বাংলাদেশী রোগী কমায় বিপাকে ভারতের চিকিৎসাশিল্প
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৩
বাংলাদেশীদের জন্য ভারতের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেশটির চিকিৎসাশিল্পকে বিপাকে ফেলেছে। ভারতের বার্ষিক ২০ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক রোগীর ৬০ শতাংশই বাংলাদেশের। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্টের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমে গেছে। ভারতের চিকিৎসাকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্প ২০২৩ সালে আনুমানিক ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ছিল। বাংলাদেশ থেকে অন্তত ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করে রোগীরা প্রতি বছর ভারতে চিকিৎসার জন্য যায়। কলকাতার নারায়না সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় আলজাজিরাকে বলেছেন যে, তার হাসপাতালে বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা অন্তত ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী রোগের চিকিৎসা করা হাসপাতালগুলো আরো বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশের নিকটতম শহর এবং সাংস্কৃতিকভাবে একই রকমের কলকাতার হাসপাতালগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কলকাতার ৫০০ শয্যার মাল্টি স্পেশালিটি পিয়ারলেস হাসপাতালে দৈনিক বহির্বিভাগের রোগীর পরিদর্শন ১৫০ থেকে ৩০-এর নিচে নেমে এসেছে। অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথকেয়ার প্রোভাইডার অব ইন্ডিয়ার আলেকজান্ডার থমাসের মতে, বেঙ্গালুরুতে নারায়না হেলথ, চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো এবং ভেলোরের খ্রিষ্টান মেডিক্যাল কলেজের অন্যান্য প্রধান হাসপাতালগুলো এ ধরনের বাংলাদেশী রোগী হারানোর বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতীয় ভিসা বিধিনিষেধের কারণে দেশের রোগীরা একটু সমস্যায় পড়েছেন। দুই সরকার তাদের বৃহত্তর কূটনৈতিক উত্তেজনা থেকে ভিসা ইস্যুকে দূরে রাখতে না পারলে প্রতিবেশীরা বাজে পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে। এই ধরনের অবস্থা দুই জনসাধারণের মধ্যেও একটি নেতিবাচক মানসিকতা সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ৯ ডিসেম্বর ঢাকা সফরের পরও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছেন রোগী ও ভিসা এজেন্টরা। ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে নয়াদিল্লির সমালোচনা বিষয়ে মন্তব্যের জন্য আলজাজিরার অনুরোধে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকায় ভারতের হাইকমিশন সাড়া দেয়নি। কিন্তু ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সাথে বৈঠকের সময়, ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা দাবি করেছিলেন যে, বাংলাদেশে ভারতের ভিসা প্রদান এখনো ‘সম্ভবত অন্য সব দূতাবাসের সম্মিলিত’ ভিসাকে ছাড়িয়ে গেছে। ভারতীয় সাংবাদিক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘উভয় পক্ষই সুসম্পর্কের কথা বলে, কিন্তু বাস্তবতা অন্য ইঙ্গিত করে।
এখন অনেক বাংলাদেশী রোগী থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তুরকিতে চিকিৎসার বিকল্প খুঁজছেন। ব্যাংককভিত্তিক চিকিৎসা ও ট্যুর অপারেটর সংস্থা Suea Noi Fit & Fly-এর ব্যবস্থাপক মাজাদুল নয়ন আলজাজিরাকে বলেন, আগস্টের আগের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে ব্যাংককে চিকিৎসা অনুসন্ধান দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদিও প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী ভারতীয় ভিসা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার পরে থাইল্যান্ডকে বিবেচনা করে।’ (সংক্ষেপিত)