আয়কর দেন না এমন ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করতে এনবিআরকে নির্দেশ
বিশেষ ওএমএস চালু হচ্ছে, রমজানে শুল্ক কাঠামোয় পরিবর্তন নয় : অর্থ উপদেষ্টা- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৫
সরকার বিশেষ ওএমএস (খোলাবাজারে চাল বিক্রি) কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, পণ্য মূল্য সহনীয় রাখতে রমজানের আগে শুল্ক কাঠামোর কোনো ধরনের পরিবর্তন আনবে না সরকার। এ ছাড়া আয়করযোগ্য কিন্তু কর দেন না এমন ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করতে এনবিআরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।
চালের দাম বাড়ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, একটি স্পেসিফিক আইটেম চালের ক্ষেত্রে দাম কিছুটা বেড়েছে। অন্যগুলোর ওভারঅল খুব বেশি বেড়েছে, তা নয়। সাপ্লাই চেইনের কারণে এটা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি, যাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে চালের দাম না বাড়ে। এটা মেজর কনসার্ন। চালের দাম একটু যখন বাড়ছিল তখন আমি সাথে সাথেই খাদ্য ও বাণিজ্য উপদেষ্টাকে বলেছি।
সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয়কে নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানি করতে বলা হয়েছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বলেছি আপনারা যেখান থেকে পারেন চাল আমদানি শুরু করেন। প্রয়োজনে বাফার স্টক করে রাখেন। বাফার স্টক থাকা মানে সরকারের যদি একটা স্টক থাকে তাহলে বাইরে যারা আছে তারা একটু সংযত হয়। দরকার হলে আমরা বলেছি স্পেশাল ওএমএস করে দেবো। তিনি আরো বলেন, আগামী রমজান মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো পণ্যের শুল্কে সরকার পরিবর্তন আনবে না।
রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও দামের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এরই মধ্যে ছোলা, ডাল, খেজুর আমদানি করা হয়েছে। সয়াবিন তেলও কিছুটা সহনীয় হয়ে এসেছে। যদি দরকার হয় আমরা আবার সয়াবিন তেলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। সবচেয়ে বড় কথা হলো এখন থেকে বাজার মনিটরিংটা আরো জোরদার করতে হবে। শুধু ভোক্তা সংরক্ষণ আইন দিয়ে হবে না।
তিনি বলেন, এখন ২০০ টাকার পেঁয়াজ ৪০ টাকায় নেমে এসেছে। আমাদের দেশে পণ্যের দাম বেড়ে যায় আবার নেমে যায়। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে দাম কিন্তু মোটামুটি স্থিতিশীল থাকে। নতুন করে আবার পেঁয়াজ আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে কি না- জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা রমজান শেষ হওয়ার আগে আর কোনো ডিউটি কাঠামো পরিবর্তন করব না। মেসেজ দেয়া হয়েছে, রমজান শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা শুল্কে কোনো পরিবর্তন আনবো না।
আয়করের যোগ্য তবে কর দেন না এমন ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করতে এনবিআরকে জরিপ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে উল্লেখ্য করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, করের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। ভ্যাটের পর আয়করের আওতা নাকি বাড়ানো হচ্ছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে রেওয়াতি সুবিধাও তুলে নেয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আয়করটা আমরা রেশনালাইজ করব। যার সামর্থ্য আছে তাকে একই হারে কর দিতে হবে। একজনের সামর্থ্য আছে, কিন্তু অন্যভাবে ম্যানেজ করবে, সেটা যাতে না করা হয়। আমাদের করের সংগ্রহটা বাড়াতে হবে। আয়করের আওতা বাড়ানো হবে সাথে, তবে খুব বেশি বাড়াতে পারব না।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বহু ব্যবসায়ী আছেন, যাদের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নেই, আয়কর দেন না। আমি এনবিআরকে বলেছি, তোমরা কুইক একটা সার্ভে (জরিপ) করে দেখো। থানা হেডকোয়ার্টারে (উপজেলা শহরে) একটা মুদি দোকান, দেখেন না বহু টাকা আয় করে।
এলএনজি ও ৫০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন : ব্যয় হবে ১০২৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা
দেশের শিল্প ও বাণিজ্যখাতে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে স্পট মার্কেট থেকে ১ কার্গো এলএনজি ও খাদ্য চাহিদা মেটাতে ভারতে থেকে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সেদ্ধচাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত দু’টি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১০২৭ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৪১৬ টাকা। প্রতি কেজি চালের মূল্য হবে ৫৫ টাকা ৬ পয়সা। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় প্রস্তাব দু’টিতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে স্পট মার্কেট হতে ১ কার্গো (৩০-৩১ জানুয়ারি ২০২৫ সময়ে ৫ম) এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। পেট্রোবাংলা কর্তৃক ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) স্বাক্ষরকারী চুক্তিবদ্ধ ১৬টি প্রতিষ্ঠানের (ইতঃপূর্বে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী ২৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠান মেয়াদ উত্তীর্ণ) কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। ৩টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেসার্স এক্সেলারেট এনার্জি এলপি এক কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৫.৬৯ মার্কিন ডলার হিসাবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৭৫২ কোটি ৫০ লাখ ২৪ হাজার ৪১৬ টাকা।
সংস্কার শেষে ভালো অবস্থানে যাবে শেয়ারবাজার
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংস্কারের কারণে শেয়ারবাজার সাময়িকভাবে খারাপ অবস্থায় আছে। সংস্কারকাজ শেষে শেয়ারবাজার ভালো অবস্থানে ফিরবে। গতকাল রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনে শেয়ারবাজার অংশীদারদের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথমবারের মতো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন করেন অর্থ উপদেষ্টা। এ সময় তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়নে ব্যাংকের সাথে শেয়ারবাজার সামঞ্জস্য রাখা হবে। ভালো সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা হবে। প্রাকৃতিকভাবে ভালো শেয়ারের মাধ্যমে শেয়ারবাজার দীর্ঘমেয়াদে ভালো হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর জন্য যথেষ্ট সহায়তা করছে সরকার। এ জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। আইসিবিকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতেই এসব করা হয়েছে। পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলোতে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর জন্য লং টার্ম ফাইন্যান্সিং শেয়ারবাজার থেকে আসে। ব্যাংকের টাকা হলো জনগণের জমা করা টাকা। তাই বড় এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। আমরা শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সবার কাছ থেকে তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো শুনেছি। ইতোমধ্যে এগুলোর মধ্যে কিছু সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, শেয়ারবাজার শুধু সূচক বেড়ে ৯ হাজার পয়েন্ট হওয়া ভালো কিছু নয়, সেটা স্বাভাবিকও না। সেটা কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়। সেখানে কারসাজির মতো সমস্যা থাকে। উত্থান-পতনের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে বাজার ভালো করতে হবে। বর্তমানে ব্যাংকে ৮-৯ শতাংশ পর্যন্ত আমানতের সুদ পাওয়া যায়। যেখানে বাজারে ১২ শতাংশ হলেও অনেক আমানতকারী সেটা নিরাপদ মনে করে সেখানে যায়।
ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএসইসি-আইসিবির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ
এ দিকে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন।
গতকাল রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে ডিএসইর সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করেন বিনিয়োগকারীরা।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম মানিক। এ সময় বিনিয়োগকারীরা বলেন, শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত আছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের একটাই দাবি বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। নতুন চেয়ারম্যান অযোগ্য। তাকে দিয়ে এ শেয়ারবাজারে ভালো কিছু আশা করা যায় না। তার প্রতি বিনিয়োগকারীদের কোনো আস্থা নেই। আমাদের টাকা ও মান-সম্মান গেছে।
বিনিয়োগকারিরা আরো বলেন শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের ফলে প্রতিদিন বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ফোর্সড সেল করা হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হচ্ছেন। দুই মাসে টানা দরপতনের ফলে আমাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদেরকে বাঁচাতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা