০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ৬ রজব ১৪৪৬
`

ভয়ঙ্কর রূপে তালিকাভুক্ত ৯৭৯ ছিনতাইকারী

-


রাজধানীর আটটি জোনের ৫০ থানায় ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যের কারণে অসহায় হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ। এমনকি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের পাশাপাশি খোদ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরাও। অনেকের প্রাণ গেছে ছিনতাইকারীদের হাতে। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ৯৭৯ জন ছিনতাইকারীর তালিকা করেছে। তালিকায় থাকা ছিনতাইকারীদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো থানায় মামলা রয়েছে। ওই তালিকা যাদের নাম এসেছে তারা প্রত্যেকেই ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। ওই তালিকায় টঙ্গীর পূর্ব ও পশ্চিম এবং সাভারের আশুলিয়া এলাকায় কয়েকজনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এ প্রতিবেদনে নিরাপত্তা এবং ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হলো না।
তালিকা বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা তথ্য সূত্রে জানা গেছে, তালিকায় মতিঝিল ও ওয়ারী জোনে রয়েছে ২১২ জন ছিনতাইকারীর নাম। তার মধ্যে শাহজাহানপুর থানায় ১৮ জন, মতিঝিল থানায় ২৪ জন, যাত্রাবাড়ী ৫১ জন, ডেমরায় ৯ জন, সূত্রাপুরে ১৭ জন, রামপুরায় ২৪ জন, শ্যামপুরে ১৩ জন, কদমতলীতে ১২ জন, পল্টনে ৮ জন, সবুজবাগে ৮ জন, মুগদায় ২৪ জন।

মিরপুর-তেজগাঁও জোন : তালিকায় থাকা এই দুই জোনে রয়েছে সক্রিয় ৩৮৬ জন ছিনতাইকারী। যারা নিয়মিত ছিনতাইয়ের সাথে অন্যান্য অপরাধেও জড়িত। রাজধানীর যে কয়টা বিপজ্জনক স্থান রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জোন হলো মোহাম্মদপুর এলাকা। এই এক থানায় সক্রিয়ভাবে ছিনতাইয়ে জড়িত রয়েছে ২০৫ জন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তেজগাঁওয়ে ২০ জন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকায় একজন, মিরপুর মডেল থানা এলাকায় ১৪ জন, দারুসসালাম থানা এলাকায় ৩৩ জন, শাহআলী এলাকায় ৫৯ জন, পল্লবী এলাকায় ৫৯ জন ও রূপনগর এলাকায় রয়েছে ৫২ জন।

উত্তরা ও গুলশান বিভাগ : গোয়েন্দাদের করা তালিকায় এই জোনে রয়েছে ১৬৪ জন ছিনতাইকারীর নাম। তারা সাবাই ছিনতাইয়ের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে ছিনতাইসহ মাদক কারবার এবং সেবনের অভিযোগ। তালিকায় দেখা গেছে, বিলাসবহুল ও ডিপ্লোমেটিক এলাকায়ও ছিনতাইকারীদের স্পট রয়েছে। গুলশান এলাকায় সক্রিয়ভাবে ১২ জনের নাম পেয়েছে গোয়েন্দারা। এই তালিকায় বানানী থানা এলাকায় রয়েছে ১১ জন ছিনতাইকারীর নাম। এ ছাড়া তুরাগ এলাকায় ৯ জন, দক্ষিণখান এলাকায় ২১ জন, উত্তরখান এলাকায় ১ জন, খিলক্ষেত এলাকায় ২ জন, কাফরুল এলাকায় ২৬ জন, বিমানবন্দর এলাকায় ১১ জন, উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানা এলাকায় রয়েছে ১০ জন, বাড্ডায় ৫ জন। এই তালিকায় টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকায় রয়েছে ২৯ জন, টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকায় রয়েছে ২৯ জন এবং আশুলিয়া থানা এলাকায় রয়েছে ২৭ জন ছিনতাইকারীর নাম। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গী ও আশুলিয়ার যে নামের তালিকা করা হয়েছে তারা উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর এবং বিমানবন্দর এলাকায় সক্রিয়ভাবে ছিনতাইয়ের পর তারা টঙ্গী ও আশুলিয়া চলে যায়।

রমনা ও লালবাগ বিভাগ : গোয়েন্দাদের তালিকায় রমনা ও লালবাগ বিভাগে ২১৭ জন ছিনতাইকারীর নাম উঠেছে। সেই তালিকা অনুযায়ী বংশাল এলাকায় রয়েছে ৫৩ জন, কতোয়ালি এলাকায় রয়েছে ৯২ জন, কামরাঙ্গীর চরে ৩২ জন, হাতিরঝিলে ৭ জন, লালবাগে ৩ জন, চকবাজারে ১০ জন, ধানমন্ডিতে ৮ জন, হাজারীবাগে ১ জন, নিউ মার্কেটে ৬ জন, কলাবাগানে ৫ জন ছিনতাইকারীর নাম রয়েছে। তাদের বেশির ভাগই ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের আসামি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, টঙ্গী ব্রিজ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ব্যস্তময় সড়কে- প্রতি রাতে ছিনতাই হয়। এখানে মাঝে মাঝে দিন-দুুপুরেও প্রাইভেট কার ও বাসের যাত্রীদের কাছ থেকেও ছোঁ মেরে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এখানে সার্বক্ষণিক টহল পুলিশ থাকলেও নীরব ভূমিকায় থাকে পুলিশ।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, ছিনতাইকারীদের উৎপাত থেকে বাদ যায়নি কঠোর নিরাপত্তার কূটনৈতিক এলাকা গুলশান, বনানী ও বারিধারা পর্যন্ত। এ ছাড়া খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, হাতিরঝিল, শাহজাহানপুর, হাজারীবাগ, চকবাজার, শাহ আলী ও ইসিবি চত্বরে ছিনতাইকারীরা উৎপেতে বসে থাকে। সুযোগ পেলেই ছোঁ মেড়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

ভুক্তভোগীদের মতে, দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই ওদের ছিনতাইকারীরা তৎপর হয়। তাদের হামলায় অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের দেয়া পরিসংখ্যানেই দেখা যায়- গত ৫ আগস্টের পর থেকেই দুর্বল নিরাপত্তার কারণে ছিনতাইকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস থেকে ছিনতাইকারীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সর্বস্ব কেড়ে নিতে মারমুখী হয়ে উঠছে ছিনতাইকারীরা। গত পাঁচ মাসে ঢাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ গেছে ৯ জনের। আর এ সময়ে ছিনতাই-অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮৬৪ ছিনতাইকারী গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানা গেছে, শুধু রাজধানীই নয়- সারা দেশেই বেড়েছে ছিনতাই। সে তুলনায় থানায় নথিভুক্ত হচ্ছে না। অধিকাংশ ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করছেন না, কেউ কেউ হারানো বলে জিডি করছেন। যারা শারীরিকভাবে জখম, মারধর কিংবা নিহতের মতো ঘটনা ঘটছে- কেবল সেসব ক্ষেত্রে হচ্ছে মামলা বা অভিযোগপত্র জমা পড়ছে।

এদিকে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। রাজধানীতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে প্রাণ রক্ষার্থে খুইয়েছেন ক্যামেরা, মোবাইল, টাকা আর ব্যাগ। আহত হয়েছেন বেশ ক’জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, জাগো নিউজের সাংবাদিক মফিজুল ইসলাম সাদিক, সাংবাদিক পার্থ, বৈশাখীর সিনিয়র রিপোর্টার ও অপরাধবিষয়ক অনুষ্ঠান নির্মাতা জে ইউ জুবায়ের, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ফটো সাংবাদিক মো: নাঈমুর রহমানসহ আরো অন্তত ৭ জন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে শুধু ছিনতাকারীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। এ অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার আসামি হিসেবে ৮৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে ২৩ জন, অক্টোবরে ৯১, নভেম্বরে ১৪৮ ও সর্বশেষ ডিসেম্বরে রেকর্ড ৫৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ ঝুঁকিপূর্ণ, জনবহুল ও ছিনতাইপ্রবণ এলাকায় ডিবি পুলিশ কাজ করছে। আবাসিক এলাকার অলিগলিতে টহলে থাকছে থানা পুলিশ। কোথাও কোনো ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ছুটে যাচ্ছে পুলিশ। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও সেনাবাহিনীও কাজ করছে বলে তিনি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement
অভ্যুত্থান নিয়ে চলচ্চিত্রের নির্মাণ কাজ জুনের মধ্যে শেষ করার আহ্বান উপদেষ্টা ফারুকীর রাবি ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি মোস্তাকুর, সেক্রেটারি মুজাহিদ মুন্সীগঞ্জে সেতু থেকে লাফ দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বৃত্তির তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ সাফা মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যাডহক কমিটির সভাপতি আল আমিন শান্তিতে ঘুমাতে চাইলে অবৈধ ইসরাইলিদের ফিলিস্তিন ত্যাগ করতে হবে : ইয়েমেন কিশোরগঞ্জে উন্নত পদ্ধতিতে ইট উৎপাদন বিষয়ে মতবিনিময় কুয়কাটায় শুরু হতে যাচ্ছে মাসব্যাপী ‘পর্যটন মেলা’ প্লাস্টিকের বোতল স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করছে স্ত্রীসহ সাবেক এমপি শিখরের নামে দুদকের দুই মামলা খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা : ফিরোজার সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়

সকল