সৌদির ২৪টি নিয়োগকারী কোম্পানি কালো তালিকায়
- মনির হোসেন
- ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৮
সৌদি আরবের রাজকীয় মালিকদের দ্বারা পরিচালিত কয়েকটি নিয়োগকারী কোম্পানিসহ মোট ২৪টি কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালকের কাছে দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনাতে বলা হয়েছে, এসব চিহ্নিত কোম্পানির ভিসায় যাতে কোনো বিদেশগামী কর্মী বিএমইটি থেকে ইমিগ্রেশন (বহির্গমন) ছাড়পত্র নিতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
এ দিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ছয়টি কোম্পানিসহ মোট ২৪ কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করার সংবাদ ঢাকা ও সৌদি আরবে অবস্থানকারী প্রায় তিন হাজারের মতো জনশক্তি ব্যবসায়ীদের মধ্যে জানাজানি হওয়ার পর থেকেই তারা ব্যাপক সোচ্চার হয়ে উঠেন। তারা তাদের নিজস্ব গ্রুপগুলোতে এনিয়ে (পক্ষে-বিপক্ষে) নানা মতামত তুলে ধরছেন। তবে তারা এই ২৪ কোম্পানির মধ্যে অন্তত ছয়টি নিয়োগকারী কোম্পানির নাম দেখে কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করছেন। তাদের দাবি, এসব কোম্পানিতে বাংলাদেশের হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। পাঠাচ্ছেন কোটি কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের (কর্মসংস্থান শাখা-৩) এর উপসচিব গাজী মো: শাহেদ আনোয়ার স্বাক্ষরিত একটি পত্র গত ২২ ডিসেম্বর কাকরাইলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফর (গ্রেড-১) এর কাছে পাঠানো হয়। সেখানে সৌদি আরবের ২৪টি কর্মী নিয়োগকারী কোম্পানির নাম এবং বিভিন্ন সময় আসা (সম্ভবত দূতাবাস) প্রতিবেদনের তারিখ উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস, কন্স্যুলেট, রিয়াদ জেদ্দা থেকে বিভিন্ন সময় সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশী কর্মীদের কাজ না থাকা, চাহিদাপত্র ও চুক্তিপত্র মোতাবেক কর্মীদের বেতন প্রদান না করা ও অন্যান্য নানা সমস্যার কারণে এসব কোম্পানিতে কর্মী না পাঠানোর বিষয়ে সুপারিশসহ এই মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। এই অবস্থায় নিম্নের কালো তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানির নামে ভিসা এনে কেউ যাতে বিদেশ গমন ইচ্ছুক কর্মীদের বিএমইটির বহির্গমন শাখা থেকে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স করাতে না পারে সেই ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য পত্রে অনুরোধ জানানো হয়।
সৌদি আরবের নিয়োগকারী কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো হচ্ছে, মেসার্স আল রাফাত কন্ট্রাক্টিং কোম্পানি, তাইবা কন্ট্রাক্টিং অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড মদিনা, আল মাজাল আল আরাবি কন্ট্রাক্টিং কোম্পানি, সৌদ হামদ সৌদ আল ওতাইবি, মের্সাস এটিবি জেনারেল কন্ট্রাক্টিং কোম্পানি, মেসার্স মর্ডান স্ট্রাকচার কোম্পানি লিমিটেড, মের্সাস ইল সাইফ অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স কোম্পানি, ইমার কন্ট্রাক্টিং ইস্ট, মেসার্স সায়ারা আলজাজিরা কন্ট্রাক্টিং কোম্পানি লিমিটেড, তারিক বিন সালেহ আল সালিম কোম্পানি ফর অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স, মেসার্স আনওয়ান আল আফাডাল কোম্পানি ফর লজিস্টিকস সার্ভিস, মেসার্স সাপোর্ট মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড ক্লিনিং কোম্পানি, আহমদ সোলাইমান আল ফাহাদ অ্যান্ড সন্স লিমিটেড কোম্পানি, কামাথারা ফর লজিস্টিকস আল ইমামা, মের্সাস সরদার গ্রুপ অফ কোম্পানি ফর ট্রেডিং অ্যান্ড কন্ট্রাক্টিং, তামকিং আল ওয়াতানিয়া লজিস্টিক সার্ভিস লিমিটেড, আরব হোম গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড, মেসার্স সাহারা মেইনটেন্যান্স সার্ভিস, মোহাম্মদ আল দুয়াইল কন্ট্রাক্টিং কোম্পানি, মেসার্স ইফাদা হিউম্যান রিসোর্সেস, মেসার্স নাসের মানকা খেলাইয়ি কন্ট্রাক্টিং কোম্পানি (আরার) মেসার্স সাপোর্ট হিউম্যান রিসোর্সেস (রিয়াদ) এবং মাসাফাত আলাবাদ কন্ট্রাক্টিং কোম্পানির নাম কালো তালিকায় উল্লেখ রয়েছে।
যদিও জনশক্তি ব্যবসার সাথে সম্পৃত্ত একাধিক ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এসব কোম্পানির মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ-ছয়টি কোম্পানি আছে, যেসব কোম্পানিতে এখনো বাংলাদেশের বহু শ্রমিক কাজ করে দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এসব কোম্পানিতে কাজ করার পাশাপাশি তারা বাইরে কাজ করে অতিরিক্ত ইনকামও করতে পারছেন। এসব কোম্পানিকেও দেখলাম প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ব্লাকলিস্টেড করেছে। এই কোম্পানিগুলো যদি আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে অনেক ধরনের প্রভাব পড়বে। তবে বাদ বাকি যে ১৮টি নিয়োগকারী কোম্পানিকে চুক্তি অনুযায়ী কর্মীদের বেতন ও কাজ না দেয়ার কারণে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে সেগুলো মনে হয় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এগুলো ‘ডেফিনিটলি খারাপ কোম্পানি।’
গতকাল মঙ্গলবার সৌদি আরব থেকে বনানী এলাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, ২৪টি কোম্পানির মধ্যে ছয়টি কোম্পানির নাম দেখলাম। ওই কোম্পানিগুলোতে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করছেন। বলতে পারেন কয়েক লাখ। এই নিয়োগকারী কোম্পানিগুলো যদি বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনতে না চায় তাহলে বৃহৎ এই বাজারে ওত পেতে থাকা ভারত, নেপালসহ অন্যান্য দেশ ঢুকে পড়বে। তিনি বলেন, চাকরি এবং বেতন না দেয়ার অভিযোগগুলো যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনা করে এসব কোম্পানিকে ব্লাকলিস্টেড করা যথাযথ হয়েছে। কিন্তু আমরা যতটুকু জানি, আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এখনো আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী আমলা ও তাদের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছেন এবং নীরবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন! তারা অন্য কোন উদ্দেশ্য এটি করে থাকলে সেটিও সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নজরদারির মধ্যে রাখা উচিত বলে আমি মনে করছি। একই অবস্থা বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর ক্ষেত্রেও। কারণ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের একমাত্র শ্রমবাজার সৌদি আরবই টিকে আছে। যতটুকু জানতে পারলাম, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে যেসব শ্রমিক বিদেশে গেছেন তার ৬০ ভাগই গেছেন সৌদি আরবে।