০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩০, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৫
`

প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন প্রকাশ আজ

-

- মুজিববাদী সংবিধানকে কবরস্থ করা হবে : হাসনাত
- নতুন রাজনৈতিক শক্তি গঠন করা হবে : সারজিস আলম

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের অভিপ্রায় এবং জুলাই অভ্যুত্থানের দালিলিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ ঘোষণা হতে যাচ্ছে। আজ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকেল ৩টায় এটি পাঠ করা হবে। তবে কে ঘোষণাপত্র পাঠ করবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কগণ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাহাত্তরের মুজিববাদী সংগঠনের কবর রচনা করা হবে। সেই সাথে আওয়ামী লীগকে ফাসিবাদী দল হিসেবে ঘোষণার দাবিও জানানো হবে। এর মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হবে যারা আগামীর বাংলাদেশের রাজনীতির নয়ারূপ বাস্তবায়ন করবে।
গত রোববার রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিতব্য ঘোষণাপত্র ঘোষণার অনুষ্ঠানে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের শরিক সবাইকে সংগঠন ও জনতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

লাখ লাখ জনতার উপস্থিতিতে গত ৩ আগস্ট ফ্যাসিবাদ পতনের ডাক দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস রচিত হয় সেদিন। তৎকালীন আওয়ামী প্রশাসন কর্তৃক শিক্ষার্থী, নিরীহ মানুষ হত্যার বিচারের দাবিতে বিরাট এক গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয় কোটাসংস্কার আন্দোলন। ওই দিন ঘোষণা করা হয় ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনাকে হটানোর এক দফা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা এ ঘোষণা দেন। তারপর লংমার্চ, লাখো জনতার বিক্ষোভের তোপে ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। আত্মগোপনে চলে যান তার সরকারের সর্বস্তরের নেতাকর্মী। পরে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকার গঠনের ১৪৫ দিনের মাথায় জুলাই অভ্যুত্থানকে দালিলিক স্বীকৃতি দিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দিতে যাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরা।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রটি ৫ আগস্টেই হওয়া উচিত ছিল । এটি না হওয়ার কারণে গণমাধ্যম, বুদ্ধিজীবীপাড়াসহ সব জায়গায় ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তিগুলো নানামুখী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। দুই হাজারের বেশি শহীদ ও ২০ হাজারের বেশি আহতের রক্তের প্রতিদানে হওয়া অভ্যুত্থানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। গণ-অভ্যুত্থানকে ঘিরে মানুষের যে আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়েছে এবং ’৭২-এর সংবিধান যে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে, তার একটি দালিলিক প্রমাণ হিসেবে ৩১ ডিসেম্বর জাতির সামনে মুজিববাদী ’৭২-এর সংবিধানের কবর রচিত হবে।

তিনি আরো বলেন, মানুষ যে আকাক্সক্ষা নিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে, সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে ৩১ ডিসেম্বর আগামীর বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র ‘জুলাই প্রক্লেমেশন’ উপস্থাপন করা হবে। ফ্যাসিবাদের পক্ষে লড়াই সংগ্রামকারী পক্ষগুলোকে সাথে নিয়ে ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, জন আকাক্সক্ষার ভিত্তিতেই কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতনের আন্দোলন নেমেছিল ছাত্র-জনতা। সবার আশা-আকাক্সক্ষাকে ধারণের জন্য ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। এটি আগামী বাংলাদেশের রূপরেখার ঘোষণাপত্র। এটা ২৪-এর অভ্যুত্থানের দালিলিক ভিত্তি। তিনি আরো বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি- কোনোটিই রাজনৈতিক দল হবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই বিপ্লবের ঐক্যের প্রতীক, ইউনিক একটা প্ল্যাটফর্ম, এটা আমাদের ইউনিটির সিম্বল হিসেবে থাকবে। কখনো রাজনৈতিক দল হবে না। নতুন রাজনৈতিক দল অবশ্যই অন্য কোনো নামে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ঘোষণা করব। সেটা সংবিধানে যুক্ত করে সেকেন্ড রিপাবলিক করার দায়িত্ব সরকারের।
ঘোষণাপত্রের খসড়ায় যা আছে : বিভিন্ন পক্ষের কাছে পাঠানো খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এতে ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে দেশে মানুষের শোষণ-শাসন ও নির্যাতন-নিপীড়নের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ’৭১-এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা উল্লেøখ করে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া লাখো মানুষের স্বপ্নকে চূর্ণ করেছে ১৯৭২-এর সংবিধান। একই সাথে ক্ষমতার স্বার্থে তৈরি এ সংবিধান গণতন্ত্র ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা প্রসারিত করেছে। আরো বলা হয়েছে, সামরিক শাসন ও রাজনৈতিক স্বার্থে সেই সংবিধানকেও সংশোধন করে রাষ্ট্রকে দুর্বল করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলে দেয়া হয়েছে। ওই খসড়ায় ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। যার মাধ্যমে বেশ কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, সরকারি কর্মকর্তারা, শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমন্বয়ে গত ১৫ বছরে কোটি কোটি টাকা বাইরে পাচার হয়েছে। বিভিন্ন ন্যারেটিভ তৈরির মাধ্যমে বিরোধী মতকে সহিংস দমনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়েছে। তিনটি অবৈধ নির্বাচন করেছে, জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়েছে। সরকারি চাকরি আওয়ামী লীগের নিজস্ব সম্পত্তিতে পরিণত করেছে। এসব প্রেক্ষাপটসহ সর্বশেষ শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের উল্লেখ করে ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, তাই আমরা (ছাত্র-জনতা) বাংলাদেশের ছাত্র ও সাধারণ মানুষ মর্যাদা, সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যাব।
উল্লেখ্য, ওই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন উপদেষ্টাসহ সর্বমোট ১৫৮ জন সমন্বয়ক শপথ গ্রহণ করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement