০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`
অবৈধ রেল ক্রসিং

ফরিদপুরে ট্রেনের ধাক্কায় স্বামী-স্ত্রীসহ ৫ জন নিহত

-


ফরিদপুরের গেরদা ইউনিয়নের কাফুরা নামক স্থানে একটি অবৈধ রেল ক্রসিংয়ে ঢাকাগামী ট্রেনের ধাক্কায় নারায়ণগঞ্জের এক দম্পতিসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো চারজন।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে গেরদা ইউনিয়নের মুন্সিবাজার-গজারিয়া আঞ্চলিক সড়কের কাফুরা রেলগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঢাকাগামী মধুমতি এক্সপ্রেস মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন, আহত হন একজন স্থানীয় দোকানদারসহ ছয়জন। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পর সেখানে আরো দুইজনের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ সদরের ভূঁইয়াপাড়া এলাকার মামুন চৌধুরী লিটন (৫০) ও তার স্ত্রী ফাহমিদা শারমিন মুন (৪২), শ্যালক শহিদ ভূঁইয়ার স্ত্রী আতিফা রহমান (৩৬), নিকটাত্মীয় বন্দর থানার দড়িমোল্যাকান্দা এলাকার উম্মে তাসরুমা রিনতু ও চাচাতো ভাই হাসিব জহিরের স্ত্রী সাজিয়া সাজু (৪৫)।

আহতরা হলেন- লিটন চৌধুরীর মেয়ে তাসরিফ আক্তার (১৮), শ্যালিকা অরিন (৩৫), মাইক্রোবাস চালক নাজমুল হোসেন (৩৫) ও স্থানীয় চা দোকানি মো: জিন্নাহ (৫২)।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাসরিফ জানান, নারায়ণগঞ্জের থেকে সকালে তারা এক আত্মীয়ের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে সদরপুরের চন্দ্রপাড়ায় যাচ্ছিলেন, পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জানা যায়, মাইক্রোবাসটি নিহত মামুন চৌধুরী লিটনের ব্যক্তিগত। গত দুই বছর ধরে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন খুলনার নাজমুল হোসেন।
ফরিদপুর রেলস্টেশন মাস্টার তাকদির হোসেন জানান, দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ট্রেনটি ফরিদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। হারুন অর রশিদ নামে স্থানীয় একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমরা পাশে বসেই চা খাচ্ছিলাম। ট্রেনের হর্ণের শব্দ শুনিনি। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে বের হয়ে দেখি একটি মাইক্রোবাসকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ট্রেন। তখন মাইক্রোর সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়। এরপর কিছু দূরেই মাইক্রোবাসটি পাশের পুকুরে পড়ে যায়। তখন আমরা দৌড়ে গিয়ে ৫ জনকে গাড়ি থেকে বের করে আহতাবস্থায় হাসপাতালে পাঠাই আর ৩ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রেলগেটটিতে গেটম্যান না থাকায় ও ট্রেনের হুইসেল না বাজায় এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া রেল ক্রসিংয়ের দুইপাশে অবৈধ দোকান গড়ে উঠায় মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।

ফরিদপুর স্টেশন মাস্টার তাকদির হোসেন বলেন, ওই এলাকাটি মূলত অরক্ষিত। সেখানে কোনো অনুমোদিত রেলগেট কিংবা গেটম্যান নেই। এ ছাড়া রেল ক্রসিংটি গুরুত্বপূর্ণ না থাকায় রেলগেট নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কখনো অবগতথও করা হয়নি।
ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নুরুজ্জামান জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমরা খবর পাই। তাৎক্ষণিক এসে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়। মাইক্রোবাসটি ট্রেন ক্রসিং থেকে কমপক্ষে ১০০ ফিট দূরে রেললাইনের পাশে একটি পুকুরের মধ্যে গিয়ে পড়ে। পুকুর থেকে মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়েছে।
এ দিকে খবর পেয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লা ও পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, এখানে স্থায়ীভাবে রেলগেট করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। নিহতদের বহন ও দাফনের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement