০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১, ৪ রজব ১৪৪৬
`

ভ্যাটের হার বাড়ানোয় জিনিসের দাম বাড়বে না : অর্থ উপদেষ্টা

১৪ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি হচ্ছে
-


হঠাৎ করে কয়েকটি পণ্যের ওপর ভ্যাটের হার (মূল্য সংযোজন কর) বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এটা করার কারণটা হলো যে ছাড় দিয়েছি, সেটা হিসাব করলে কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। আর আমাদের রাজস্ব গ্যাপ এত বেশি, আমি তো আর বড় করে ডেফিসিট ফাইন্যান্সিং করে এগোতে পারব না। গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান।

উল্লেখ্য, গতকাল ওই কমিটির বৈঠকে জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেলসহ মোট ৯টি ক্রয়প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৩ হাজার কোটি টাকা।
বৈঠকের পর অর্থ উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হয়, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনের সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। ৪৩টি পণ্যে ভ্যাট বাড়ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন করে ভ্যাট আরোপ হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ওপর এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না। জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এতে জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের শুল্ক জিরো করে দিয়েছি। আপনি ছাড়টা দেখবেন। মূল্যস্ফীতির মূল ওয়েটের ইন্ডিকেটরগুলো হলো চাল, ডাল এগুলো; সেটা আপনারা জানেন। আমরা যেসব জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছি এগুলো আমাদের মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, তিন তারকার ওপর যে রেস্টুরেন্টগুলো সেগুলোর ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। ভাতের রেস্টুরেন্ট বা অন্য রেস্টুরেন্ট থেকে তো যাবে না। থ্রেসহোল্ড আছে, যাদের টার্নওভার ৫০ লাখ টাকার ওপর, তাদের ক্ষেত্রে এটা আসবে। অন্য কোনো ব্যবসা তো এটার মধ্যে আসছে না। বিমানভাড়ার ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ছে- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, বিমানের ভাড়ার ক্ষেত্রে আগে ৫০০ টাকা ছিল সেটি ২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিমানে এখন লোকজন মোটামুটি চড়ে। তারা ২০০ টাকা বেশি দিতে পারবে না বলে মনে হয় না। এগুলো মার্জিনাল।

পৃথিবীর কোনো দেশেই কিন্তু নেপাল, ভুটান ধরেন; এত লো ট্যাক্স কোথাও নেই। সব জিনিসের ওপরে। এসেনসিয়াল জিনিসের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় বলেছি, সেখানে আমরা প্রায় জিরো করে নিয়ে আসব।
অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ মাস পর এই সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা করার কারণটা হলো যে ছাড় দিয়েছি, সেটা হিসাব করে... কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। আর আমাদের রাজস্ব গ্যাপ এত বেশি, আমি তো আর বড় করে ডেফিসিট ফাইন্যান্সিং করে এগোতে পারব না।

আইএমএফের পরামর্শে এটি করা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে অর্থউপদেষ্টা বলেন, না, সবদিক চিন্তাভাবনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে কি না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, মনে হয় না কষ্ট হবে।
নতুন বছরে অর্থনীতিকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চান- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতি মোটামুটি স্ট্রং তো হয়েছে, এখন দরকার স্থিতিশীলতা। আমি বলব না, সবক্ষেত্রে এটা হয়েছে। ব্যাংক সেক্টরে কিছু শৃঙ্খলা ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করছে, কিছু কিছু দুর্বল ব্যাংককে সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। জনগণ স্বস্তি পাচ্ছে কি না- জবাবে তিনি বলেন, জনগণের স্বস্তি না পাওয়ার তো কোনো কথা না।
১৩ হাজার কোটি টাকার ৯টি ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন : এ দিকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির (জি-টু-জি) আওতায় সাতটি দেশের ৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ ক্যাটাগরির ১৪ লাখ ২৫ হাজার টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিসহ ৯টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১২ হাজার ৯২১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

বৈঠক শেষে জানানো হয় যে, বৈঠকে চলতি নতুন বছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য সাতটি দেশের ৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে (থাইল্যান্ডের পিটিটিটি, ওমানের ওকিউটি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইনোক, চীনের পেট্রোচায়না ও ইউনিপেক, ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি, মালয়েশিয়ার পিটিএলসিএল ও ভারতের আইওসিএল) পাঁচ ক্যাটাগরির ১৪ লাখ ২৫ হাজার টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১১ হাজার ৪৭৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। পাঁচ ক্যাটাগরির পরিশোধিত জ্বালানি তেলের মধ্যে ৮ লাখ ৮০ হাজার টন গ্যাস অয়েল (ডিজেল), ১ লাখ ৯০ হাজার টন জেট এ-১ ফুয়েল, ৭৫ হাজার টন মোগ্যাস (অকটেন), ২ লাখ ৫০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল এবং ৩০ হাজার টন মেরিন ফুয়েল রয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত চুক্তির আওতায় কাতার, সৌদি আরব ও মরক্কো থেকে তিন ক্যাটাগরির মোট ১ লাখ টন সার (৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার, ৪০ হাজার টন ডিএপি সার ও ৩০ হাজার টন টিএসপি সার) আমদানির তিনটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে নিম্নআয়ের এক কোটি পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রয়ের লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টিসিবি কর্তৃক স্থানীয় বাজার থেকে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১৮৯ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল (প্রতি লিটার ১৭১ টাকা ৯৫ পয়সা) এবং ৯৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ হাজার টন মসুর ডাল (প্রতি কেজি ৯৪ টাকা ৯৫ পয়সা) কেনার দু’টি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বৈঠকে রেলওয়ের দু’টি প্রকল্পের (সিলেট-ছাতক ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ) দু’টি প্যাকেজ কাজ সম্পাদনে দু’টি পৃথক প্রস্তাবে ঠিকাদার নিয়োগ এবং ইজিপি সিস্টেমের উন্নয়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে পরামর্শক নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্র জানা গেছে, ক্রয় কমিটির বৈঠকের আগে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে কন্ট্রাক্টর নিয়োগে জি-টু-জি সরাসরি ক্রয়ের পরিবর্তে প্রতিযোগিতামূলক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাতের ভোটের ৩০ জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করছে সংস্কার কতটা তার ওপর জটিলতা না থাকলে মঙ্গলবার বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ধ্বংসস্তুপ থেকে অর্থনীতি টেনে তোলার চ্যালেঞ্জে অন্তর্বর্তী সরকার সম্মিলিত কল্যাণমুখী সরকার দেশের কল্যাণ আনবে : ডা: শফিক ছাত্রদলকে পড়ায় মনোযোগী হতে বললেন মির্জা ফখরুল বিএফআইইউ প্রধান হতে এস আলম ও আ’লীগের সুবিধাভোগীদের দৌড়ঝাঁপ পদ ছাড়াই রূপালী ব্যাংকে ঢালাও পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু ভারতে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন নিম্ন আদালতের ৫০ বিচারক দুপুরে সূর্য উঁকি দিলেও রাত কেটেছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল