০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ৬ রজব ১৪৪৬
`

পদ ছাড়াই রূপালী ব্যাংকে ঢালাও পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু

মাসে বাড়তি ব্যয় সাড়ে ৪ কোটি টাকা
-

রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপকের (এজিএম) পদ রয়েছে ৭০টি। কিন্তু পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৪৫০ জনের। আর ডিজিএমের শূণ্য ১০ পদের বিপরীতে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৮০ জনের। যার বেশির ভাগই পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগী সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের নেতাকর্মী ও সমর্থক। এদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। রয়েছে একাধিক কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট তদন্ত প্রতিবেদনও। এমনিভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের হাজারখানেক কর্মকর্তার ঢালাও পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করেছে রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের আগে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তাদের অনেকেও হয়রানিমূলক বদলি, পদাবনতি ও ন্যায্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এখন বঞ্চিতদের কথা বলে আওয়ামী লীগের নিয়োগকৃতদেরই ঢালাও পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। তাদের মতে, যাচাই-বাছাই করে পদোন্নতি দেয়া হলে সর্বোচ্চ পদোন্নতির তালিকাভুক্তিদের থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পদোন্নতি দিতে হয়। আর ঢালাও পদোন্নতি দেয়া হলে শুধু এজিএমএমদেরই ব্যাংক সুদে গাড়ী কেনা বাবদ ১৩৫ কোটি টাকা ঋণ দিতে হবে। যেখানে আমানত সংগ্রহ করা হচ্ছে ১০ শতাংশ সুদে। এভাবে মাসে শুধু গাড়ি বাবদই অবচয়সহ বাড়তি ব্যয় হবে সাড়ে চার কোটি টাকা। যা তারল্য সঙ্কটে থাকা রূপালী ব্যাংককে আরো দুর্বল করে দেবে।

রূপালী ব্যাংকের একজন ভুক্তভোগী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিছু বঞ্চিতদের উদ্ধারের কথা বলে সুপার নিউমারির নামে বাছ-বিচারহীন প্রমোশন দেয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য ফ্যাসিস্টদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। এসব প্রমোশন বাস্তবায়ন হলে ব্যাংক সেক্টরের বারোটা বাজবে। আগামী ১০ বছরে যে সরকারই আসুক না কেন, ব্যাংক সেক্টরে আর প্রমোশনের কোনো সুযোগ থাকবে না। আওয়ামী শাসনামলে অবৈধভাবে ছাত্রলীগের কোটায় (২০১০-২০২১ সালের মধ্যে) রূপালী ব্যাংকে নিয়োগপ্রাপ্ত অফিসার ও সিনিয়র অফিসারদের অধিকাংশই বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং স্বাধীনতা ব্যাংকের পরিষদের নেতা। প্রমোশনবঞ্চিত কর্মকর্তা নামে এবার তারা পুরস্কার পাচ্ছে নির্বাহী পদে। সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকে ইতোমধ্যে সুপারনিউমারারির নামে পদোন্নতি দেয়ার উদাহরণের দোহাই দিয়ে রূপালী ব্যাংকেও সহস্রাধিক কর্মকর্তা বাগিয়ে নিচ্ছেন এ পদোন্নতি। অপর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং সেক্টরে শুরু হয়েছে প্রোমোশন লুট। বঞ্চিত কোটায় যাদের প্রমোশন দেয়া হচ্ছে এরা সবাই আওয়ামী লীগের দোসর এবং বিগত আমলে ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত। এদের মধ্যে অনেকেই হলের সভাপতি ও সেক্রেটারি পদবীধারী যারা গেস্ট রুম অত্যাচারের সাথে সরাসরি জড়িত।

এরাই বিগত ১৫ বছরে ব্যাংকিং সেক্টরে দাপিয়ে বেড়িয়েছে এবং মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে হামলাসহ অনেক অপকর্মের হোতা। এরা ব্যাংকিং সেক্টরে বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ নামে দুটি রাজনৈতিক দল খুলে গত ১৫ বছর বাংকিং খাতে পদোন্নতি/বদলী/ঋণ বাণিজ্যসহ সব ধরনের অপকর্ম চালালেও এখন আবার জাতীয়তাবাদী কিছু নেতাকে পদোন্নতি প্রদানের নামে ঢালাওভাবে সুপারনিউমারারি ভিত্তিতে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। এতে ১০ শতাংশ লাভবান হবে জাতীয়তাবাদী সমর্থক আর ৯০ শতাংশ আওয়ামী বাকশালীরা। রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকের নয়া নির্বাহীদের জন্য এ বছর সুদবিহীন প্রতিটি ৩০ লাখ টাকা দামের কমপক্ষে ২০০০ টি গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে যার জন্য ব্যাংকগুলোকে ব্যয় করতে হবে ৬০০ কোটি টাকা। শুধু রূপালী ব্যাংকেরই ৪৫০ জনকে এজিএম পদোন্নতি দেয়া হলে স্বল্প সুদে ঋণ দিতে হবে ১৩৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ মাসে সর্বনিম্ন ৪০ হাজার টাকা, গাড়ির অবচয় বাবদ মাসে ২৫ হাজার টাকা, ৩০ লাখ টাকার আমানতের সুদ বাবদ ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। ফলে প্রতিজন নির্বাহীর জন্য ব্যাংকগুলোকে মাসে প্রায় অতিরিক্ত ১ লাখ টাকা করে ব্যয় করতে হবে। সাড়ে ৪০০ এজিএমের পেছনে ব্যয় হবে সাড়ে চার কোটি টাকা। যা এ মুহূর্তে টাকার সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলোর পক্ষে নির্বাহ করা সম্ভব হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement