সংস্কার এখন না হলে কখনোই করা যাবে না
ঐক্য সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংলাপ- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এই সময়ে রাষ্ট্রের কিছু সংস্কার করতে না পারলে আর কখনোই করা যাবে না। আমরা ২০০৭ সালে একবার চেষ্টা করেছিলাম, কিছু কিছু করেছিলামও। কিন্তু সেগুলো থাকেনি ক্ষমতাসীন দলের কারণে। এখন যদি না করতে পারি, সংবিধানের দোহাই দিই আর অন্যান্য আইনের দোহাই দিই, তাহলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা রক্ত দিয়েছেন, তাদের প্রতি অন্যায় হবে। বলছি না যে আমরা চার-পাঁচ বছর থাকব। এক বছরের মধ্যেই সংস্কার করা সম্ভব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবশ্যই দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা হতে হবে। সেই জায়গায় বিভিন্ন রকমের মানুষ আসবে। তারা একটা নির্বাচনের জন্য নীতিমালা তৈরি করতে পারে। তখন আলাদা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হবে না। দেশে নির্বাচনী আইনে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।
ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে দুই দিনের জাতীয় সংলাপের দ্বিতীয় দিন গতকাল ‘সংস্কারের দায় ও নির্বাচনের পথরেখা’ শীর্ষক অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ এ সংলাপের আয়োজন করেছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ধৈর্য ধরতে হবে। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। নির্বাচন আইন পরিবর্তন করলে হবে না। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও পদ্ধতির পরিবর্তন করলেই নির্বাচনী আইন পরিবর্তন হয়ে যাবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে বলেছিলাম, এবার যারা নির্বাচনে যাবে; আম-ছালা দুটোই যাবে। আদতে সেটাই হয়েছে।
তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনে উৎসাহিত করা উচিত মন্তব্য করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাদের নিরুৎসাহিত করা ঠিক নয়। আমরা মনে করি নতুন রক্ত প্রয়োজন। তাদের নিরুৎসাহিত করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ, তাদের উৎসাহিত করুন। তারা আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তাদের যদি উৎসাহিত না করেন, তাহলে আমরা এ জিনিসই (আওয়ামী লীগের পতন) দেখব। আজ না হয়, ১০ কিংবা ১৫ বছর পরে আবারো দেখব।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে এই উপদেষ্টা বলেন, আমরা দেশের স্থিতিশীলতা চাই। আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি। আপনারা, তারাও (ভবিষ্যৎ ক্ষমতাসীনরা) বড় চ্যালেঞ্জে পড়বেন। সামনে আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এটা শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসবে দেশের বাইরে থেকে। আমাদের নতুন প্রতিবেশী তৈরি হচ্ছে। সেটা স্বাভাবিক নয়, ভিন্নধর্মী প্রতিবেশী। আরাকান এখন নতুন বাস্তবতা। আমরা এত দিন বিবেচনা করতে পারিনি। এখন বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর আয় নিয়ে এম সাখাওয়াত বলেন, এখনকার রাজনৈতিক দলগুলো মিস্টার আলম-টালমের মতো লোকের পয়সা দিয়ে চলছে। এখনো রাস্তায় বলা হচ্ছে, আমরা ১৬-১৭ বছর ক্ষমতায় ছিলাম না, নির্বাচন করতে পয়সা লাগবে, সেটার জন্য চাঁদাবাজি করছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। এই জায়গায় একটা বড় সংস্কার প্রয়োজন। আমরা দেখছি, একটা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থেকে বহিষ্কার করছেন, কিন্তু এটা এনাফ (পর্যাপ্ত) নয়।
ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে উপদেষ্টা সাখাওয়াত বলেন, আমাদের ছাত্রদের নিয়ে রাজনীতি করতে গেলে সেটার পরিণতি কী, সেটা দেখতে হবে। ছাত্রদের রাজনীতি অবশ্যই করা উচিত। তবে সেটা অবশ্যই ছাত্র সংসদের মাধ্যমে হওয়া উচিত। ছাত্রদল বা ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, শেষ পর্যন্ত লীগ হতে হতে বাচ্চা লীগও হয়ে গেছে। সেটার পরিণতি কী, সেটা দেশ দেখছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল পরিচালনার জন্য আইন থাকা প্রয়োজন বলেও মনে করেন সাখাওয়াত হোসেন। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান আইন করেছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলো মানেনি। একটা আইন অবশ্যই প্রয়োজন। না হলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর যে করণীয়, তা দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দল তৈরি হয়, কোন্দল তৈরি হয় এবং এক দল আরেক দলকে খেয়ে ফেলে।
সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমি জীবনভর অনেক আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছি, বিজয়ী হয়েও বারবার হেরে গেছি। অনেক বিজয় এসেছিল, ধরে রাখতে পারিনি। তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন; নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, গুম হয়েছেন কিংবা যারা চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে জীবন দিয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ ধরে রাখতে পারব তো? নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা সবসময়ই বলি, ভালো চাই, আরো ভালো চাই। আমাদের পাওয়ার আকাক্সক্ষার শেষ নেই। কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সুযোগ করে দিয়েছেন গণ-অভ্যুত্থানের বিজয় ধরে রাখার। কিন্তু চাই, চাই করে গেলে সব হারাব আমরা, আমরা আক্ষেপ করব। বিজয় ধরে রাখতে তাই সবার সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের লক্ষ্যে দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তাতে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে সংলাপে অনেকে যে মন্তব্য করেছেন সে প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান রাজনীতিক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ঐক্যে ফাটল ধরার কথাটি সঠিক নয়। আমাদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে নানা বিষয়ে। এটি গণতন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্যই দরকার।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে সারা দেশে ‘হুলুস্থূল’ পরিস্থিতি তৈরি করেছেন উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন অভিযোগের সময় নয়। এখন সময় সহযোগিতা করার। কোনো রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন একা সব করে ফেলতে পারবে না। পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে।
গণফোরামের কো-চেয়ারম্যান সুব্রত চৌধুরী বলেন, সংস্কারের ক্যানভাস বড় করে বড় বিপদ ডেকে আনা হবে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা অক্টোবরের মধ্যে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেবে। তাহলে নির্বাচন আর দেরি করবেন কেন? নির্বাচন যত ঝুলিয়ে দেবেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য, বিভেদ আরো বেশি দৃশ্যমান হবে।
নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে এখন জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ করা যেতে পারে। বাংলাদেশে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে তিন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। তিন ধরনের সংস্কৃতিতে গড়ে উঠেছে এই প্রজন্ম, এভাবে চলতে থাকলে তারা তো প্রথমে রাজনৈতিকভাবে, পরে হয়তো একদিন সশস্ত্রভাবে সংগঠিত হবে। তারা এভাবে তারা একটি গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাবে। তাই এক ভাষায় একমুখী উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের দিকে যেতে হবে। দেশের সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ ঘোচাতে আইনি ও সামাজিক কাঠামোর সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন নূরুল কবীর। সংলাপের এই অধিবেশনে সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন, দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ উদ্দিন।
কেউ ক্ষমতায় যেতে ব্যস্ত, খুনিদের বিচারে গুরুত্ব নেই : অ্যাটর্নি জেনারেল
বর্তমানে কেউ জমি দখলে ব্যস্ত, কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ব্যস্ত; কিন্তু খুনিদের বিচারের জন্য যে পরিমাণ চাপ প্রয়োজন ছিল, সেদিকে ফোকাস করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘আপনারা যত বেশি চাপে রাখবেন, আমরা তত বেশি এই বিষয়টাকে (বিচার) সামনের দিকে এগিয়ে নিতে দৃঢ় চেষ্টা থাকব। আপনারা যত বেশি অতন্দ্র প্রহরীর মতো দায়িত্ব পালন করবেন, আমরা রাষ্ট্রকে এবং জনগণের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তত বেশি এজেন্ডা-ভিত্তিক সাহসিকতা নিয়ে এগিয়ে যাবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আজকে যে ঐক্যের প্রয়োজন, ঐক্য ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়। সংস্কার ছাড়া যৌক্তিক কোনো বাংলাদেশ আপনাদের উপহার দেয়া সম্ভব নয়। ঐক্য ছাড়া, সংস্কার ছাড়া এই বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে করাটা কঠিন এবং দুরূহ।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল চ্যালেঞ্জের জায়গাটা কী সেটা আপনারা আমাদের বলবেন। আমরা সেটায় যেন যৌক্তিক সমাধানের জায়গায় যেতে পারি; কিন্তু সেটা সুনির্দিষ্টভাবে আমরা পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে চ্যালেঞ্জের প্রধান জায়গাটা হলো, জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্তের বিনিময়ে যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা রাস্তায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছিলাম, সেই লক্ষ্য, সেই ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা, সেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত মিলিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করার যে ঐক্য, সেই ঐক্যটাতে যে ফাটল ধরেছে সেই ফাটলটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।’
সংস্কারের বিষয়ে সরকার একা সিদ্ধান্ত নেবে না : উপদেষ্টা মাহফুজ
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে সংস্কারের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
মাহফুজ বলেন, ‘কমিশন থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর সব রাজনৈতিক দল এবং স্টেকহোল্ডারদের সাথে বৃহত্তর পরিসরে আলোচনার পরিকল্পনা করছে সরকার। যা জানুয়ারিতে হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংস্কারের বিষয়ে সরকার একা কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।’
তিনি বলেন, ‘কতটা সংস্কার সম্ভব এবং কোনটা স্বল্পমেয়াদি আর কোনোটা দীর্ঘ সময়ের জন্য সব কিছুই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। এরপর জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে পরিষ্কার হবে যে আমাদের অগ্রাধিকারমূলক সংস্কারগুলো কী এবং আমরা কী করতে সক্ষম হবো।’
মাহফুজ বলেন, ‘রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে ঐক্য দিয়ে কী করবেন। রাষ্ট্র প্রধানত তার প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। আমরা ’৭২-এর সংবিধানের সমালোচনা করছি কারণ এর দ্বারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ধ্বংস হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা না যায়, তাহলে এ সংস্কার ক্ষমতার পরিবর্তন ছাড়া আর কিছুই দিতে পারবে না।’
ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিমূলক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে উপদেষ্টা মাহফুজ বলেন, ‘১৯৭১ সালের পর আমরা দেশকে সংস্কার ও প্রতিষ্ঠা করতে বড় একটা সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা যদি রাষ্ট্রের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে ব্যর্থ হই, তাহলে সবকিছু ভেস্তে যাবে।’
গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সরকারকে জবাবদিহি করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ‘আমরা চাই জনগণ সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করুক। কেননা এটি সরকারের কাজের গতি ত্বরান্বিত করে। জনগণের ব্যাপক সমালোচনা সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
সৈয়দ আবদুল্লাহর সঞ্চালনায় অধিবেশনে আরো বক্তব্য দেন- নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ।
২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হবে বঙ্গোপসাগর : অধ্যাপক তিতুমীর
দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দু আর ‘হিমালয়’ নয়, ‘বঙ্গোপসাগর’ উল্লেখ করে এটির নেতৃত্ব দেয়ার পরিবেশ তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
অধ্যাপক তিতুমীর বলেন, ‘সরকার এমন পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্ব দিতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রবিন্দু আর হিমালয় নয়, কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। সেটি নেতৃত্ব দেয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি পরিবর্তন হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘২০২৫ সালে সবচেয়ে বড় রকমের পরিবর্তন হবে। হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরে পরিবর্তন হবে। এ অঞ্চলে কোনো নেতা নেই, যিনি বঙ্গোপসাগরে বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয়ভাবে নেতৃত্ব দান করতে পারবেন। আমাদের নতুন প্রতিবেশী আসতে পারে, নতুন রাষ্ট্রের উত্থান হতে পারে। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়া উচিত; দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে, ভূরাজনৈতিকভাবে নেতৃত্ব দান করবে।’
অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, সংস্কার ও নির্বাচনকে পাল্টাপাল্টি না বলে ন্যূনতম ঐক্যের দিকে যেতে হবে। এর বাইরে যেহেতু রাজনীতিটা ট্রানজেকশনাল, তাই কোনোমতে ঐক্য হবে না।
অর্থনীতি মন্দা অবস্থায় আছে জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থনীতির উৎপাদন সম্পর্কে কোনো কথাবার্তা নেই। সেটি আসলে আইএমএফ কায়দায় চলবে না, অন্য কোনো কায়দাও চলবে না। দেশজ কায়দায় চলতে হলে দৃষ্টান্ত তৈরি করা যাবে। কিন্তু সামগ্রিক সংস্কার করা যাবে না। সরকারের একটাই লক্ষ্য থাকতে হবে, দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে। চারটা থেকে পাঁচটা দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশে সম্প্রতি অনুমোদন দেয়া ১২ ব্যাংকের স্পন্সর কোথা থেকে পেয়েছে, তা বের করা এনবিআরের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতা মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা রাখা যায় কি না, তা সংবিধান সংস্কার কমিটিকে ভাবতে হবে। বাহাত্তরের সংবিধান রচনার সময় শেখ মুজিবও কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেননি। সংবিধান নতুন করে রচনার সময় এ অঞ্চলের ধর্মীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে।’
সংস্কার প্রস্তাবনায় তিনি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ দেন লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের যে সংবিধান তা বাতিল হয়ে গেছে। সংবিধান পরিবর্তন করার লক্ষ্যে একটি লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে হবে, গঠন করতে হবে একটি গণপরিষদ। এ গণপরিষদ সংবিধান রচনা করবে নতুন করে। এই গণপরিষদ পরে আইনসভা বা জাতীয় সংসদে পরিণত হতে পারে। প্রয়োজনে গণভোট করা যেতে পারে।’ তবে তুষারের কথার বিরোধিতা করেন ছাত্রদলের গবেষণা সেলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবীব। তিনি বলেন, ‘যে সংবিধানের ১০৪ ধারা মতে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছে, আপনারা শপথ নিয়েছেন, তা এত সহজে বাতিল করে দেবেন? সংবিধান সংস্কার করতে গেলে প্রয়োজন গণভোট, থাকতে হবে জনগণের ভাষ্য আর জনগণের কথা বলবেন তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। জনগণের প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে কেবল ১০-১২ জনের পাঠচক্রে সংবিধান সংস্কার করে ফেলবেন?’
জাতীয় স্বার্থে ঐক্য প্রয়োজন : তৌহিদ হোসেন
দেশের জাতীয় স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, দ্বিমত থাকতে পারে। একই বিষয়ে বিভিন্ন সমাধান থাকে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে ঐক্য থাকা প্রয়োজন। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই আছে। যেসব দেশে দুটো বড় দল আছে সেখানেও আলোচনার ভিত্তিতে অনেক কিছু নির্ধারিত হয়। কিন্তু আমাদের দেশে গত ৫২ বছরে তা দেখিনি। সব সময় সরকার যেটা মনে করেছে তাই করেছে।
গতকাল ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, অনেক সময় সরকারি দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেও বিরোধী দল বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের স্বার্থে বৃহৎ ঐক্য প্রয়োজন। সেখানে আলোচনা হবে একতরফা কিছুই হবে না।
দর্শকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আমাদের নলেজেই সেনাপ্রধানের সাথে দেখা করতে গেছেন। কোনো গোপনীয়তা ছিল না।
থাইল্যান্ড মিয়ানমার ইস্যুতে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, মূল আলোচনা তিনটা বিষয় ছিল। তা হলো- সীমান্ত, অপরাধ ও মাদক এবং মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ কী হবে। সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যু ছিল না। আমাকে আমন্ত্রণ জানালে বলেছিলাম এ তিনটা ইস্যুতো রোহিঙ্গাদের স্বার্থ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বলা হয় ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। কিন্তু বাস্তবে দেখেছি উল্টোটা। দেখেছি রাষ্ট্রের চেয়ে একটা গ্রুপ বা অলিগার্কদের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে যিনি প্রধান তার স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সীমান্তের ওপারে প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা এখন আরাকান আর্মির দখলে। তারা বাংলাদেশবিদ্বেষী, রোহিঙ্গাদের জন্যও তারা আশীর্বাদস্বরূপ নয়। তারা নতুন করে ৫০-৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিচ্ছে টেকনাফের দিকে। আরাকান আর্মির পাশাপাশি ভারতও সীমান্ত এলাকায় জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছে।
সীমান্তে এখন যুদ্ধপরিস্থিতি বিরাজ করছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, এখন এ সীমান্ত এলাকা নিয়ে পলিসি রিভিউ করতে হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এমপাওয়ার করতে হবে। টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরির ব্যাটল ফিল্ডের জন্য তৈরি থাকতে হবে সেনাবাহিনীকে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি গোয়েন্দা সংস্থাকে এখন পুনর্গঠনের পাশাপাশি নতুন করে তাদের করণীয় নির্ধারণ করে দিতে পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, এখন আমাদের একটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কিটেকচার গড়ে তুলতে হবে। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের একটা কনসাস গড়ে তুলতে হবে। সিকিউরিটি আর্কিটেকচার বলতে শুধু সীমান্ত প্রহরা নয়; একই সাথে আমাদের আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ফুড চেইন সব কিছুকে এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দক্ষিণ এশিয়ার ভূ রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ভূরাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে আমাদের এখন বাই লেটারেল থিওরি থেকে বেরিয়ে এসে মাল্টি লেটারাল প্রসেসে যেতে হবে। বাই লেটারাল প্রসেসে গেলে সেখানে শক্তিশালী দেশের কর্তৃত্ব দেখানোর সুযোগ তৈরি হয়। এখন সার্কসহ আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে আরো সক্রিয় করতে হবে।
রাজনৈতিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের সংস্কারই এ দেশে হয়েছে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়। এখন রাজনীতির বাইরে কেউ এসে বলবেন, তারা সব কিছু ঠিক করবে রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে সেটি হবে না। জনগণের ম্যান্ডেন্ট নিয়ে পার্লামেন্টে আসুন, তারপর আপনারা যা চাইছেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে করুন।
গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গত ১৫ বছরের পররাষ্ট্রনীতি ছিল গদি রক্ষার নীতি। এখানে কোনো পররাষ্ট্রনীতি, দেশের স্বার্থ ছিল না। সম্পূর্ণ অর্থে একটা সরকার গদি রক্ষার জন্য বিদেশ নীতি সাজিয়েছিল। ফলে দেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তা নানাভাবে বিঘিœত হয়েছিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা