০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১, ৪ রজব ১৪৪৬
`
বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

রাজনৈতিক বিতর্কে চাপা পড়ে যাচ্ছে আ’লীগের লুটপাট-চিত্র

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক তর্কবিতর্কে আওয়ামী লীগের দুর্নীতির বিষয়গুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ যে লুটপাট করে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে, অর্থনীতিকে ফোকলা করে দিয়েছে তা মানুষ ভুলে যাচ্ছে। অহেতুক বিতর্কে তারাই সুবিধা পাচ্ছে। গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘গত ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট ও পাচার’ শীর্ষক বিশ্লেষণ প্রতিবেদন তুলে ধরতে বিএনপির ডাকা সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের লুটপাটের চিত্র ভালোভাবে তুলে ধরার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ করেন। তার মতে হাসিনা সরকার বিদ্যুৎ খাতেই বেশি দুর্নীতি করেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংশ্লিষ্ট সব চুক্তিই রিভিউ করা হবে। আমরা পুরো বিষয়গুলো রিভিউ করে যা যা প্রয়োজনীয় সেটা করব।

বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ, যিনি চারদলীয় জোট সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সম্পাদিত সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়ে টুকু বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে রিভিউ মানে বাতিল না। আমরা দেখবো যে, কোন কোন জায়গায় দুর্বলতা ছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতে ম্যাজিক দেখাতে চেয়েছিল। সেই ম্যাজিক করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের পকেট কেটে নিয়ে গেছে। তারা বিদ্যুৎকে একটা ব্যবসার খাত বানিয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল যে, এই খাত থেকে কুইক মানি বানানো যায় কোনো হিসাব না দিয়ে। কারণ বিদ্যুৎ তো ‘হাওয়া’ এটি দেখা যায় না।

তিনি বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জ কোন মেসিনে কত? কেউ কি এটাকে আইডেন্টিফাই করেছে এবং সেই মেসিনগুলোর এফিসিয়েন্সি কী, এগুলো কেউ বিশ্লেষণ করেও না, দেখেও না। এই ক্যাপাসিটির নামে তারা ১৫ বছরে অনেক টাকা নিয়ে গেছে। প্রায় এক লাখ কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে।
টুকু বলেন, বিদ্যুৎ খাতের প্রত্যেকটা চুক্তি প্রকাশ করার দাবি করছি। জনগণের অধিকার আছে এসব বিষয় জানার। তারা কিভাবে কন্ট্রাক্টগুলো করেছে এটা পাবলিক হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হলো জনগণের কাছে এই কন্ট্রাক্টগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া।
বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি-লুটপাট : দুর্নীতির পরিসংখ্যান চিত্র তুলে ধরে টুকু বলেন, বিদ্যুৎ খাতে ১৫ বছরে মোট খরচ হয়েছে ২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার, বর্তমান বিনিময় হারে যা ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জে লুটপাট হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে হয়েছে ১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ এ হয়েছে ১৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। তার অর্থ হলো এই যে, প্রাইভেট সেক্টরে যে প্ল্যান্টগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলো চলে নাই এবং এই টাকাগুলো তাদেরকে (কোম্পানি) পেমেন্ট করেছে। এভাবে দেশের মানুষের কাছ থেকে জাস্ট টাকা লুট করে নেয়া হয়েছে।

সাবেক এই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগের মেশিনগুলো খারাপ। খারাপ মেশিন নিয়ে এসে টাকা কামাই করে চলে গেছে। আর এই লুটপাটের অংশীদার কারা কারা ছিল? ক্যাপাসিটি চার্জের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির মধ্যে সামিট গ্রুপ নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, অ্যাগ্রো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা এবং আরপিসিএল নিয়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। তিনি বলেন, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট আসে সাধারণত আপৎকালীন বিদ্যুৎ সঙ্কট নিরসনের জন্য। এই প্ল্যান্ট দ্ইু বছরের, সেটা ১৫ বছর পর্যন্ত চলছে এবং এসব কুইক রেন্টালে ৭৫% বিনিয়োগ হয়েছে উইদাউট রিটার্ন। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির নামে ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা।

যেকোনো সময় মুখ থুবড়ে পড়বে : সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুতে যেসব উন্নয়ন করা হয়েছে এই উন্নয়ন টেকসই না। যেকোনো সময়ে মুখ থুবড়ে পড়বে। বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির ধরন দেখার পর বোঝা যায় যে তারা বিদ্যুৎ খাতকে ফোকলা করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এখন যদি আমরা টাইট না করি, তাহলে ২০২৭ সালে আমরা বিপদে পড়ে যাবো। ফরেন এক্সচেঞ্জ ঘাটতি হয়ে যাবে, টাকা ছাপানো হবে, এতে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে।
রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতি : টুকু বলেন, রূপপুরে পারমাণবিক প্রকল্পের ৫০০ বিলিয়ন ডলার তারা (শেখ হাসিনাসহ তার পরিবার) নিয়ে গেছে। সেটা নিয়ে আরো তদন্ত হচ্ছে লন্ডনে, টিউলিপের ব্যাপারে।

প্রিপেইড মিটার বাণিজ্যে সিন্ডিকেট : টুকু বলেন, এটা তাদের একটা সিন্ডিকেট। ৭১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহকের কাছে মিটার পৌঁছানোর কথা বলে বিরাট অঙ্কের একটা দুর্নীতি হয়েছে। প্রায় ৩৬ কোটি টাকা পাচার করেছে। ১ হাজার ২৩৫ কোটি অতিরিক্ত খরচ করেছে যার মধ্যে দুর্নীতি করেছে ৬১৭ কোটি টাকা। মিটার সরবরাহ ও স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে ছিল ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সেটা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা।
এলএনজি প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কোম্পানিসহ ‘একটি চক্র’ লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিদ্যুত খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো, দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, নিয়মিত বিদ্যুৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
রিকেলটনের ২৫৮, দক্ষিণ আফ্রিকার রান পাহাড় ঘুরে দাঁড়ালো ম্যানসিটি, ৬৭ দিন পর তুলে নিল টানা দ্বিতীয় জয় রাতের ভোটের ৩০ জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করছে সংস্কার কতটা তার ওপর জটিলতা না থাকলে মঙ্গলবার বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ধ্বংসস্তুপ থেকে অর্থনীতি টেনে তোলার চ্যালেঞ্জে অন্তর্বর্তী সরকার সম্মিলিত কল্যাণমুখী সরকার দেশের কল্যাণ আনবে : ডা: শফিক ছাত্রদলকে পড়ায় মনোযোগী হতে বললেন মির্জা ফখরুল বিএফআইইউ প্রধান হতে এস আলম ও আ’লীগের সুবিধাভোগীদের দৌড়ঝাঁপ পদ ছাড়াই রূপালী ব্যাংকে ঢালাও পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন নিম্ন আদালতের ৫০ বিচারক

সকল