ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের বিচার সম্পূর্ণ সাজানো ও মিথ্যা ছিল
শেখ হাসিনার বিচার স্বচ্ছভাবেই সম্ভব : ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক- ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০, আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৭
দেশের খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের বিচার সম্পূর্ণ সাজানো ও মিথ্যা ছিল। সরকারের নির্বাহী কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় তাদের ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এর পুনর্বিচার হওয়া উচিত, যাতে স্বজনরা জানতে পারেন যে তাদের পিতা, ভাই বা আত্মীয় নিরপরাধ ছিলেন।
এ ছাড়া ব্যারিস্টার রাজ্জাক মনে করেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার অপরাধের বিচার স্বচ্ছভাবেই সম্ভব। দেশের আইনে স্বচ্ছভাবে এই বিচার হলে সেটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণীয় হবে।
দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক কয়েকদিন আগে দেশে ফিরেন। নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর ও মাল্টিমিডিয়া সম্পাদক যুবরাজ ফয়সল। নিচে সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হলো-
প্রশ্ন : প্রায় ১১ বছর সময় কাটিয়েছেন বিদেশে। দেশে ফিরে প্রথম কী লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করতে চান?
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক : দেখুন আমি ২০১৩ সালে মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য লন্ডনে গিয়েছিলাম। তখন কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছিল, হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট বন্ধ। বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করল। আমাকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করে দিলো।
তখন আমি লন্ডনে গিয়ে কিছু কূটনৈতিক কাজ করলাম। প্রশান্ত মহাসাগরের এপার ওপারে গেলাম। আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ডসহ আরো নানা দেশে ঘুরে বেড়ালাম। ৫ বছর পর আমি আমার আইনি পেশায় ঢুকে গেলাম। সেখানে আমার পেশাগত কাজ করে মনে এক ধরনের সন্তুষ্টি পেলাম। কি কারণে সেটা পরে বলব। কার্যত আমি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটা ছায়াযুদ্ধ শুরু করলাম।
আমি বিএনপির কেসগুলো নিয়ে লড়াই শুরু করলাম। জামায়াতের কেসগুলো নিয়ে লড়লাম। সেখানে ৬০ শতাংশ মামলায় আমি জিতেছি। আমি এই মামলাগুলোকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটা লড়াই হিসেবে দেখেছি। লন্ডনের কোর্টগুলো আমাকে সাপোর্ট করত। আমি জামায়াতের নায়েবে আমির একেএম নাজির আহমদের ছেলের রাজনৈতিক আশ্রয় সংক্রান্ত মামলার কৌঁসুলি ছিলাম। সেখানে আইনি লড়াইয়ে র্যাবকে জার্মানির গেস্টাপোর সাথে তুলনা করলাম। লন্ডনের কোর্ট এই যুক্তি গ্রহণ করল। বাংলাদেশে হলে আমাকে সুপ্রিম কোর্ট থেকেই হয়তোবা উঠিয়ে নিয়ে যেত। সুতরাং ১১ বছরে আমি আমার পেশা দিয়ে প্রবাসে লড়াই করেছি। আমার সন্তুষ্টির জায়গা এটাই।
গত ১৫ বছরে দেশে যদি শুধু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত থাকত, আদালত প্রকৃত স্বাধীন থাকত, তাহলে জামায়াতের এত বড় বড় নেতাকে ফাঁসি দেয়া সম্ভব হতো না, বিএনপিকে এত অপদস্থ হতে হতো না, খালেদা জিয়াকে নিয়ে এত টানা হেচড়া হতো না। সুতরাং আইনের শাসন ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত হতে হবে।
২০০১ সালে আমি ইটিভি নিয়ে কেস লড়েছি, আমার বিরুদ্ধে ছিল বাংলাদেশের বিখ্যাত তিনজন আইনজীবী। কিন্তু এতকিছুর পরও সঠিক বিচার হয়েছে। বিচারক কারো চেহারা দেখে রায় দেয়নি। কারণ তখন আইনের শাসন ছিল দেশে। আমি আরো কেস লড়েছি, অধ্যাপক গোলাম আযমের কেস লড়েছি, সড়ক আন্দোলনের কেস লড়েছি। অসংখ্য কেস আল্লাহ আমাকে দিয়ে করিয়েছেন। সুতরাং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য যা কিছু করা দরকার আমি তাই করব।
প্রশ্ন : ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবকে আপনি কিভাবে দেখেন। এটি গণ-অভ্যুত্থান নাকি বিপ্লব ছিল? দেশের রাজনৈতিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তারুণ্যের প্রতি আপনার পরামর্শ কী থাকবে ।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক : ২৪ এর জুলাই আন্দোলনকে অনেকটা বিপ্লব বলা যায়। এর নেতৃত্বে ছিল ছাত্ররা। আর পেছন থেকে সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করেছে। এটাকে ফ্রেঞ্চ রেভুলেশনের সাথেও তুলনা করা যায়। জার্মানে হিটলারের নৎসি বাহিনী পুরো পৃথিবীতে ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তিন পরাশক্তি দাঁড়িয়েছে। আমেরিকা আর ইংল্যান্ড এক হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের সাথে বিরোধ থাকা সত্ত্বেও তারা ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে ঐকমত্য পোষণ করেছে। জার্মানির নাৎসি বাহিনীর সাথে অনেক মিল রয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের।
এই হাসিনার বিরুদ্ধেই ছাত্ররা খালি হাতে বুক পেতে দিয়েছে। ছাত্রদের অর্ধেক কাজ শেষ, তবে বাকি কাজ তরুণদেরকেই করতে হবে। আমার মনে হয় তাদের সদিচ্ছা রয়েছে। তবে এখন রাজনীতিতে গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। আমার বিশ্বাস এই ব্যাপারে তারা সক্ষম। আগে তো সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকার ছিল, এখন তো সেটা নেই। এই সরকারের যে কয়জন আছে, তাদের দুই একজন ছাড়া বেশির ভাগই অনভিজ্ঞ। বিপ্লব হওয়ার পর সরকার কিভাবে পরিচালিত হবে, সেটা নিয়ে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে। এক্ষেত্রে জনগণের উচিত সরকারকে সহায়তা করা। ধৈর্য ধরা। রাজনৈতিক দল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবে। তবে তার আগে কিছু সংস্কার করতেই হবে।
প্রশ্ন : অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক : তিনটি বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্য থাকতেই হবে। প্রথমত, স্বাধীনতার ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলকে এক হতে হবে। যে দলেই থাকুক না কেন, ডান বাম অথবা মধ্যম সবাইকে এক থাকতে হবে। ইংল্যান্ডে লেবার পার্টি, কনজারভেটিভ পার্টি সবার নিজেদের আদর্শ ভিন্ন থাকতে হলেও স্বাধীনতার ব্যাপারে সবাই এক।
দ্বিতীয়টি হলো, গণতন্ত্রের শাসন নিশ্চিত করা। শেখ হাসিনা যেটা করেছে সেটা ৩০০ বছরেও এ দেশে কেউ করেনি। ব্রিটিশরা ২০০ বছর শাসন করেছিল, প্রথম ১০০ বছর তারা একরকমভাবে চালিয়েছে, পরে কিন্তু তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। এরপর ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হওয়ার ১২ বছর আগে ১৯৩৭ সালে ইন্ডিয়া অ্যাক্ট পাস করে স্বাধীন বিচার বিভাগ, সংবাদপত্র স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। তখন অনেকটাই গণতন্ত্র উদ্ধার হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে আমরা কই চলে গিয়েছি। আর তৃতীয়টি হলো, অর্থনৈতিক উন্নতি। এই তিনটি বিষয়ে সবাইকে এক থাকতে হবে। দেশ এবং জাতির বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই তিনটি বিষয়ে এক থাকতে হবে।
প্রশ্ন : আপনার বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। আপনার মতে, জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কী হতে পারে? ইসলামপন্থীদের নিয়ে কি কোন ধরনের ঐক্য গড়ে তোলা যায়?
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক : বৃহত্তর স্বার্থে ইসলামী রাজনৈতিক দলের ঐক্যের প্রয়োজন। আমাদের এখনো ক্রাইসিস শেষ হয়ে যায়নি। তিউনিশিয়ায় বিপ্লবের পর ক্রাইসিস হয়েছে। সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ চলে যাওয়ার পরও ক্রাইসিস চলছে। বাংলাদেশে ইসলামীপন্থীদের একটা সাপোর্ট রয়েছে। সেটা কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। ইসলামপন্থীদের উচিত এটা আরো বাড়ানো। কারণ ১০ শতাংশ, ১২ শতাংশ দিয়ে আপনি সরকার গঠন করতে পারবেন না। এজন্য আপনার প্রোগ্রামকে পরিবর্তন করতে হবে।
যেমনটা তুরস্ক করেছে, তিউনেশিয়ার আন নাহদা করেছে। বাংলাদেশ তো আর তিউনেশিয়া না, দেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষা নিতে হবে। আপনি একটা জিনিস মনে রাখবেন, আপামর জনসমর্থন ছাড়া আপনার উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। সুতরাং ইসলামী দলগুলোকে চিন্তা করা উচিত, আত্মসমালোচনা করা উচিত কেন আমরা ১২ শতাংশের বেশি জনসমর্থন পাচ্ছি না। সেভাবে চিন্তা করতে হবে, মানুষের কাছে যেতে হবে। প্রোগ্রামগুলোকে সেভাবে সাজাতে হবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কৌশলে কি কোন পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন। দলটিতে কী ধরনের সংস্কার আনা প্রয়োজন বলে আপনার ধারণা।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক : জামায়াতে ইসলামী একটা অভিজ্ঞ দল। আমরা মনে করি তারা তাদের প্রোগ্রামগুলোতে পরিবর্তন আনবেন। ষাটের দশকে যেভাবে প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়েছে সেটা ২০২৪ এ এসে ফলপ্রসূ হবে না। এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বিশ্ব এগিয়েছে। মানুষের চিন্তারও পরিবর্তন হয়েছে। তাই ইসলামী দলগুলোকে সেভাবে চিন্তা করতে হবে। আমি মনে করি জামায়াত অনেক অভিজ্ঞ একটি দল। তারা সেভাবেই পরিকল্পনা সাজাবে। ২৪ এর আন্দোলনে জামায়াত আর শিবিরের অনেক ভূমিকা রয়েছে। তারা মাঠে ভূমিকা রেখেছে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। তাদের নেতৃত্বের প্রশংসা করতেই হবে। এখন তারা কী কী পরিবর্তন আনবেন হবে সেটা তারা বুঝবেন। তাদের সেই প্রজ্ঞা রয়েছে। আমি মনে করি তারা এক্ষেত্রে সফল হবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিচার প্রক্রিয়াকে আপনি কিভাবে দেখেন? এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে অন্য কোনো দেশের হাত ছিল বলে মনে করেন কি?
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক : এই বিচার চলাকালে ৫ বছর আমরা ধৈর্যের সাথে কাজ করেছি। জামায়াত নেতাদের মামলাগুলো সামাল দিয়েছি। অনেকেই বলেছিল কোর্টরুম থেকে সরে আসতে। তবে আমরা সেটা করিনি, বারবার তাদের সামনে এটা প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছি যে ট্রাইব্যুনালে যে অভিযোগের বিচার হচ্ছে সেটা মিথ্যা, এর সারবত্তা কিছুই নেই। সেখানে স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থা বলতে তেমন কিছুই ছিল না। বিখ্যাত ব্রিটিশ ম্যাগাজিন ইকোনমিস্ট যেটা আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে সমানভাবে জনপ্রিয়, ২০১২ সালে এই বিচারব্যবস্থা নিয়ে একটি বিরাট প্রতিবেদন ছাপিয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই করা হয়। আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি, বিচার বিভাগ যদি ৫০% স্বাধীন হতো, তাহলে জামায়াতের নেতারা বেকসুর বা নির্দোষ প্রমাণ হয়ে খালাস পেয়ে বেরিয়ে আসত।
আমি শুধু আইনজীবীই ছিলাম না, কূটনৈতিক পর্যায়েও আমি কাজ করেছি। আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্ট, হোয়াইট হাউজ, কংগ্রেস সব জায়গায় যোগাযোগ করেছি, সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছে এই আইনে কোনো মানুষ বিচার পাবে না। এটা বিচারের নামে সম্পূর্ণ প্রহসন ছিল। এই আদালতের বর্তমানে যে প্রসিকিউশন রয়েছে সেটার ওপর আমার আস্থা রয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো, এখন জামায়াতের ৫ জন শীর্ষ নেতাকে বিচারিক হত্যার শিকার করা হলো এর কী কোনো প্রতিকার নেই? এর কি কোনো সমাধান নেই?
১৯৭৪ সালে বার্মিংহামে ৬ জন ব্যক্তিকে সাজা দেয়া হয়েছিল। সেই মামলা আবার ১৯৯৯ সালে চালু করা হয়। ২০০১ সালে সেই সাজা পরিবর্তিত হয়। আমি মনে করি, জামায়াতের বিরুদ্ধে এই হত্যা মামলা আবার পুনরায় শুরু হওয়া উচিত। বিচারকরা তখনো বলেছিল, এটার মধ্যে তেমন কিছুই নেই। আমাদেরকে ফাঁসির রায় দিয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে আমরা দিয়ে দিয়েছি। মামলার পুনর্বিচার হলে যাদেরকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, তাদের ভিক্টিম পরিবার অন্তত বলতে পারবে যে, এই বিচার সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল। সত্যিকার অর্থে তারা জানতে পারবে তাদের পিতা, ভাই কিংবা আত্মীয় নির্দোষ ছিল। আর বিচার বিভাগকে এটাও তদন্ত করে দেখতে হবে, শেখ হাসিনা যে বিচার করেছে সেটা কতটুকু বৈধ ছিল? সত্যিই কী শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল?
একটা জিনিস আমাদের কাছে পরিষ্কার ছিল, সে সময়ের নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগকে সহায়তা করেছিল। সেটা একজন বিচারকের কথায় প্রমাণিত, তাকে বলা হয়েছিল তুমি এদেরকে ফাঁসি দাও আমি তোমাকে পদোন্নতি দেবো। এ রকম আরো ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে।
একটা মজার ঘটনা বলি, আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছিল, ২০১৩ সালে। ২০১২ সালে একজন মন্ত্রী আমাকে বললেন, সে আমারও বন্ধু ছিল, কাদেরেরও বন্ধু ছিল। তিনি বললেন, রাজ্জাক ভাই, কাদেরকে তো আর বাঁচাতে পারলাম না। মানে তখন থেকেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা জানেন যে, এদেরকে ফাঁসি দেয়া হবে। এই একটা ঘটনাই প্রমাণ করে এই বিচার সম্পূর্ণ সাজানো, মিথ্যা ছিল।
প্রশ্ন : শেখ হাসিনার আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচার হয়েছে সে একই আইনে শেখ হাসিনার কি বিচার করা যায়?
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক : শেখ হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে হওয়া উচিত। এই বিচারটা স্বচ্ছ হওয়া উচিত। আমি আশা করি, জামায়াতের বড় বড় নেতা কিংবা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ব্যাপারে যে অন্যায় হয়েছে সেটা তাদের ব্যাপারে হবে না। তবে তাদের অপরাধের ব্যাপারে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। এদের দ্রুত বিচার হওয়া উচিত।
আন্তর্জাতিক আদালতে এদের বিচার সম্ভব নয়, দেশেই আইন থাকলে সেটার ব্যাপারে আইসিসি হস্তক্ষেপ করবে না। হাসিনার বিচার দেশীয় আইনেই হওয়া উচিত। তার যে অপরাধ তাতে তার বিচার হতেই হবে এবং সেটা স্বচ্ছ হওয়া উচিত যাতে বিচার নিয়ে কেউ কোনো দিন প্রশ্ন না তোলে। এই ডিজিটাল যুগে তার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রচুর আলামত রয়েছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? সংবিধান পরিবর্তন করা কতটা প্রয়োজন বলে মনে করেন।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক : শেখ হাসিনা সংবিধানকে নিজের ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করেছে। সংবিধানকে নিজ দলের সুবিধামতো পরিবর্তন করেছে। বর্তমান সরকারকে সংবিধানকে পরিবর্তন করতে হলে সবচেয়ে ভালো হতো যদি সবকিছু বাদ দিয়ে সবদলের ঐকমত্যে একটি শাসনতন্ত্র করা যেত। কিন্তু সেটা এখন সম্ভব নয়। সব দলের ঐকমত্য নিয়েই সংবিধান সংস্কার করতে হবে। আমি জানি না রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে এখন এক হবে কি না।
প্রশ্ন : ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক : ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সেই লেভেলের হওয়া উচিত, যে পর্যায়ে আমেরিকার সাথে ইংল্যান্ডের সম্পর্ক রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ভারত গত ১৫ বছরে আমাদের অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে দেয়নি। ভারত আমাদের থেকে শুধু নিয়েছে, তার বদলে কিছু দেয়নি। এ কারণেই ভারতবিরোধী মনোভাব বাংলাদেশে এখন চরমে। এই দু’টি দেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে সম্মানজনক পর্যায়ে রাখা উচিত আর এর দায়িত্ব অবশ্যই ভারতের। ভারতের উচিত শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেয়া। আর যদি সেটা না দেয়, তাহলে ইন্টারপোল দিয়ে সেটা করতে হবে। আর যদি ফেরানোর বিষয়ে কোনোকিছু সম্ভব না হয়, তাহলে তার অনুপস্থিতিতে বিচার করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা