‘ভিআইপি’ বন্দীদের গেটে সিসি ক্যামেরা
- মনির হোসেন
- ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- হাসিনার সাথে সালমানের মোবাইলে কথা বলার তথ্য ভুয়া
- ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ কারাগারে সাবেক ৩ মন্ত্রীর স্বজনদের সাক্ষাৎ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা নিরাপদে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সারা দেশে যেসব প্রভাবশালী উপদেষ্টা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী থেকে শুরু করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মীরা ধরা পড়ে ইতোমধ্যে কারাগারে গেছেন, তাদের প্রত্যেকের গেটের সামনে এবং বারান্দায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। শুধু রুমের সামনেই সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়নি, তাদের আসা-যাওয়ার সময় আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর এবং লাগেজ স্ক্যানার দিয়েও তল্লাশি করা হচ্ছে। মোট কথা ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপি বন্দীদের ক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
কারাগার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়ে গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীদের তারা নিয়মকানুনের মধ্যে রেখেছেন। তাদের কাউকে কোনো বাড়তি সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তাদের প্রত্যেকের চলাফেরা সিসি ক্যামেরা দিয়ে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কারাগার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিভিশন সেলে (প্রত্যেককে আলাদা আলাদা সেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে) আটক সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো: কামরুল ইসলামের সাথে তার পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করেন। কারাবিধি অনুযায়ী আধঘণ্টা তাদের সাক্ষাৎ হয়। প্রতি ১৫ দিন অন্তর তারা তাদের স্বজনদের সাথে দেখা করা ও স্বজনরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিতে পারছেন। একই দিন ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে আটক নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম ও সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীরের সাথে পৃথকভাবে তাদের সাথে স্বজনরা সাক্ষাৎ করেছেন।
গতকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সাথে তার স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে সাক্ষাৎ করে গেছেন। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী হিসাবে তিনি যতটুকু সুবিধা পান ততটুকুই তাকে দেয়া হয়েছে। তারা আধঘণ্টার মতো সাক্ষাতে পারিবারিক ও মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলাপ হয়েছে। সাক্ষাতের সময় কারা কর্মকর্তা ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, কামরুল ইসলাম কারাগারের বাইরে যেভাবে চিল্লাচিল্লি করতেন এখন তিনি সেখানে চিল্লাচিল্লি করেন না। জেলখানায় আসার পর তার মুখে এখন কোনো সাউন্ড নেই।
কর্মকর্তারা জানান, একইভাবে গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে আটক সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর এবং নরসিংদী-২ আসনের সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলামের সাথেও তাদের স্বজনরা সাক্ষাৎ করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, ডিভিশনপ্রাপ্ত যেসব ভিআইপি বন্দী গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার, নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার এবং কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আছেন। এর মধ্যে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে রয়েছেন ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে কারা কর্মকর্তারা বলেন, এসব ভিআইপি বন্দীর সাথে কোনো না কোনো দিন তাদের স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার তারিখ নির্ধারণ আছে। তবে বন্দীর সংখ্যা কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। কারণ অনেকে রিমান্ডে যান। তবে কারাগারে সব কিছুই নিয়মের মধ্যেই হচ্ছে জানিয়ে তারা বলেন, ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী ও সাধারণ বন্দীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাবেক আটক নেতাকর্মীকে কঠোর মনিটরিং সিস্টেমের মধ্যে রাখা হয়েছে। মনিটরিং সিস্টেমটা কী- জানতে চাইলে তারা বলেন, তাদের প্রত্যেকের রুমের সামনে এবং বারান্দায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সেটি দিয়ে তাদের সব কিছু মনিটরিং করছি। একই সাথে তারা যাতে কোনোভাবেই অবৈধভাবে বাইরের কারো সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে না পারেন, সে জন্য শক্তিশালী জ্যামার লাগানো হয়েছে। নতুন করে এখন কারগারের গেটে ডগস্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। শুধু তাদের রুমে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছি তা কিন্তু নয়, আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তাদের বডি স্ক্যান করছি। লাগেজ স্ক্যানার দিয়ে তাদের মালপত্র স্ক্যান করে তারপর সেলে প্রবেশ করাচ্ছি। তবে এসব বন্দীকে তাদের প্রাপ্য সব সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে, কোনো হয়রানি করা হচ্ছে না।
গতকাল সন্ধ্যার পর ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন মো: জাহাঙ্গীর কবিরের সাথে ভিআইপি বন্দীদের বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার কারাগারগুলোতে যেসব ডিভিশনপ্রাপ্ত (জলসিঁড়ি/চম্পাকলি) বন্দীরা রয়েছেন তাদেরকে আমরা নিয়মিত মনিটরিংয়ে রেখেছি। কোনো বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি না। ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে না-কি কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে তারই প্রভাবশালী উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান কথা বলেছেন। এ খবরের কোনো সত্যতা পেয়েছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ছিল একদম ভুয়া খবর। এর পর তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শেখ হাসিনার সাথে যদি কোনো টোকাইও কথা বলে, তাহলে সেটা সাথে সাথে ভাইরাল হয়ে যায়। আর সালমান এফ রহমানের মতো লোক তার সাথে মোবাইলে কথা বলেছেন! এটা ভাইরাল হলো না। আসলে এসব হচ্ছে আজগুবি কথা। এসবের কোনো ভিত্তি নেই। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ডিআইজি প্রিজন জাহাঙ্গীর কবির বলেন, হাইসিকিউরিটি কারাগারে কঠোর মনিটরিং করা হচ্ছে সব বন্দীকে। এর পরও কারাগারের কেউ কোনো বন্দীকে অনৈতিক কোনো সুুবিধা দিয়ে থাকলে আর সেটি প্রমাণিত হলে ওই কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
উল্লেখ্য ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের পর গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। শুধু তারা নন, পালানোর তালিকায় রয়েছেন তার মন্ত্রিপরিষদের আরো অনেক সদস্য। অনেকে আবার পালাতে গিয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তারাই এখন রয়েছেন কারাগারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা