বিভেদ নয়, ঐক্যের হোক বাংলাদেশ
নতুন বছরে সরকারের প্রাধান্য থাকবে ৫ কাজ সমাপ্তে- মঈন উদ্দিন খান
- ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:০০, আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:২৬
স্বাগত ২০২৫। পুরনোকে পেছনে ফেলে নতুনের জয়গানই নববর্ষের মর্মবাণী। নতুন এই বছরটি এবার এমন সময় এলো যখন ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। স্বৈরাচার হটানোর পর প্রতিটি প্রাণের আকাক্সক্ষায় এখন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন। সবার চাওয়া, পুরনো বিভেদ-বিভাজন নয়, বাংলাদেশ হোক ঐক্যের, যে ঐক্যের ভিত গড়ে দিয়েছে গণ-অভ্যুত্থান। মত কিংবা আদর্শের অমিল ধ্বংসাত্মক নয়, হয়ে উঠুক গণতন্ত্রের বৈচিত্র্য। ঝুঁকি-চক্রান্ত থাকবে, তবে বাংলাদেশ প্রশ্নে তা উবে যাক প্রতিরোধের ভাষায়। ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’- বারুদমাখা এই স্লোগান টিকে থাকুক আগামীর ‘সতর্কসঙ্কেত’ হিসেবে।
এক নজরে ফিরে দেখা ২০২৪
গত বছরের শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ করলে দেখা যায়, ৭ জানুয়ারি হয়েছে ‘ডামি’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এরপর বেইলি রোডে রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ড, এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাই, ফোর্বস ‘৩০ অনূর্ধ্ব ৩০ এশিয়া’-তে ৯ বাংলাদেশী, এমপি আনোয়ারুল আজিম হত্যাকাণ্ড, ঘূর্ণিঝড় রেমাল, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীরের পুকুরচুরি, মতিউর রহমানের ছাগলকাণ্ড, পাহাড়ধসে ৯ জনের প্রাণহানি, কোটা সংস্কার আন্দোলন, শেখ হাসিনার পলায়ন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, ঢাবিতে তোফাজ্জল হোসেনকে গণপিটুনিতে হত্যা, উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসে ৯ জন নিহত, বান্দরবানে কেএনএফের পাঁচ সদস্য গ্রেফতার, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২০০-এর বেশি মামলা, হঠাৎ আনসারদের আন্দোলন, প্যাডেলচালিত এবং ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের আন্দোলন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ও ইসকন প্রসঙ্গ নিয়ে উত্তেজনা, এশিয়া কাপ শিরোপা জয়, ব্যাংকে ডাকাতদের হানা এবং সচিবালয়ে আগুন। আর বছরের শেষদিন ৩১ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পালিত হয় ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি। শুরুতে এটি ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেয়ার কর্মসূচি থাকলেও আগের রাতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ঘোষণাপত্র পাঠের বদলে সমাবেশ করবে তারা। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেই সর্বদলীয় সম্মতির ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করা হবে।
মূল ঘটনা ছিল হাসিনার বিদায় : টানা তিনবার সাজানো নির্বাচন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১২ সাল থেকে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিলের পর থেকে এই আন্দোলন শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। ২০১৮ সালে মধ্যরাতের নির্বাচনের পর এ বছরের ৭ জানুয়ারি আরেকটি সাজানো ও ডামি নির্বাচন করে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখেন শেখ হাসিনা। বিরোধী দলগুলো এই দীর্ঘ সময়ে হরতাল-অবরোধ-মহাসমাবেশসহ নানামুখী কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে থাকলেও সরকার আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দিয়ে এসব কঠোর হস্তে দমন করে। মামলা দিয়ে সবাইকে জেলে ঢুকিয়ে রাখা হয়। রাজনৈতিক দলগুলো যখন সরকার পতনের আন্দোলনে সফল হতে পারছিল না, তখন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ছয় মাসের মাথায় কোটা সংস্কার আন্দোলন সব মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই আন্দোলন দমনেও সরকার নিষ্ঠুর পথ বেছে নেয়। কিন্তু গণহত্যার মুখেও ছাত্র-জনতার অসীম সাহসিকতার ফলে ৫ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। আশ্রয় নেন ভারতে। অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, তাকে ফিরিয়ে এনে গণহত্যার বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
স্লোগানগুলো শক্তি জোগাবে আগামীতেও : কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের দাবিতে ৩৬ দিনের আন্দোলনে তৈরি হয়েছিল নতুন নতুন স্লোগান। ‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’ এই স্লোগান একপর্যায়ে রূপ নেয় সরকার পতনের এক দফা এক দাবিতে। ‘এক দুই তিন চার, শেখ হাসিনা গদি ছাড়’-এর মতো বজ্রকঠিন কিছু স্লোগান ওঠে মুখে মুখে। ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ এবং ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’-এর মতো স্লোগান কাঁপিয়ে তুলেছিল চারিদিক। তবে আন্দোলনের গতি আর এসব স্লোগান তীব্র হয়ে ওঠে আবু সাঈদের মৃত্যুর পর। গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। এরপর থেকেই স্লোগান শুরু হয়, ‘আমার খায়, আমার পরে, আমার বুকেই গুলি করে’; ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাই ফিরিয়ে দে’; ‘বন্দুকের নলের সাথে ঝাঁজালো বুকের সংলাপ হয় না’, ‘লাশের ভেতর জীবন দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’, এসব নানা স্লোগান। তবে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলে ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ স্লোগানটি। এসব বারুদমাখা স্লোগান আগামী দিনেও প্রতিবাদীদের সাহস জোগাবে।
নতুন বছরে ৫ অগ্রাধিকার
গণহত্যার বিচার : অসংখ্য ছাত্র-জনতা হত্যার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনা ও তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মন্ত্রী, পুলিশ ও র্যাবসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিচার করার ঘোষণা দিয়েছে। হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা ও শুনানি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জনকে জেলে রাখা হয়েছে। হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগে পৃথক একটি মামলাও হয়েছে। আবার এই ট্রাইব্যুনালের বাইরে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়ের ঘটনায় বহু থানায় ও আদালতে দণ্ডবিধিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা ও অন্যান্য মামলার সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে এবং প্রতিনিয়ত মামলা দায়ের চলছে। আগামীতে এগুলোর তদন্তসহ পুরো প্রক্রিয়া কীভাবে চলে তা দেখার বিষয়। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে আনার বিষয়টি খুবই জটিল হবে বলে মনে করা হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা হলেও সরকার এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ওদিকে লন্ডনের একজন আইনজীবী হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে হাসিনাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। তবে এই মামলার গতি মন্থর হবে এবং পরিণতি অনুমান করা কঠিন। সর্বশেষ আরেকটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের চক্রান্তকারী বলে শেখ হাসিনাসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে। ২০২৫ জুড়ে এই বিচারের দিকে নজর থাকবে সবার। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ শেষ করা হবে।
ত্রয়োদশ নির্বাচন : ত্রয়োদশ নির্বাচন অনুষ্ঠান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও অন্যতম কাজ বলে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিনিয়তই বক্তব্য রাখছেন। প্রথমদিকে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে প্রফেসর ড. ইউনূস এবং সরকার কিছুই বলতে উৎসাহিত না হলেও বিএনপি এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মনোভাবসহ পরিস্থিতির চাপে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে’ বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫-এর শেষ বা ২০২৬-এর প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে বলার পরে তার প্রেস সচিব আরো স্পষ্ট করে জানান যে, ’২৬-এর ৩০ শে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এ ঘোষণার প্রতি বিএনপি ইতিবাচক থেকেও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি করছে। আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাপ সৃষ্টিকারী নেতারা শেখ হাসিনার শাস্তির আগে নির্বাচন নয়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে বলে দাবি তুলেছেন। তবে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি থেকে যে নির্বাচনের আবহ তৈরি হবে তা অনুমান করা যায়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা ও অবস্থান কী হবে, সেটাও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
রাষ্ট্র সংস্কার : সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান, দুর্নীতি দমন, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম, শ্রমিক অধিকার ও নারীবিষয়ক ১০টি যে সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন তার প্রথম ৬টির প্রতিবেদন ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই দেয়ার কথা রয়েছে। বলা হচ্ছে, প্রতিবেদনগুলোর ভিত্তিতে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে ঐকমত্যে আসার চেষ্টা করবেন। এতে নতুন বছরের প্রথম দুই থেকে তিন মাস লেগে যেতে পারে। এগুলোর সুপারিশ এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্যের বিষয় অনুমান করা কঠিন। নির্বাচনের ঝোঁক চলে এলে হয়তো অধিকাংশ কাজই পরবর্তী সংসদের জন্য রেখে দেয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রনেতারা কী অবস্থান নেন এবং রাজনৈতিক দলের সাথে তাদের সঙ্ঘাত বাধে কি-না সেটাও নতুন বছরে দেখার বিষয় হবে।
দ্রব্যমূল্য : হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে জনগণের ক্ষোভ আরো বেড়ে গিয়েছিল দ্রব্যমূল্যের টানা ঊর্ধ্বগতির জন্য। প্রফেসর ইউনূস গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রথম ভাষণে আইনশৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। পুরনো ব্যাধি চাঁদাবাজি, কারসাজি ও সিন্ডিকেশনে হাত দিতে এখনো পারেনি সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত ১৪ ডিসেম্বর আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, আগামী জুনে সাধারণ পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৭% ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে ৫ শতাংশে আনা সরকারের লক্ষ্য। প্রতিশ্রুতি যাই দেয়া হোক, নতুন বছরে জনগণ আসলে বাজারে গিয়ে স্বস্তি পেতে চায়।
আইনশৃঙ্খলা : গত চার মাসের বেশি সময় প্রতিহিংসামূলক হামলা, শিক্ষক বিতাড়ন ও ছাত্রদের মধ্যে মারামারি, অপরাধী সাব্যস্ত করে পিটিয়ে হত্যা তথা ‘মব ট্রায়াল’, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, দফায় দফায় ছাত্র, আনসার, গার্মেন্ট শ্রমিক, রিকশাচালকদের রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন ও সংঘর্ষ, গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিক্ষোভ সেনা নিয়োগ করে সামলানো, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে শৃঙ্খলা রাখার চেষ্টা প্রভৃতি দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ইতোমধ্যে কিছুটা উন্নতি হলেও পুলিশের দায়িত্ব পালন সম্পূর্ণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ২০২৫ সালেও থাকবে বলে অনেকে মনে করেন। ডিসেম্বরের শেষভাগে দুটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র ‘গুপ্তহত্যা’র শিকার হয়েছে বলে ছাত্রনেতাদের অভিযোগ। আইনশৃঙ্খলার এমন চিত্র নতুন বছরে দেখতে চায় না সাধারণ মানুষ। তারা এক্ষেত্রে কার্যকর উন্নতি দেখতে চায়।
প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য
গত ৩ ডিসেম্বর জাতীয় ঐক্যের আহ্বান নিয়ে ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে পৃথক বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একটি বিশেষ পরিস্থিতি বা উত্তেজনার মধ্যে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে এক জায়গায় আনার ওই উদ্যোগ নেন তিনি। পতিত আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় নেতাদের সাথে বৈঠক করেন তিনি।
একজন হিন্দুধর্মীয় নেতাকে গ্রেফতারের পর ভারতের হিন্দুত্ববাদী কিছু সংগঠন ও গোষ্ঠী সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালায়। এ নিয়ে একধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনীতিকসহ ধর্মীয় নেতাদের সাথে ধারাবাহিক ওই বৈঠক করেন।
সরকার ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, হিন্দু সম্প্রদায়কে ঘিরে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, এর পেছনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার ভূমিকা রয়েছে। তার সাথে যুক্ত হয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে অস্থিরতা তৈরি করছে। ওই রকম পরিস্থিতিতে সংলাপের আয়োজন করে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থক ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে দুটি বার্তা দিতে চেয়েছে। একটি হলো দেশের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে সরকার আপসহীন। দ্বিতীয়টি হলো, ফ্যাসিবাদ হটাতে গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সব পক্ষ তাদের প্রতিহত করতে এখনো একাট্টা।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্য, নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে ক্রিয়াশীল সব পক্ষকে যুক্ত করে প্রথমবারের মতো একটি জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। দু’দিনব্যাপী সংলাপের প্রথম দিনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিবের বলেন, সংস্কার নিয়ে যত বেশি সময় যাবে, সমস্যাগুলো তত বাড়বে। আলোচনায় সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ার অভিযোগ তোলেন বক্তাদের কেউ কেউ। নির্বাচন বা সংস্কার সম্পন্ন করার আগে দ্রব্যমূল্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তার মতো বিষয়ে মানুষকে স্বস্তি দেয়ার তাগিদও আসে।
তবে দাবি-দাওয়া যেটিই হোক আগামীর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে রাজনৈতিক ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। একলা চলো নীতি’তে সরকারের এগুনো কঠিন। গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে হলে ছাত্রদের আকাক্সক্ষাকেও আস্থায় নিতে হবে। বাস্তবতার নিরিখে এগুতে হবে সব পক্ষকে। ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগানকে রূপ দিতে হবে বাস্তবে। নতুন বছর হয়ে তাই উঠুক শঙ্কামুক্ত, স্বস্তির।