০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১, ৩ রজব ১৪৪৬
`
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি

১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্রের দাবি

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর ইউনিটি সমাবেশে বিপুল ছাত্র-জনতা : নয়া দিগন্ত -


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বানে মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ঢল নামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় শহীদ মিনার এলাকা। এ সময় জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র হত্যার দায়ে শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের ফাঁসির দাবি তুলেছেন উপস্থিত জনতা শহীদ পরিবারের স্বজনেরা ও জনতা। দড়ি লাগলে দড়ি নে, হাসিনার ফাসি দে স্লোগানে মুখরিত হয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।
গতকাল সকাল থেকেই শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকে বিপ্লবীরা। দুপুর হতে না হতেই কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় প্রাঙ্গণটি। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছাত্র-জনতার ছোট ছোট মিছিল আসা বিদ্যমান ছিল। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মহানগর, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ব্যানারে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে উপস্থিত হয় ছাত্র-জনতা। আরো উপস্থিত ছিলেন ’২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এ সময় ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই; আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে; দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা; আবু সাঈদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ; গোলামি না আজাদি, আজাদি-আজাদি ; দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’ দড়ি লাগলে দড়ি নে-খুনি হাসিনারে ফাঁসি দে, এই মুহূর্তে দরকার-বিচার ও সংস্কার, ইনকিলাব জিন্দাবাদ-মুজিববাদ মুর্দাবাদ প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও মুখপাত্র সামান্থা শারমিন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্যসচিব সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, সমন্বয়ক নুসসরাত তাবাসসুম, রিফাত রশিদসহ জুলাই অভ্যুত্থানে কয়েকজন শহীদের স্বজনেরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, আওয়ামী লীগের বিচারের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনা পালানোর পাঁচ মাস পর কেন আমাদের আবার শহীদ মিনারে এক হতে হলো। গত ৫ মাসে সরকারের কী প্রোক্লেমেশন ঘোষণার সুযোগ হয়নি?
উমামা ফাতেমা আরো বলেন, তারা কী এতই ব্যস্ত ছিল, জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র করার সময় পাননি? এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন আগে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই উদ্যোগটি গ্রহণ করি। জুলাইয়ে যে যোদ্ধারা জীবন দিয়ে রাস্তায় যুদ্ধ করেছিল, তাদের সেফটি আমাদের দিতে হবে। এটা আমাদের ঐতিহাসিক দায়। জুলাই এখনো যায় নাই। আমরা জুলাই শেষ হতে দেবো না। ’৭১ এ, ’৯০ এ বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছিল, কিন্তু আমরা ’২৪ কে ব্যর্থ হতে দেবো না।

তিনি আরো বলেন, শহীদদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি, এর মধ্যে স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন কেউ কেউ। যখনই আমরা চিরতরে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে চাই, তখনই সুশীল বেশে কিছু ব্যক্তি ও দল বিরোধিতায় নেমে যায়। আমরা প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়াব।
সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ঢাকায় আজকের মার্চ ফর ইউনিটিতে আসার সময় সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো এখনো হামলাকারীরা গ্রেফতার হয়নি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী করে?
এই সমন্বয়ক বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে টালবাহানা কেন? শাপলা চত্বরের বিচার কেন আজো হচ্ছে না? সবকিছুতেই আমরা সরকারের তরফ থেকে টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি। হাসিনার পতনের পাঁচ মাসেও কেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না? এই ব্যর্থতার দায় কার? আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ইউনূস সরকার যেন সাবধান হয়ে যান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের অভ্যুত্থান আওয়ামী লীগ মেনে নিতে পারে নাই। এ জন্য সচিবালয়ে, বিচারালয়ে ষড়যন্ত্র চলে। আগে চলত সতীদাহ প্রথা, আর এখন চলে নথিদাহ প্রথা। আমি বলতে চাই, আপনারা রিয়েলিটি মাইন্না নেন।
তিনি বলেন, হাসিনা গত ১৬ বছর বিএনপি-জামায়াতসহ সব রাজনৈতিক দলকে জিম্মি করে তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল? মানুষের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করেছিল। কিন্তু আমাদের ডাকে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছিল বলে হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এ দেশে খুনি হাসিনা আর ফিরতে পারবে না, তার পুনর্বাসন আর হবে না।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্ট স্বাধীনতার পর অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ছিল না। আমরা ঘোষণাপত্র পাঠের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু সরকার নিজ দায়িত্বে সেটি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাই আমরা চাই, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। এ সময় পর্যন্ত আপনারা জেলায় জেলায় পাড়া মহল্লায় মানুষের কাছে যাবেন, তাদের কথা শুনবেন। ততদিন পর্যন্ত আওয়ামী ও ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে আপনাদের লড়াই সংগ্রাম জারি থাকবে। আপনাদের সামনে আগামী ১৫ জানুয়ারিতে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে পুনরায় সমাবেশ হবে ইনশা আল্লাহ।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্যসচিব ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, যারা আমাদের ভাইকে মেরেছে সেই খুনিদের বিচার হতে হবে। আমরা যদি এই শহীদ ভাইদের খুনিদের বিচার করতে না পারি তাহলে আমরা নিজেদেরকে ক্ষমা করতে পারব না। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলোতে এখনো খুনির দোসররা ঘাঁপটি মেরে আছে। সচিবালয় হোক বা যেকোনো জায়গা থেকে ষড়যন্ত্র করলে আমরা তাদের উৎখাত করে ছাড়বো।

‘মার্চ ফর ইউনিটি’ সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, এ দেশের মানুষ এক নতুন বাংলাদেশ চায়। বাংলাদেশের মানুষ নতুন সংবিধান চায়। বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যখন জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠের আয়োজনের ঘোষণা দেয়, তখন অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে ঘোষণাপত্র পাঠের ঘোষণা দেয়া হয়। এ ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বলতে চাই, অবিলম্বে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ করার ব্যবস্থা করুন।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই নতুন সংবিধান হবে। আগামী নির্বাচন হবে গণপরিষদ নির্বাচন। সে নির্বাচনে নির্বাচিতরাই সংবিধান সংশোধন করবে। বাংলাদেশের মানুষের অসংখ্য চাওয়া আছে, আগামীর নির্বাচনে যারা জয়ী হবেন তাদের সেই চাওয়াগুলো পূরণ করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, যেসব শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন দেশ বিনির্মাণ করেছিলাম সেই রক্তের মধ্য দিয়ে আমরা একটি ঘোষণাপত্র দিতে চেয়েছিলাম। যদি আমরা আমাদের ন্যায্যতা, আমাদের রক্তের কথা যদি আমরা লিখিতভাবে না পাই তাহলে ২৪ এর বাঘের বাচ্চারা আইন হাতে তুলে নেবে।
পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে নতুন করে আমরা এ দেশকে আর কোনোভাবেই অন্য দেশের অধীন দেখতে চাই না। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে সংস্কারের ইঙ্গিত থাকতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে কোনো টেন্ডারবাজি চলবে না, এই বছরের মধ্যে শহীদদের হত্যার বিচার করতে হবে। খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিলোপ সাধন করতে হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাসিনার ফাসির দাবি : এ দিকে জুলাই অভ্যুত্থানে হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মাধ্যমে শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে বলেছেন শহীদ সাহারিয়া হাসানের বাবা আবুল হাসান। তিনি বলেন, আমার ছেলে আজ পাঁচ মাস পরিবারের মধ্যে নেই। তবুও প্রতি মুহূর্তে আমার সন্তানকে অনুভব করি। একজন সন্তান হারা বাবার আর্তনাদ আরেকজন সন্তানহারা বাবাই জানে। আমাদের কান্না কখনো থামবে না। খুনি হাসিনা যে দুই হাজার ছেলেমেয়েকে হত্যা করেছে, আমি এর জন্য তার ও তার মন্ত্রিসভার সদস্য, হেলমেট বাহিনীর বিচার চাই।

হাসিনা ফাসির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলেই আমাদের শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। আমরা আমাদের সন্তানদের হত্যার বিচার চাই। গত ৫ মাসেও আমরা স্বজনদের হত্যার বিচার পাইনি। আমরা বিচারের নামে প্রহসন দেখতে চাই না। যত দ্রুত সম্ভব বিচার করুন। আপনারা আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না। সম্মানের জায়গায় রাখুন। আমাদের দুর্বল ভাববেন না। দ্রুত বিচার না করলে আমরা ২ হাজার নিহতের পরিবার রাস্তায় নামব।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আজ শহীদ মিনারে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করার কথা ছিল। পরে অন্তর্বর্তী সরকার এ ঘোষণাপত্র পাঠ করবে জানালে আজ ঘোষণাপত্র পাঠ হবে কি না তা নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয়।
গত সোমবার রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে নিজেদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে বলা হয়, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি পালন করা হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
হাসিনাকে ফেরত দেয়ার বিষয়ে যা বলল ভারত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ কারওয়ান বাজার এলাকার শীর্ষ চাঁদাবাজ রাসেল জমাদ্দার গ্রেফতার ঢাকার হ্যাটট্রিক হার, খুলনার দ্বিতীয় জয় খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে ‘বিভ্রান্তিকর’ প্রতিবেদন খতমে নবুওয়ত না মানলে ঈমান থাকবে না : মুফতি সাইফুল ইসলাম শেষ নবীর খোঁজে জনকল্যাণমূলক সরকার গঠনে দেশ উপকৃত হবে : জামায়াত আমির রাঙ্গামাটির বন্দুকভাঙ্গা রেঞ্জে ইউপিডিএফের ২ ক্যাম্পের সন্ধান খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার লাদাখের ভূখণ্ড নিয়ে ২ নতুন প্রদেশ চীনের, তীব্র প্রতিবাদ ভারতের

সকল