সংবিধানকে কবর দেয়ার কথা বললে কষ্ট লাগে : মির্জা আব্বাস
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে লেখা সংবিধানকে কবর দেয়ার কথা বললে কষ্ট পান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমি বলতে বাধ্য, ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, সম্মুখ সারি থেকে যুদ্ধ করেছি। যুদ্ধে আমার কাছের অনেক বন্ধু-বান্ধব শহীদ হয়েছেন। শহীদের রক্তের বিনিময়ে লেখা সংবিধান, সেই সংবিধানকে যখন কবর দেয়ার কথা বলা হয় তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে।
গতকাল নয়াপল্টন আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সাথে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভায় মির্জা আব্বাস বলেন, ওই সংবিধানে যদি খারাপ কিছু থাকে নিশ্চয়ই সেটা বাতিলযোগ্য। তবে সংবিধান রাফ খাতা নয় যে ছুঁড়ে ফেলব। যদি নতুন কোনো সংবিধান লিখতে হয় তাও তো লিখতে হবে যে, ‘আগের অমুক সালের সংবিধান’ বাতিল করে এই সংবিধান জারি করা হলো। সুতরাং এই সংবিধানই সংশোধন করা যাবে। সংবিধানে স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসছে। এই সংবিধানকে যারা মিস ইউজ করেছে, যারা অপব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। মাথাব্যথা হলে কি মাথা কেটে ফেলতে হয়? মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হয় না, ওষুধ খেতে হয়। তিনি বলেন, দেশের সংবাদপত্র আগেও স্বাধীন ছিল, বরাবরই স্বাধীন। কিন্তু সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই, মালিকপক্ষ যা বলে তাদের তাই করতে হয়। এর বাইরে কিছু করার নেই।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই নেতা বলেন, দু’দিন আগেও পতিত স্বৈরাচারের দোসরকে সচিবালয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এভাবে আপনারা কী সংস্কার করবেন? জাতির মনে প্রশ্ন জাগে, আমার মনেও জাগে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ভুল বুঝবে না। কবর দিয়ে দেবো, মেরে ফেলব, কেটে ফেলব; এই কথাগুলো কিন্তু ফ্যাসিবাদের মুখের কথা। এ কথাগুলো কিন্তু ভালো কথা নয়। জাতি তাকিয়ে আছে তোমাদের দিকে, আমরাও তাকিয়ে আছি তোমাদের দিকে। তোমাদের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা) মুখ থেকে এ ধরনের কথা আমরা আশা করি না।
মির্জা আব্বাস আরো বলেন, জাতির মনে প্রশ্ন জাগে, আমারও জাগে আওয়ামী লীগকে কি আবার ফিরে আসার রাস্তা করে দিচ্ছি? এই যে আজকে বৈষম্যমূলক কথাবার্তা বলা হচ্ছে, এই কিছুক্ষণ আগেও বলা হয়েছে যে, আমাদের ছেলেমেয়েরা যারা নাকি আন্দোলনের স্ফূলিঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে ৫ আগস্ট তারা এককভাবে এই আন্দোলনকে নিজেদের করে নিতে চায়। কিন্তু আপনারা দেখেছেন, আমরাও জানি, আমরাও দেখেছি, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন নিভু নিভু তখন কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সামনে এগিয়ে আসে, সাধারণ মানুষ সামনে এগিয়ে আসে, আমরা এগিয়ে যাই। আমাদের বিএনপির রাজনৈতিক কর্মীই ৪৬২ জন মারা গেছে এর মধ্যে। নিশ্চয় নেতৃত্বে একজন থাকবে, পেছনে হাজারো লোক থাকবে কিন্তু এককভাবে সাফল্য কারো দাবি করা ঠিক না। এতে কিন্তু জনমনে বিভেদ সৃষ্টি হবে।
মির্জা আব্বাস বলেন, কিছু লোক দেশের বাইরে থেকে সরকার গঠন করে ফেলেছেন বলে মনে হয়। তাদের কথাবার্তার যে ঝাঁঝ, আজকে আমাদের ছাত্র ভাইদের কথাবার্তার ঝাঁঝ একই রকম। আমরা তাহলে ’৭১ সালে কী করলাম? আমার প্রশ্ন এই জায়গায়, ’৭১ সালে জাতি কী করল? আমরা কি অন্যায় করেছিলাম? আমি জানি, একটা পক্ষ বলবে, হ্যাঁ, ওই দিন পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে অন্যায় করেছেন।
কথাবার্তা বলার সময় একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, আমাদের একটা ভালো প্রতিবেশী নাই। মাথায় রাখতে হবে, আমাদের দেশের পাশে যারা আছে তারা আমাদের স্থির থাকতে দিতে চায় না। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা ওদের সুযোগ দিতে চাই না, সুযোগ দেবো না। আজকে বাংলাদেশ নিয়ে কত কথা বলছে, কেউ চট্টগ্রাম নিয়ে যায়, কেউ লালমনিরহাট নিয়ে যায়, কেউ দিনাজপুর নিয়ে যায়। হরিলুটের মাল কি বাংলাদেশ? না, সম্ভব না।
এ মত বিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন, যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার, ফরহাদ হোসেন, সাইদুর রহমান মিন্টু (দফতর), ফজলে রুবায়েত পাপ্পু প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা