০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`

রাজনৈতিক অস্থিরতায় জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ধস

জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ১.৮১ শতাংশ
-


মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে রীতিমতো ধস নেমেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, কারফিউ ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধীরগতি- দেশের জিডিপির ওপর বেশ খারাপ প্রভাব ফেলেছে। তার প্রমাণ পাওয়া যায় গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির চিত্র থেকে। এই প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৮১ শতাংশে নেমেছে। এর আগের বছরের (২০২৩-২০২৪) একই প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ।
গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের জিডিপির তথ্য প্রকাশ করেছে। বিবিএসের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত জানুয়ারি মাস থেকে টানা তিন প্রান্তিক ধরেই জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমেছে। এবারের প্রবৃদ্ধি বিগত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বলে জানা গেছে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে ০.৯৩ শতাংশে নেমেছিল।
বিবিএসের তথ্য অনুসারে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশের ভেতরে স্থিরমূল্যে ৮ লাখ ৪ হাজার ৯৪২ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হয়, যা গত ৪ প্রান্তিকের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর ১১টি উপখাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২ দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে খনিজ ও পাথর উত্তোলন খাতে। নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি আর্থিক ও বীমা খাতে।

কৃষি, শিল্প ও সেবা- এই তিন খাতের উপাত্ত নিয়ে জিডিপি প্রকাশ করা হয়। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে কৃষি খাতে। এই খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগের বছরে একই সময়ে যা ছিল শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এবার সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এর আগের বছর যা ছিল ৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
আর প্রথম প্রান্তিকে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের বছরে প্রথম প্রান্তিকে যা ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। সিপিডিসহ বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা ও অর্থনীতিবিদরা বলেছেন,পতিত আওয়ামী লীগের পুরোটা সময় জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে কারচুপির আশ্রয় নেয়া হতো। এর পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন সাবেক পরিকল্পনা ও পরবতীর্ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। সে সময় চাপ দিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে ধরা হতো।

এ দিকে, বিবিএস-এর এক সূত্র জানায়, জুলাই-আগস্টে কোটাবিরোধী সহিংসতা ও পরবর্তী সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের লক্ষ্যে যে ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়েছে। এর পর আন্দোলন ঠেকাতে একপর্যায়ে কারফিউ জারি করা হয়। তখন যান চলাচল সীমিত হয়ে যায়। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমে যায়। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। এর পর অন্তর্বতীর্ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হয়। নভেম্বর মাসেও অনেক কলকারখানা শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর প্রভাব পড়বে আগামী প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর।
গত মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্যভাবে শ্লথ হয়ে পড়েছে এবং এর ফলে চলতি অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪ ভাগের বেশি হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement