রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২২
আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য ও পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি কর্মকর্তাদের নিজ নিজ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, কৃষিপণ্য সংরক্ষণ, সার সরবরাহ এবং শিল্প এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চারটি বিভাগের ৩১টি জেলার কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় যুক্ত হয়ে এই নির্দেশ প্রদান করেন তিনি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কর্মকর্তারা এই ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন। কনফারেন্সে ১৯ জন বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ পুলিশ প্রধান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পর্যায়ের কর্মকর্তা বক্তব্য রাখেন।
কনফারেন্সের সমাপনী বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কর্মকর্তাদের বক্তব্য ও মতামত আগামী দিনে সরকারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এটা আমার জন্য প্রথম সুযোগ ছিল আপনাদের সাথে কথা বলার। অনেক কিছু শিখলাম, অনেক বিষয়ে নিজেকে অবহিত করলাম। এটি আমাদের কাজে সহায়ক হবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সামনে রমজান আসছে, রমজানকে কেন্দ্র করে বাজার মূল্যের দিকে আপনারা বিশেষভাবে নজর রাখবেন। শুধু বাজার মূল্য নয়, জিনিসপত্র আনা-নেয়া আরো কিভাবে সহজ করা যায় সে বিষয়েও কাজ করবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য একটি বড় ইস্যু। চেষ্টা করা হচ্ছে কিভাবে এটাকে আয়ত্তে আনা যায়। আগের থেকে আয়ত্তে আনারও সুযোগ বর্তমানে আরো বেশি সৃষ্টি হয়েছে। সেই সুযোগটা ব্যবহার করে দ্রব্যমূল্য আয়ত্তে আনার ক্ষেত্রে আমরা যেন প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকি।’
তিনি আরো বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ওপর বিশেষ নজর দেয়া আমাদের খুব দরকার। এটার ওপর জোর দেয়ার অনুরোধ করছি।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার যে ১৫টি কমিশন গঠন করেছে তার মধ্যে বেশ কয়েকটি কমিশন শিগগিরই তাদের রিপোর্ট প্রদান করবে। এসব প্রতিবেদনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু হবে, নাগরিকদের সাথেও আলোচনা হবে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে নির্বাচনের একটি পরিবেশ তৈরি হবে। রিপোর্টের প্রতিক্রিয়া কী হবে সে বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা, যাতে করে শান্তিপূর্ণভাবে সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করা যায়।
প্রধান উপদেষ্টা পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘কোন কোন দ্রব্যের অভাব হলে মানুষের কষ্ট হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। যেমন সারের অভাব হলে কৃষকের কষ্ট হয়। তাই কোনো জিনিসের অভাব হওয়ার আগে আমরা যেন সরকারের উচ্চপর্যায়ে খবর দিতে পারি যে এই পণ্যের অভাব হতে পারে।
এখানে এই পরিস্থিরি সৃষ্টি হতে পারে সে খবরও দিতে হবে। যেমন আমরা সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পরপরই বন্যা হলো। এ ধরনের আকস্মিক পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করা যায়, এর প্রস্তুতিও রাখতে হবে।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রতিযোগিতার আহ্বান জানিয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নিজেদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা করা যেতে পারে- কোন জেলা ভালো করল। প্রতিযোগিতা অর্থাৎ নিজেদের মধ্যে গ্রেডিং করা যেমন আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেয়েছি। শাস্তির জন্য না, বরং নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে আসা এর উদ্দেশ্য। এই একটা শ্রেণিবিন্যাস যদি করা যায়- তাহলে খুব ভালো হবে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, একটা বড় ধরনের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন যদি আমাদের কাজে কর্মে প্রতিফলিত না হয় তাহলে খুব দুর্ভাগ্যজনক হবে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই অভ্যুত্থানের জন্ম হলো সেটাকে ধারণ করতে হবে। যে কাজ করব সেটা দেখে মানুষ যেন মনে করে বড় পরির্তন হয়েছে। পরিবর্তনটা যেন চোখে লাগে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ। তিনি জানান, শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা বাকি চার বিভাগের ৩৩টি জেলার কর্মকর্তাদের সাথে একই ধরনের ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেবেন।
তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’র উদ্বোধনী খামে স্বাক্ষর : তারুণ্যের উৎসব ২০২৫-এর উদ্বোধনী খামে স্বাক্ষর করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনায় ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ স্লোগানকে সামনে রেখে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে তারুণ্যের উৎসবের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচি আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত চলমান থাকবে।
তারুণ্যের উৎসব বিপিএল ২০২৫-এর সহযোগিতায় বিভিন্ন কমিউনিটি এনগেজমেন্টের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে খেলাধুলার প্রসারে কাজ করবে। এর মধ্যে থাকবে তরুণদের জন্য স্থানীয় ক্রীড়া টুর্নামেন্ট এবং কমিউনিটি ক্রিকেট ক্লিনিক, যা তাদের অংশগ্রহণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
বিভিন্ন ফ্যান জোনে ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্টল থাকবে। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক রান্নার পরিচিতি ও স্থানীয় ব্যবসার প্রচার করা হবে, যা দেশীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরবে। তরুণদের মধ্যে খেলাধুলার প্রসারে কাজ করবে। এর মধ্যে থাকবে তরুণদের জন্য স্থানীয় ক্রীড়া টুর্নামেন্ট কমিউনিটি ক্রিকেট ক্লিনিক, যা তাদের অংশগ্রহণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
ফ্যান জোনগুলোতে দেশী শিল্পীদের সৃষ্টিশীলতা প্রদর্শনের জন্য শিল্প প্রদর্শনী আয়োজন করা হবে। এটি অনেক শিল্পীকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেবে এবং একই সাথে ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক শিল্পের উদযাপন হবে।
স্থানীয় জনগণ এবং স্কুল সংগঠনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক দল ম্যাচের আগে ও পরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়ে স্টেডিয়ামগুলোকে পরিষ্কার রাখবে।
পিলাখানা হত্যকাণ্ডের ঘটনা সুষ্ঠু পুনর্তদন্ত দাবি : পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু পুনর্তদন্ত দাবি করেছেন শহীদ সেনা পরিবারের সদস্যরা।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎকালে এ দাবি জানান তারা।
একইসাথে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার দাবিও জানিয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলাপকালে শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের দুঃখদুর্দশা ও পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার কিভাবে তাদের ওপর মানসিক নিপীড়ন ও হয়রানি করেছে সেসবের বর্ণনা দেন। তারা জানান, বিচারের দাবি জানাতে গেলে তাদের ওপর অমানুষিক নিপীড়নও করা হয়েছে। সত্য বলা থেকে বিরত রাখতে তাদের ওপর নানা অত্যাচার চালানো হয়েছে।
শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, ঢাকা সেনানিবাসের মইনুল রোডে শহীদ সেনা পরিবারকে পুনর্বাসনের যে প্রচারণা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার চালিয়েছে তা সর্বৈব মিথ্যা। কোনো শহীদ পরিবারকে সেখানে কোনো বাসা বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
শহীদ পরিবারে সন্তানদের বিনা বেতনে লেখাপড়াসহ শহীদ পরিবারকে দেয়া আরো অনেক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি বলেও জানান তারা।
এত বছরেও এ হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত না হওয়ার বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এত বছর ধরে এ হত্যাকাণ্ডের তথ্য গোপন রাখতে পারা এটা একটা অবিশ্বাস্য বিষয়। আজ আপনাদের কাছ থেকে অনেক বিষয়ে জানতে পারলাম।’
প্রফেসর ইউনূস আরো বলেন, ‘আমাদের যতটুকু সার্মথ্য আছে তা দিয়ে এ সংক্রান্ত সব তথ্য প্রকাশ করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব এ ঘটনার সব তথ্য একত্রিত করতে হবে। সারা দেশের মানুষ এ হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী। জাতির পক্ষ থেকে আমরা অনুভব করি যে, এ হত্যাকাণ্ডের বিচার আমাদের করতেই হবে।’
এ সময় অনথ্যানথ্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদসহ আরো অনেকে।
সরকারের পক্ষ থেকেই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করা হবে : প্রেসসচিব
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাক্সক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে।
গতকাল সোমবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্রটি প্রস্তুত করা হবে। এতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিত, ঐক্যের ভিত্তি ও জনগণের অভিপ্রায় ব্যক্ত হবে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যেই সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হবে এবং জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই জানানো হয়, লিখিত বক্তব্যের বাইরে কোনো প্রশ্ন নেয়া হবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা