০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ৬ রজব ১৪৪৬
`
ভিসন ২০২১ এর হাইটেক উদ্যোক্তাদের প্রতি বৈরী আচরণ

সফটওয়ার শিল্পে কর্মসংস্থান ও বিদেশী মুদ্রা হারানোর শঙ্কা

-

সরকারের হাইটেক উদ্যোক্তাদের প্রতি বৈরী আচরণে কর্মসংস্থান ও বিদেশী মুদ্রার আয় হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পতিত সরকারের নীতির ধারাবাহিকতায় কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ বা সময় না দিয়ে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ভিসন-২০২১ সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক খালি করার নির্দেশ পালন করতে গিয়ে বেসরকারি হাইটেক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা বিপদে পড়েছেন। একই সাথে সফটওয়্যার রফতানির উদ্যোগও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সফটওয়্যারের মার্কেটে বিদেশী কোম্পানি প্রবেশের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সফটওয়ার খাতে আউটসোর্সিং থেকে আয়ে এর প্রভাব পড়ায় চাপ পড়তে পারে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় প্রবাহের ওপরও।

বিগত হাসিনা সরকারের শেষ সময়ে কাওরান বাজার জনতা টাওয়ার ভবনের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের খালি করে দেয়ার জন্য সেখানকার ২০টি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেয়া হয়। সেখানে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণাধীন নতুন হাইটেক ভবন তৈরির পর পর্যায়ক্রমে এই ভবনের সংস্কার কাজ করার জন্য যে আবেদন জানায় তাতে কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয়নি। এমনকি এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানান্তরের জন্য ৬ মাস সময় চাইলেও সেটিও মঞ্জুর না করে তাৎক্ষণিকভাবে ভবন খালি করে দেয়ার জন্য গত ৩০ অক্টোবর নির্দেশ জারি করা হয়। এতে গত ডিসেম্বরে সব প্রতিষ্ঠানই তাদের স্পেস খালি করে বিকল্প ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিয়েছে। জরুরিভাবে প্রতিষ্ঠান সরানোর কারণে হাইটেক প্রতিষ্ঠানগুলো এক দিকে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে বিনিয়োগকৃত স্টাবলিশমেন্ট হারিয়েছে অন্য দিকে নতুন স্থানে সাময়িক সুবিধাদি নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে তাদের।
২০১০ সালে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ গঠনের পর বিগত সরকার বাংলাদেশে সফটওয়্যার আমদানি প্রতিস্থাপন ও বিদেশে তা রফতানি করা এবং এ খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরির মূল লক্ষ্য অর্জনের পরিবর্তে শুধু অবকাঠামো বিস্তারে মনোযোগ দেয়। আবার এ অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারের অন্যান্য বৃহদাকার প্রকল্পে যেভাবে অর্থের অপচয় হয়েছে এ ক্ষেত্রেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটে। এতে কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক অনুকূল্যপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী অর্থ উপার্জনের সুযোগ লাভ করে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ প্রতিযোগী দেশগুলো বিওওটি পদ্ধতিতে যে চমৎকার হাইটেক সুবিধার কাঠামো তৈরি করতে পেরেছে সেটি বাংলাদেশে হয়নি। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর এখন হাইটেক পার্কের বিভিন্ন নির্মিত প্রকল্প অনুসন্ধানে বড় বড় দুর্নীতি ও অনিয়মের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে।

সরকারের তৈরি করা হাইটেক টেকনোলজি পার্কসমূহের মধ্যে কাওরান বাজারের ভিশন-২০২১ টাওয়ার সফটওয়ার টেকনোলজি পার্কটি ছিল লাভজনক। এখানে ২০টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও টেলিকম প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার সেবা প্রদান, কলসেন্টার পরিচালনাসহ অন্যান্য হাইটেক সেবা দিয়ে আসছিল। অন্য দিকে, বিদেশে সফটওয়্যার সংক্রান্ত কাজে আউটসোর্সিং সেবা দিয়ে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে আসছিল।
বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের আওতায় পার্কটির উন্নয়ন ও সংস্কারের অংশ হিসেবে এখানে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের স্থান খালি করার নোটিশ দেয়া হয়। হাইটেক উদ্যোক্তারা বলেন, ভবনটি খালি না করেই রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের কাজ করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন তলার সংস্কার করা হলে প্রভাবিত তলার ভাড়াটিয়ারা সাময়িকভাবে বাড়ি থেকে কাজ করতে পারে অথবা প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য বিকল্প কর্মস্থল খুঁজতে পারে। এ ছাড়া পার্কে দ্বিতীয় ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা বিবেচনায় রেখে নতুন কাঠামো সম্পন্ন হওয়ার পরে বিদ্যমান ভবনে রক্ষণাবেক্ষণের সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে। এতে প্রতিষ্ঠানসমূহ সাময়িকভাবে নতুন ভবনে স্থানান্তর করতে পারে এবং সংস্কার শেষ হলে বিদ্যমান ভবনে ফিরে আসতে পারে। এর বিকল্প হিসেবে, হাইটেক পার্ক অথরিটি সব ভাড়াটিয়ার জন্য সাময়িক কর্মস্থলের ব্যবস্থা করতে পারে এবং স্থানান্তর ও রক্ষণাবেক্ষণ শেষ হওয়ার পরে বর্তমান অফিসে ফিরে আসার সাথে সম্পর্কিত খরচ বহন করতে পারে।

উদ্যোক্তরা জানান, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম অনেকটাই বন্ধ ছিল। হঠাৎ এই নোটিশের প্রাপ্তি তাদের জন্য বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসা পরিচালনার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সৃষ্টি করেছে। এর ফলে তাদের চলমান কার্যাদেশসমূহ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে যা বড় ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এই ভবনের অন্যতম উদ্যোক্তা মিলেনিয়াম ইনফরমেশন সলুয়েশনের মাহমুদুল হাসান জানান, দেশের সফটওয়্যার ও আইটি শিল্পকে যুগোপযোগী করার মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি বিশেষ মাধ্যম হিসেবে কাজ করার জন্য আমরা বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও আশ্বাসের কারণে আপনার ভবনে ষষ্ঠ তলায় ৫৯০৪ বর্গফুট এবং পরবর্তীতে তৃতীয় তলায় আরো ২৫৫৫ বর্গফুট স্পেস ভাড়া নেন। কর্তৃপক্ষের জ্ঞাতসারেই তিনি বিপুল অর্থ ব্যয় করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে ১৫০ জন তরুণ-তরুণী কর্মরত আছেন। এর মাধ্যমে তিনি দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন এবং দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক খাতে তথ্য ও প্রযুক্তি সেবা প্রদানের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে সহায়তা করে দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ২৫ বছর যাবত বিশেষ অবদান রেখে আসছেন। এই কারণে, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের সম্পর্ক সাধারণ ভাড়াটিয়া সম্পর্কের ঊর্ধ্বে বিনিয়োগকারী হিসেবে স্বীকৃত।

প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকল্প আবেদনে সাড়া না মিললে প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়ার জন্য ৬ মাস সময় চান। কিন্তু হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ তাদের আবেদন খারিজ করে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে টাওয়ার ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়। এ নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের মধ্যে সব প্রতিষ্ঠান তাদের স্থাপনা জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নেয়। তবে পার্কের একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে জানা যায়, এভাবে জরুরি ভিত্তিতে স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনার কারণে তাদের স্টাবলিশমেন্ট ব্যবসার বিপুল ক্ষতি হয়। কাজে হারানোর কারণে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হয় অনেক চাকরিজীবীকে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকলেও কর্তৃপক্ষ তাতে কোনো সাড়া দেয়নি।

উল্লেখ্য, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, কাওরান বাজার, ঢাকা ভবনটি ৯০ এর দশকে নির্মিত। বর্তমানে স্ট্রাকচারাল, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, ফায়ার এক্সিট ও প্লাম্বিংসহ নানা সমস্যার কারণে রেট্রোফিটিং এর প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ‘ডিজিটাল উদ্যোগে ও উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প’ এর অধীনে এর রেট্রোফিটিং ও আপগ্রেডেশন এর কাজ শিগগির সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ভবনটি সম্পূর্ণরূপে খালি করে প্রকল্প দফতরকে হস্তান্তরের জন্য বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ দেয়।
২০১০ সালে গঠিত, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ) এখন গাজীপুর জেলায় বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি এবং যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কসহ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে । পরিকল্পিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার মহাখালী আইটি ভিলেজ, রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার বরেন্দ্র সিলিকন সিটি এবং সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সিলেট ইলেকট্রনিক সিটি। এ পর্যন্ত, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩৯টি হাইটেক পার্ক নির্মাণাধীন ও নির্মাণের জন্য বিএইচটিপিএ দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
স্ত্রীসহ সাবেক এমপি শিখরের নামে দুদকের দুই মামলা খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা : ফিরোজার সামনে নেতাকর্মীদের ভিড় সিলেটে তাফসির মাহফিল বৃহস্পতিবার, প্রধান আলোচক মিজানুর রহমান আজহারি রংপুরের পাঁচে পাঁচ, ঢাকার টানা চার হার কুয়েটে ১০৬৫ আসনের বিপরীতে ২৪ হাজার ৫২৭ শিক্ষার্থী কুখ্যাত গুয়ানতানামো কারাগার থেকে মুক্তি ১১ ইয়েমেনির ৫ মাসের অর্জনে খুশি নয় বাংলাদেশ ব্যাংক : মুখপাত্র শিখা জানা গেল কেরানীগঞ্জ থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের পরিচয় সচিবালয়ের সামনে পুলিশের সাথে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়ি, জমি ও ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ ইবির পাঠ্যসূচিতে যুক্ত হচ্ছে জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস

সকল