লন্ডনের পথে খালেদা জিয়া
বিদায়ী শুভেচ্ছায় নেতাকর্মীদের ঢল : মায়ের অপেক্ষায় তারেক রহমান- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২২
উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতরাত ১১ টা ৩৪ মিনিটে কাতারের আমিরের পাঠানো একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ভিভিআইপি প্রটোকলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। বিএনপি প্রধানকে বিদায় শুভেচ্ছা জানাতে গুলশান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পুরো সড়কে নেতাকর্মীদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। জনতার এই ভিড় অতিক্রম করে বিমানবন্দরে তার গাড়ি পৌঁছাতে সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টারও বেশি। ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে শুরু হয় তার এই প্রতীক্ষিত চিকিৎসাযাত্রা ।
বেগম জিয়াকে বিদায় জানিয়ে বিমানবন্দরে থেকে বেরিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে ছয় বছর আটক করে রেখেছিল। এ সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে তাকে ভর্তি হতে হয়। আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের কাছে বারবার তার উন্নত চিকিৎসার আবেদন জানালেও তারা কোনো কথাতেই কর্ণপাত করেনি। আল্লাহর অশেষ রহমতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। একই সাথে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপি জানিয়েছে, কাতারের রাজধানী দোহায় এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে আজ বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বিমানবন্দরে তাকে ভিআইপি প্রটোকল প্রদান করবে হিথ্রো কর্তৃপক্ষ।
খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত থাকবেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও পুত্রবধূ ডা: জুবাইদা রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা। হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে খালেদা জিয়াকে সরাসরি পশ্চিম লন্ডনের ‘লন্ডন ক্লিনিক’ নামক একটি প্রাইভেট চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানেই তার চিকিৎসা শুরু হবে।
বহু রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার দাবি ছিল বিএনপির দীর্ঘদিনের। দলটি এই দাবিতে আন্দোলন করেছে। পরিবারের তরফ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৮ বার শেখ হাসিনার সরকারের কাছে আবেদন করেও কোনো সাড়া পায়নি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সব দ্বার উন্মুক্ত হয়। বেগম জিয়া মুক্তি পান। একই সাথে তার উন্নত চিকিৎসার প্রস্তুতি শুরু করে দলটি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে একাধিকবার বিদেশ যাওয়ার তারিখ পরিবর্তন করতে হয়েছে। অবশেষে তিনি নেতাকর্মীদের ভালোবাসা ও সম্মানে সিক্ত হয়ে এখন লন্ডনের পথে রয়েছেন।
রাত ৮টা ১৫ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন বিএনপি চেয়ারপারসন। পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কড়া নিরাপত্তার পাশাপাশি হাজার হাজার নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে গুলশানের বাসা থেকে এস্কর্ট দিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়। এ সময় তারা উত্তাল স্লোগান দিতে থাকেন। মিডিয়া সেলের দুই সদস্য আতিকুর রহমান রুমন ও শায়রুল কবির খান জানান, উপচে পড়া ভিড় ঠেলে বেগম জিয়ার গাড়ি রাত ১০ টা ৫০ মিনিটে বিমানবন্দরে পৌঁছে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ১১টা ১২ মিনিটে তিনি বিমানে আরোহণ করেন। এরপর ১১টা ৩৪ মিনিটে সাদা রঙের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আকাশে উড়াল দেয়।
বাসার সামনে ও বিমানবন্দরে দলের সিনিয়র নেতারা বেগম জিয়াকে বিদায় জানান। বিমানবন্দরে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হেসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বেগম খালেদা জিয়ার সাথে চিকিৎসকসহ ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল লন্ডনে গেছেন। সফরসঙ্গীদের মধ্যে আছেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলী রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. এনামুল হক চৌধুরী, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, মো: সাহাবুদ্দিন তালুকদার, নুর উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ আল মামুন, শরীফা করিম স্বর্ণা, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার, সহকারী একান্ত সচিব মো: মাসুদুর রহমান, প্রটোকল অফিসার এস এম পারভেজ এবং গৃহকর্মী ফাতিমা বেগম ও রূপা শিকদার। বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, লন্ডন ক্লিনিক পুরনো ঐতিহ্যবাহী হসপিটাল। সেই হসপিটালে খালেদা জিয়াকে ভর্তি করা হবে। হিথ্রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে থেকে ওনাকে সরাসরি সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।
চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ আরো জানান, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার জেনে লন্ডনে যাওয়ার জন্য রাজকীয় বহরের বিশেষ বিমান দিয়েছেন। কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সোমবার রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের রাজকীয় কাতারের চারজন চিকিৎসক ও প্যারা মেডিক্সরা রয়েছেন ।
২০২১ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন চিকিৎসকরা। তার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বারবার আবেদন-নিবেদন জানানো হয়। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার প্রতিবারই তা উপেক্ষা করে।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল। এমন অবস্থায় ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিনের নির্দেশে খালেদা জিয়া স্থায়ী মুক্তি পান। এভারকেয়ার হাসপাতালে থেকে ওই সুসংবাদ পান তিনি। মুক্তির পরপরই তাকে বিদেশ নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করে বিএনপি। খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা ও এর দিন-তারিখ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে আলোচনা চলছিল। একাধিকবার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। খালেদা জিয়াসহ সফরসঙ্গীদের কারো কারো ভিসাসংক্রান্ত জটিলতাও ছিল। শেষে ৭ জানুয়ারি বিদেশযাত্রার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয় এবং সে অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নেয়া হয়। বেগম জিয়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবের ভিসাও নিয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রেও যেতে পারেন খালেদা জিয়া। ফেরার পথে তার ওমরাহ করার আগ্রহ রয়েছে।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ওই সময় সেখানে একটি ঈদও উদযাপন করেন তিনি। তখন লন্ডনের মরফিন্ড আই হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চোখের অপারেশন করানো হয়েছিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা