বিদায়ী বছরে ক্ষতবিক্ষত হলেও হারেনি গণতন্ত্র
রয়টার্সের বিশ্লেষণ- ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
- সহিংসতা সত্ত্বেও নির্বাচনগুলোতে প্রাণবন্ত ছিল গণতন্ত্র
- স্বৈরাচারীরা আরো দমনমূলক হয়েছে
নতুন বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে বিশ্ব। এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে বিশ্বের গণতন্ত্র ক্ষতবিক্ষত দেখা গেলেও পরাজয় বরণ করেনি। রয়টার্স লিখেছে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্বকারী ৬০টির বেশি দেশে এ বছর ভোট হয়েছে। সহিংসতা ও বড় রকমের ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে অনেক দেশে। কিন্তু এরপরও গণতন্ত্রের স্থিতিস্থাপক প্রমাণিত হয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’টি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে ফিরেছেন। গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তুমুল প্রতিযোগিতা আর অস্থিরতার ভয় নিয়েও তিনি হোয়াইট হাউজের টিকিট নিশ্চিত করেছেন। শান্তিপূর্ণভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে তিনি নতুন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসছেন। বিদায়ী বছরে মেক্সিকোর মানুষ তাদের সব থেকে রক্তক্ষয়ী নির্বাচন দেখেছে। নির্বাচন ঘিরে সেখানে ৩৭ প্রার্থী বিভিন্ন সময় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সবকিছু ছাপিয়ে নির্বাচনে দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ক্লডিয়া শেইনবাউম।
চারটি মহাদেশের বিভিন্ন দেশে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন নেতারা গদি ছেড়েছেন। নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্রের আসল লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। ভোটারদের ইচ্ছানুযায়ী সুশৃঙ্খলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। অপর দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতে দীর্ঘ সময় মসনদে থাকা দল ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছে। কিন্তু তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে।
গণতন্ত্রের অবস্থা বোঝা কেন জরুরি তা চলতি মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় রাজনৈতিক সঙ্কট সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মিত্র, এশিয়ার চতুর্থ বড় অর্থনীতির দেশটির প্রেসিডেন্ট তিন সপ্তাহ আগে হঠাৎ সামরিক আইন জারি করেন। এরপরই কয়েক ঘণ্টার টালমাটাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। গত ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তার ওই ঘোষণার পরই আইনপ্রণেতারা ও জনগণের প্রবল বিরোধিতা আর বিক্ষোভের মুখে দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। পরে তিনি দুই দফা অভিসংশনের মুখে পড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বরখাস্ত হন।
ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া ও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে কট্টর ডানপন্থীরা সফলতা পেয়েছে। রোমানিয়াতেও একই চিত্র দেখা গেছে, তবে সেখানে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠায় পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ইউরোপ আবার ১৯৩০ এর দশকের মতো কোনো অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে কিনা, যে সময়টায় ফ্যাসিবাদের জাগরণ ঘটেছিল। জর্জিয়া ও মলদোভায় রাশিয়া ঘেঁষা দলগুলো জনমত জরিপের চেয়েও ভালো করেছে।
ইউরোপ ডানপন্থীদের অর্থনৈতিক উদ্বেগের দিকে ঝুঁকলেও একই উদ্বেগ কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে গেছে। যেমন, ব্রিটেনে বামপন্থী লেবার পার্টি কনজারভেটিবদের ১৪ বছরের শাসনের ইতি ঘটিয়েছে। বৈশ্বিক গণতন্ত্র নিয়ে প্রতি বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ফ্রিডম হাউজ’। এ সংস্থার গবেষণা পরিচাক ইয়ানা গোরোখভস্কায়া বলেন, সবমিলিয়ে চলতি বছর শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে বিরুদ্ধে কোনো চেষ্টা হয়নি।
তবে রাশিয়া, ইরান ও ভেনিজুয়েলার নির্বাচনকে ‘ভুয়া’ দাবি করে গোরোখভস্কায়া বলছেন, বিদায়ী বছরে স্বৈরশাসকরা আরো দমনপীড়নমূলক হয়ে উঠেছে। ফ্রিডম হাউজ বলছে, গত জানুয়ারি থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৬২টি নির্বাচনের এক-চতুর্থাংশে ব্যালটবাকশে ভোটারদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। “এই সংখ্যা এতটা বেশি নয় যে গণতন্ত্র তার অবস্থান হারিয়েছে, এর মানে স্বৈরাচারের আরো খারাপ হয়েছে,’ বলেন গোরোখভস্কায়া।
২০২৫ এর জন্য কী বার্তা : নতুন বছরে অল্প কিছু নির্বাচনের সূচি রয়েছে। জার্মানির ভোটাররা ৩ ফেব্রুয়ারি নতুন পার্লামেন্ট গঠন করবে। ২০২৫ সালে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান যেমন স্বাধীন গণমাধ্যম ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা কেমন হবে, সেখানেও নজর রয়েছে। এসব ব্যাপারে ফ্রিডম হাউজ বলছে, তারা খেয়াল রাখবে দ্বিতীয় দফার মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্প কী করেন। ট্রাম্প বলেছেন, মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো দুর্নীতিগ্রস্ত। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রাক্তন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও তাকে নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তিনি অনুসন্ধান বা মামলা করতে পারেন।
আসছে বছর বাংলাদেশ ও সিরিয়ার জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। তুমুল আন্দোলন ও বিদ্রোহে এ দু’টি দেশের স্বৈরশাসক ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়েছেন। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার প্রবল গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন। চার মেয়াদের টানা সাড়ে ১৫ বছর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। তার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচন, বিচারব্যবস্থা, সংবিধান, পুলিশ, প্রশাসন ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। রয়টার্স লিখেছে, বেশির ভাগ মৌলিক সংস্কার কাজ শেষ হলে ২০২৫ সালের শেষ দিকে নির্বাচন হতে পারে বলে মুহাম্মদ ইউনূস ধারণা দিয়েছেন।
অপর দিকে ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর বিদ্রোহীরা দামেস্ক দখল করলে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ পালিয়ে রাশিয়ায় চলে যান। ইসলামপন্থী হায়াত তাহরির আল-শাম দেশটির নেতৃত্বে রয়েছে। হায়াত তাহরির আল-শামকে পশ্চিমা অনেক দেশ ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে বর্ণনা করে। সেখানকার নতুন শাসকরা সহিষ্ণুতা ও আইনের শাসনের কথা বলেছেন। তবে তারা এখন পর্যন্ত নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা