।
জানা গেছে, পরে শর্তসাপেক্ষে অর্থ বিভাগ প্রশাসনিক বিভাগের প্রস্তাবে সায় দেয়। শর্তগুলো হচ্ছে- (১) শুধু জরুরি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সহায়ক ট্রাফিক পুলিশের নিয়োজিতকরণ প্রযোজ্য হবে; (২) সহায়ক ট্রাফিক পুলিশের জন্য বর্ণিত ভাতা তাদের কর্মে নিযুক্তির তারিখ থেকে কার্যকর হবে এবং ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে; (৩) সহায়ক ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে এ নিয়োগ সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে হবে; (৮) সংস্থার নিজস্ব রিসোর্স সিলিংয়ের মধ্যে এ ব্যয় নির্বাহ করতে হবে এবং এ বাবদ অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না; (৫) এ ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে যাবতীয় আর্থিক বিধিবিধান যথাযথভাবে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে; (৬) এ ব্যয়ে ভবিষ্যতে কোনো অনিয়ম দেখা দিলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে; এবং (৭) সহায়ক ট্রাফিক পুলিশদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট/মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতা প্রদান করতে হবে। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে ।
সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রস্তাবটি সার্বিক অবস্থা বিবেচনার পর প্রস্তাবটিতে অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থসচিব গত ৫ জানুয়ারি অনুমোদন দিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার সিআইডির প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে প্রথম পর্যায়ে পুলিশ বাহিনীতে ১০০ জনকে চাকরি দেয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা আপাতত পুলিশে শুরু করছি। পরবর্তীতে আমরা আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সব ডিপার্টমেন্টে এটা করে দেব। ট্রাফিকের একটা সমস্যা রয়ে গেছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আমরা এক হাজার ছাত্রকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত ৪০০ শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা