গুমের মামলায় হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৯
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ১২ জনের মধ্যে সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি পাওয়া মেজর জেনারেল (অব:) জিয়াউল আহসান গ্রেফতার থাকায় তার বিরুদ্ধে হাজিরা পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। গ্রেফতার হওয়া মাত্রই অন্য আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। ওই দিন তদন্ত রিপোর্ট এবং গ্রেফতার সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) গ্রেফতারের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) জিয়াউল আহসানসহ বিভিন্ন সংস্থার মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে তদন্তের স্বার্থে অভিযোগের শুনানিতে ১২ জনের সবার নাম প্রকাশ করেননি চিফ প্রসিকিউটর।
ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছর বাংলাদেশে যে ভয়ের সংস্কৃতি চালু করা হয়েছিল সেটার একটি হচ্ছে গুম এবং আরেকটি ক্রসফায়ার। গুম করে গোপন কারাগারে আটকে রেখে মানুষ হত্যা, স্বাধীনতা হরণ ইত্যাদি কাজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অপরাধ। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনেও এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ। বাংলাদেশে গত ১৫ বছর সেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে এবং সে সময় পুলিশ থেকে শুরু করে গোয়েন্দাসহ বেশির ভাগ বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। গুমের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে বিভিন্ন বাহিনী এসে তুলে নিয়ে যেত, তারপর অধিকাংশই আর ফিরে আসেনি। কেউ কেউ ফিরে এসেছেন। স্বৈরশাসকের অবসানের পর তারা আয়নাঘর বা গুমঘর থেকে ফিরে এসেছে। এটা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত অপরাধ। বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ। তিনি বলেন, এসব বাহিনীর কিছু কিছু সদস্য যাদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে, বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে, নানাভাবে পুরস্কৃত করে তাদেরকে দিয়ে সিস্টেমেটিক্যালি গুমের মতো এই অপরাধ করা হয়েছিল। যেহেতু এই অপরাধগুলো গণহত্যার থেকে একটু ভিন্ন ধরনের অপরাধ তাই আজকে ভিন্ন একটি মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেছিলাম।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম সংঘটিত হয়েছে। গুমের জন্য সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি হিসেবে তুলে ধরা হয়। যাদের গুম অবস্থা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, সেটাও শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে। একজন ব্যক্তির ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্য এসব গুম সংঘটিত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ মিশনে পাঠানো, পদোন্নতির লোভে বিভিন্ন বাহিনীর কিছু লোক গুমের মতো অপরাধে লিপ্ত হন বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এর আগে সোমবার সকালে গত ১৫ বছরে গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর।
আওয়ামী লীগ শাসনামলের গুমের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৫০টির অধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে তিনটি মামলা করা হয়েছে। গুমের আগের দুটি মামলায় একটিতে রাঙ্গামাটির পুলিশ স্পেশাল ট্রেনিং স্কুলের সাবেক পুলিশ সুপার মো: মহিউদ্দিন ফারুকীকে এবং আরেকটিতে বরিশাল রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আলেপ উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে।
শুনানিতে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, বি এম সুলতান মাহমুদ। সাথে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সুবহান তরফদার, শাইখ মাহদী প্রমুখ। ট্রাইব্যুনালে যারা গুমের অভিযোগ করেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী, মাইকেল চাকমা প্রমুখ।
যা বললেন গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যরা : ট্রাইব্যুনালে শুনানির সময় গুম হওয়া ব্যক্তি, তাদের পরিবারের সদস্য এবং মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। আদেশের পর ট্রাইব্যুনালের সামনে গুমের শিকার ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমানের চাচা মীর মাসুম আলী বলেন, হঠাৎ করে শুনলাম তাকে গুম করা হয়েছে। তার নিজের তিন ও ছয় বছরের বাচ্চার সামনে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার পর থেকে কোনোভাবেই তার বিষয়ে কোনো তথ্য পাচ্ছিলাম না আট বছর ধরে। আমি ১৭ বছর ধরে দেশে আসতে পারিনি একমাত্র আরমানের কারণে। প্রসিকিউশন ও ট্রাইব্যুনালের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ যাদের কারণে এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি।
মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে অপেক্ষা করছিলাম গুমের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হোক। বিচারের আওতায় আনা হোক। একটা ন্যায়বিচার, একটি স্বচ্ছ বিচার যেন আমরা দেখতে পারি। কারণ প্রত্যেকটা কেসের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ বলেন, র্যাব বলেন, ডিজিএফআই বলেন তারা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ছিল। তাদেরকে যেন আইডেনটিফাই করা হয় এবং বিচারের আওতায় আনা হয়। আমাদের এই অপেক্ষাটা কিন্তু একযুগেরও বেশি।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা কতটা পৈশাচিক ছিল তা এখন আমরা বুঝতে পারছি। একটা সরকার কিভাবে এ কাজ করতে পারে তার বাহিনীকে দিয়ে! আমাদের সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করেছে বিডিআর হত্যাকাণ্ড দিয়ে। আমাদের র্যাব, পুলিশ সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা