ছাত্রদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামতের আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে : ডা: শফিক
- নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি
- ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৯
ছাত্রদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, তোমাদের আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে। সে যুদ্ধটি হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মেরামত করার যুদ্ধ। শিক্ষা যেহেতু জাতির মেরুদণ্ড, তাই এই জায়াগায় সবার আগে তোমাদের শপথ নিতে হবে। আর কোনো চাপাতি সংগঠনকে ওখানে ঢুকতে দেবে না। হাতে অস্ত্র নিয়ে ওখানে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। গণরুম যারা করে তাদেরও ঢুকতে দেয়া হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু শিক্ষার চর্চা থাকবে। যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তোমরা সেভাবে গড়ে তুলতে পার তাহলে ২৪-এর এই ত্যাগ শতভাগ সফল হবে। আর যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলা না যায় এই জাতি বারবার পথ হারাবে। সে জন্য পথহারা জাতিকে পথে টেনে তোলা তোমাদের দায়িত্ব। এই যুদ্ধে আমরা তোমাদের সাথে আছি। যেভাবে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত তোমাদের সাথে ছিলাম, আগামীতেও তোমাদের সাথে থাকার অঙ্গীকার আমরা করছি। গতকাল বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন-২০২৪ এর উদ্বোধনী সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ৮ আগস্ট (৫ তারিখ গুলিবিদ্ধ) বুলেটের আঘাতে শহীদ রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী রায়হানের পিতা মো: মুসলেহ উদ্দিন। এ সময় জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া আবু সাঈদ, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, ওয়াসিম, উসমানসহ শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আওয়ামী আমলের অত্যাচারে আহত ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও শিবিরের সাবেক সভাপতি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও শিবিরের সাবেক সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি মাওলানা শামসুল ইসলাম ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতিরা।
আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হতে পারে না মন্তব্য করে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, যারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে নিজের দেশের মানুষকে হত্যা করতে পারে তাদেরকে রাজনৈতিক দল বলা যায় না, তারা সন্ত্রাসী সংগঠন। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের ছাত্রসংগঠকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের হাতে বহু নিরীহ লোকের প্রাণ গেছে। শুধু আবরার ফাহাদ না অসংখ্য মানুষকে শিবির ট্যাগ দিয়ে আমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। এই নিষিদ্ধ সংগঠন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্ত্রাগারে পরিণত করেছিল। গণরুম সংস্কৃতি তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দিনের পর দিন অত্যাচার চালিয়ে গেছে। আবরার ফাহাদ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেন ও নামাজ আদায় করতেন, এই দু’টা কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আগামীতে সুন্দর ও ন্যায়ের বাংলাদেশের জন্য এ রকম তরুণ ছাত্রসমাজের যতœ দরকার। কারণ তারা দুঃশাসন ও দুর্নীতি মেনে নেয় না। আর আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই দু’টাই বেছে নিয়েছিল। শফিকুর রহমান আরো বলেন, সাড়ে ১৫ বছর রাজনীতির প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য যারা যুদ্ধে নেমেছিল, সেই যুদ্ধের পরাজিত শক্তি আজ দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। আমার কলিজার টুকরা সন্তানেরা ’২৪-এর জুলাই থেকে একটি ন্যায্য ও নাগরিক দাবির জন্য আন্দোলনে নেমেছিল; কিন্তু সেই পুরনো কায়দায় হেলমেট বাহিনী, হাতুড়ি বাহিনীকে পাঠিয়ে দিয়ে সরকারি সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে সে আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ফ্যাসিস্টদলের নেত্রী ঢাকায় লগি-বৈঠা নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। সেই দিনে কয়েকজন নির্মমভাবে হত্যা করে লাশের উপর নৃত্য করেছিল। এ বিষয়ে মামলা হলেও পরে ক্ষমতায় এসে মামলা গিলে ফেলে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার। সেদিনের সেই হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ২৪ পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার সবগুলোর বিচার বাংলার মানুষ দেখতে চায়।
বাংলাদেশে আর কোনো চাঁদাবাজ, আধিপত্যবাদ ও দখলবাজের স্থান হবে না জানিয়ে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছিল। চরদখলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল, চাঁদাবাজি ও আধিপত্যবাদ বজায় রাখতে ক্যাম্পাসগুলোকে অস্ত্রাগারে পরিণত করা হয়েছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থার কবর রচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে আর কোনো চাঁদাবাজ, আধিপত্যবাদ ও দখলবাজের স্থান হবে না ইনশা আল্লাহ।
সমাপনী বক্তব্যে শিবির সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এ দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিকে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সেই মানুষের আকাক্সক্ষার জন্য ছাত্রশিবিরকে সব ভয় উপেক্ষা করে ভূমিকা পালন করে যেতে হবে। ছাত্রশিবির ২৪-এর আন্দোলনে যেভাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে আগামীতেও যেকোনো আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্ররা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো শক্তিকে ভয় পাবে না। আল্লাহ তায়ালাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি কাজী ইবরাহীম, বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা জায়নুল আবেদীন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শামছুল আলম, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরী, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণ অধিকার পরিষদের (রেজা কিবরিয়া) সদস্য সচিব ফারুক হাসান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বিদেশী অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আনাদোলু গেঞ্জলিক দেরনেই-এর সহ-সভাপতি এমরুল্লাহ ডেমির, পেরসাতুয়ান কেবাংসান পেলাযার ইসলাম মালয়েশিয়ার সভাপতি জুল আইমান, হিকমত ইয়ুথ মিসরের সভাপতি ড. আবদুল্লাহ আহমেদ, ইসলামী বিশ্ব যুব ফোরামের সভাপতি ড. আশরাফ আওয়াদ, আংকাতান বেলিয়া ইসলাম মালয়েশিয়ার সভাপতি আহমদ ফাহমি মোহাম্মদ সামসুদিন, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফেডারেশন অব স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইফসু) সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ। ছাত্র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, জাগপা ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুর রহমান ফারুকী, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের (ববি হাজ্জাজ) সভাপতি মাসুদ রানা জুয়েলসহ বন্ধুপ্রতিম ছাত্রসংগঠনের নেতারা।