০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ৬ রজব ১৪৪৬
`

খাদ্যগুদাম তৈরিতে পরামর্শক খরচই ২৯০ কোটি টাকা

-

- এক যুগেও শেষ হচ্ছে না সাত সাইলো নির্মাণ
- খরচ বেড়েছে ২ হাজার ৯১ কোটি টাকা
- পৌনে ১১ বছরে অগ্রগতি ৭৩.৪৪ শতাংশ

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেয়া প্রকল্পগুলো এখন রাষ্ট্রের গলার কাঁটা। প্রকল্পগুলো শে^তহস্তীর মতো লালন-পালন করতে হচ্ছে। এর একটি হলো আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধনী), যা ১১ বছরেও শেষ হয়নি। লাফিয়ে লাফিয়ে মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি খরচও বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে সাতটি গুদাম নির্মাণের কথা। আর এই গুদাম বানাতে তিন ধরনের পরামর্শকের পেছনেই খরচ হচ্ছে ২৯০ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর সাড়ে ৬ বছরের প্রকল্প এখন ১২ বছরে পা দিয়েছে। পৌনে ১১ বছরে কাজের অগ্রগতি ৭৩.৪৪ শতাংশ। অন্য দিকে প্রকল্পের খরচ ২ হাজার কোটি টাকা থেকে চতুর্থ সংশোধনীতে এখন ৪ হাজার ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সালের জুনে যে প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার কথা তা এখন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে বাকি ২৫.৩০ শতাংশ কাজ শেষ করতে কত সময় লাগবে সেটা নিয়ে খোদ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েরই প্রশ্ন। সম্প্রতি প্রকল্পটি নিয়ে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের মূল্যায়ন কমিটির সভা (পিইসি) অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পটির সংশোধনী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা গেছে। পিইসি সভাকে দেয়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে প্রকল্পের পটভূমি সম্পর্কে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সময় সময়ে মজুদ ঘাটতি সৃষ্টি হয়, যা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে বিশেষ করে দুর্যোগের সময় আক্রান্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করা, কৃষককে ন্যায্যমূল্য প্রদান করে খাদ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বছরব্যাপী পর্যাপ্ত খাদ্যশস্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্য পূরণে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস ও বৈদেশিক সংগ্রহ কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগৃহীত খাদ্যশস্যের (ধান, চাল ও গম) সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে কৌশলগত মজুদব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনা ও জাতীয় খাদ্যনীতিতে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

প্রেক্ষাপটের তথ্য বলছে, ২০১৪ সালে প্রকল্পটি মোট এক হাজার ৯১৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে আটটি আধুনিক খাদ্যগুদাম বা সংরক্ষণাগার নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক ঋণ ছিল এক হাজার ৮৭৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুনে সাড়ে ছয় বছরে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা ছিল। কিন্তু দু’দফায় সময় ও খরচ বাড়িয়েও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি খাদ্য অধিদফতর। প্রথম ধাপে সময় তিন বছর তিন মাস বাড়ানো হয়। খরচ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে তিন হাজার ৫৬৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা করা হয়। এরপর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নেয়া হয়। তাতেও প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। এখন খরচ আরো ৪৭৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং সর্বমোট ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা বৃদ্ধির ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন খরচ চার হাজার ৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর মেয়াদ আরো এক বছর বা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে। ফলে মোট বাস্তবায়নকাল ১২ বছরে উন্নীত হচ্ছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্পের প্রধান প্রধান কাজ হলো, দেশের সাতটি ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সরকারি পর্যায়ে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ সাতটি আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ। এখানে পাঁচটি চাল ও দুইটি গমের জন্য সাইলো হবে। উপকূলীয় ও দুর্যোগপূর্ণ ১৯ জেলার ৬৩ উপজেলায় মোট ২৮ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার ৫ লাখ হাউজ হোল্ড সাইলো (ঘরে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য পাত্র) বিতরণ, ফুড পলিসি গবেষণা, অনলাইন ফুড স্টক ও মার্কেট মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন এবং ছয়টি বিভাগীয় শহরে ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় সাতটি স্টিল সাইলো বা আধুনিক খাদ্যগুদাম নির্মাণকাজ চলমান আছে। ওই সাতটি সাইলোর মধ্যে চারটি সাইলোর (বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও খুলনা) নির্মাণব্যয় অনুমোদিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে এক হাজার ৪৪৪ কোটি ১১ লাখ টাকা নির্ধারিত ছিল। প্রতিটির জন্য ব্যয় ৩৬১ কোটি ৩ লাখ টাকা। তৃতীয় সংশোধন প্রস্তাবে চারটি সাইলোর জন্য ১০০ কোটি ৪৬ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ফলে খরচ প্রতিটির জন্য বেড়ে হবে ৩৮৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আবার ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি সাইলোর জন্য ১২৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা দেয়া হচ্ছে না বলে পরিকল্পনা কমিশন বলছে।
প্রকল্পের ব্যাপারে জানতে পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলেন জানান। ফোন করে তিনি তার অফিসে আসার জন্য বলেন। প্রকল্পের ব্যাপারে নিউজের জন্য পরে আবার ফোন দেবো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিটিং শেষে তিনি কল ব্যাক করবেন। বিকেলে আবার তাকে ফোন করা হলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মাসুদুল হাসানের সাথে তার মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রকল্পটি এখন শেষ প্রান্তে। বিশ্বব্যাংক আমাদেরকে সময় অনুমোদন দিয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলছেন, প্রকল্পটির সংশোধন অনুমোদনের জন্য একনেক বৈঠকের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। সেটা একনেক সভায় যাচ্ছে।
প্রকল্পের সময় ও খরচ বৃদ্ধির ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, অনেক প্রকল্প আর্থিক সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। আবার সময়ে সময়ে প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে। পছন্দের ব্যক্তিদের প্রতিযোগিতাহীনভাবে ঠিকাদারি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই ক্ষমতাসীনরা লোক দেখানো ‘প্রেস্টিজ’ প্রকল্প নিয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নানাভাবে ‘নয়-ছয়’ হয়েছে। এক দিকে অর্থের অপচয় হয়েছে, সরকারি ঋণ বেড়েছে। অর্থনীতি কোনো উপকার পায়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্পই বেশি। একটি গোষ্ঠীর হাতে অর্থ চলে গেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
মুন্সীগঞ্জে সেতু থেকে লাফ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বৃত্তির তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ সাফা মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যাডহক কমিটির সভাপতি আল আমিন শান্তিতে ঘুমাতে চাইলে অবৈধ ইসরাইলিদের ফিলিস্তিন ত্যাগ করতে হবে : ইয়েমেন কিশোরগঞ্জে উন্নত পদ্ধতিতে ইট উৎপাদন বিষয়ে মতবিনিময় কুয়কাটায় শুরু হতে যাচ্ছে মাসব্যাপী ‘পর্যটন মেলা’ প্লাস্টিকের বোতল স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করছে স্ত্রীসহ সাবেক এমপি শিখরের নামে দুদকের দুই মামলা খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা : ফিরোজার সামনে নেতাকর্মীদের ভিড় সিলেটে তাফসির মাহফিল বৃহস্পতিবার, প্রধান আলোচক মিজানুর রহমান আজহারি রংপুরের পাঁচে পাঁচ, ঢাকার টানা চার হার

সকল