চীনের ভূমিকম্পে কাঁপল বাংলাদেশ : ঢাকায় হলে অনেক ক্ষতির শঙ্কা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২১
চীনের ভূমিকম্পে কাঁপল বাংলাদেশও। দেশে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া না গেলেও চীনে ইতোমধ্যে শতাধিক মৃত্যু হয়েছে এবং আহত অনেক। বাংলাদেশ সময় গতকাল সকাল ৭টা বেজে ৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ড সময়ে ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়। শীতের সকালে কাজ নেই এমন অনেকেই ঘুমে ছিলেন বলে এখানে এই ভূমিকম্পটি বেশি মানুষ অনুভব করতে পারেনি। এটা ছিল বড় ভূমিকম্পের একটি। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.১। বাংলাদেশ আবহাওয়া দফতরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছেÑ ভূকম্পনটি সংঘটিত হয়েছে চীনের জিজিয়াং নামক স্থানে।
চীন বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে অবস্থিত থাকলেও সেখানকার ভূমিকম্প বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়ে যাওয়ায় এখানেও মানুষের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বাংলাদেশ দুইটি টেকটোনিক প্লেট বাউন্ডারির (প্লেট সীমানা) মধ্যে পড়েছে। এর একটি ইন্ডিয়ান ও বার্মা টেকটোনিক প্লেট, অন্যটি ইন্ডিয়ান ও ইউরোশিয়ান টেকটোনিক প্লেট। এ ছাড়া প্রতি বছরই কিছু ছোট ছোট ভূমিকম্প হলেও প্রতি ১০০ বছর পর পর ওই অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। বাংলাদেশ অঞ্চলে এবং এর আশপাশে ১৯০০ সালের গোড়ার দিকে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৮৬৯ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে রিখটার স্কেলে ৭-এর উপরে বড় ভূমিকম্প হয়ে গেছে। সেই তথ্য থেকে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশেও একটা বড় ভূমিকম্প হতে পারে যেকোনো সময়। এ ব্যাপারে বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাটা একটু বেশি হবে। কারণ বাংলাদেশের সর্বত্র দুর্বল ইটের গাঁথুনীর অনেক বাড়ি আছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে ঢাকা শহরে। কারণ এখানে অনেক বাড়ি উঠে গেছে পরিকল্পনা ছাড়া। সেখানে বাড়ির মালিকরা ইচ্ছামতো নিজের পছন্দে নির্মাণ করেছেন। আবার অনেক জলাভূমি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে; সেখানে প্রকৌশলগত কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি অথবা করলেও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি।
সক্রিয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশেই অথবা আশপাশে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে পুরনো অবকাঠামো এবং বিল্ডিং কোডের দুর্বল প্রয়োগ করে নির্মিত বাড়িগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর ঢাকায় ভূমিকম্প হলে সহায়তা আসার আগেই অনেক মানুষের মৃত্যু হবে। ভূমিকম্পে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০ শহরের তালিকায় ঢাকা অন্যতম। এখানকার রাস্তাগুলো যথেষ্ট প্রশস্ত নয়, ফলে ভূমিকম্প হলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারবে না, চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে চিকিৎসকরা প্রবেশ করতে পারবেন না রাস্তা সরু থাকায় অথবা রাস্তায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকায়। অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ঢাকায় কয়েক হাজার বাড়ি এমন আছে যেগুলো খুবই দুর্বল। এগুলো ভেঙে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী নতুন করে নির্মাণ করা হলে কিছু সমস্যার সমাধান হবে। ২০১৮ সালের এক জরিপে দেখা গেছেÑ মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, রামপুরা, মতিঝিল ও খিলগাঁওয়ের মতো এলাকার অনেক স্থাপনা কাঠামোগত ও নকশার মান পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের জৈন্তাপুর চরম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় একটি উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প ঢাকায় অকল্পনীয় মাত্রার বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালে ৬০টি সংঘটিত ভূমিকম্পের মধ্যে তিনটি ৪ মাত্রার উপরে এবং ৩১টি ৩ থেকে ৪ মাত্রার ছিল, এ থেকে প্রমাণিত যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভূমিকম্পের সক্রিয় কেন্দ্র রয়েছে। এর যেকোনো একটা থেকে ভূমিকম্প হতে পারে।
ডিমলায় ভূমিকম্প অনুভূত
ডিমলা (নীলফামারী) সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীর ডিমলায় গতকাল সকাল ৭টা ৭ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। তবে প্রাথমিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, আকস্মিক কম্পনে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসেন। প্রেস ক্লাব ডিমলার সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন ইসলাম বসুনিয়া বলেন, ‘ভূমিকম্প কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল। এতে ভয় পেয়ে মানুষজন বাড়ির বাইরে চলে আসে।’
তবে এ বিষয়ে ডিমলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আব্দুস সবুর মিয়ার কাছে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ফলে ভূমিকম্পের রিখটার স্কেলে মাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা