চালের দাম না কমলেও স্বস্তি সবজির বাজারে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫
আমন ধান কাটার মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরেই ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার। প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। এদিকে আমদানিতে কর অব্যাহতির পরও প্রভাব পড়েনি চালের দামে। উল্টো বাড়ানো হয়েছে দাম। এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। তবে সবজির বাজারে দেখা দিয়েছে স্বস্তি। ভরা মৌসুমে নি¤œমুখী অধিকাংশ সবজির দাম। এতে ক্রেতাদের মধ্যে এসেছে স্বস্তি।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মিনিকেট চালে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। অন্যান্য চালের দামেও ঊর্ধ্বগতি। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ছিল ৭৫ টাকা, যা বর্তমানে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেটের পর নাজিরশাইল চালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি নাজিরশাইল ছিল ৭০ থেকে ৭৮ টাকা, গতকাল বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৬ টাকায়।
এছাড়া দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। ২ থেকে ৫ টাকা দর বেড়ে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। এ ছাড়া এ সময় মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা) কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মোটা চাল কিনতে ক্রেতাদের খরচ করতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। এ ছাড়া বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি পুরনো আটাশ ৬৫ টাকা, পাইজাম ৬০ টাকা, কাটারিভোগ ৮৫ টাকা, বাসমতী ৯৪ থেকে ৯৮ টাকা, পোলাওয়ের চাল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ও আমন ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর-৬ নম্বর বাজারে চাল ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, এখন আমনের মৌসুম। ভারত থেকেও চাল আসছে। তবু বাজার চড়া। কোনো কারণ ছাড়াই মিলাররা দাম বাড়াচ্ছেন। রমজান সামনে রেখে তারা চালের দাম বাড়াচ্ছেন বলে তিনি মনে করেন। মিল পর্যায়ে কড়া তদারকি প্রয়োজন বলে তারা পরামর্শ দেন।
মিরপুর-১ নম্বর বাজারের চাল ব্যবসায়ী আজিজ মিয়া বলেন, কয়দিন আগে নতুন ক্ষেত থেকে ধান উঠানো হয়েছে। ধানের দাম বাড়ছে এমন অজুহাতে মিলাররা চালের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছেন। এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে চাল আমদানির ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রেখে বাকি আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে এনবিআর। তবুও আমদানি করা চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। আমদানি করা মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকার ওপরে। মুসলিম বাজারের চাল বিক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, কোথায় কী ভ্যাট-ট্যাক্স কমলো, সেটা তো আমরা জানি না। আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়। বেশিতেই বিক্রি করতে হয়।
চালের বাড়তি দামে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। মুসলিম বাজারে কথা হয় চাকরিজীবী আব্দুল করিমের সাথে। তিনি বলেন, বাজারে একটা জিনিসের দাম কমলে দুইটার দাম বাড়ে। শীতের এই সময়ে চালের দাম বাড়ার কথা না। কেননা নতুন চাল উঠছে বাজারে। তবুও কেন চড়া চালের দাম। এ জন্য সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
এ দিকে ফুলকপি, মুলা, শালগমসহ শীতকালীন সবজিতে ভরপুর রাজধানীর বাজার। দামও ক্রেতাদের হাতের নাগালে। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে সবজির দাম। তবে ডিম, মাছ ও মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, সহনীয় মূল্যে বিক্রি হচ্ছে শীতের সবজি। গত সপ্তাহের ৪০ টাকা কেজি মুলা আজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, ৬০ টাকার গোল বেগুন ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৩০ টাকা থেকে ৪০, ৪০ টাকার কলার হালি ৩০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১০ টাকা কমে ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শালগম ৪০ টাকায, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শসা ও টমেটো ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া করলা, পটোল, ঝিঙা ও ধুন্দল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, লালশাক, পালং ও কলমি শাক প্রতি আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে আলু ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের ৫৫-৬০ টাকার আলু প্রতি কেজিতে ৫ টাকা কমে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী পেঁয়াজ প্রতি কেজিতে ৫ টাকা কমে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশী রসুন ২৫০ টাকা ও ভারতীয় রসুন প্রতি কেজি ২২০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। বোতলজাত ৫ লিটারের সয়াবিন ৮৫০ এবং এক লিটার ১৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া খোলা পামওয়েল প্রতি লিটার ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়। প্রতি ডজন ডিম ১৩০- ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের ৩৫০ টাকার সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গরুর গোশতের কেজি কেনা যাচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকায়। অপরিবর্তিত দেখা গেছে মাছের বাজার।
বাজারে ছোট রুই প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, পাবদা আকারভেদে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙ্গাশ ২০০ টাকা, কৈ আকারভেদে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা