বেক্সিমকোর দায় আর নেবে না সরকার
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ঘিরে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির দায় এ প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, সরকার বেক্সিমকোর শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের তিন মাসের টাকার অতিরিক্ত আর কোনো আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারবে না। বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারলে তা বন্ধ করবে কি-না, সে বিষয়ে বেক্সিমকোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় বেক্সিমকোকেই নিতে হবে। যদি বন্ধ করতে হয় তবে শ্রম আইন অনুসারে শ্রমিকদের পাওনা হিসাব করে মালিকপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার উপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন। সম্প্রতি বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির তৃতীয় সভায় তিনি এ কথা জানিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়।
উল্লেখ্য, অর্থ বিভাগের নির্দেশে ইতোমধ্যে জনতা ব্যাংক বেক্সিমকো শিল্প পার্কে অবস্থিত এই গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন ভাতা বাবদ ১৮০ কোটি টাকা ছাড় করেছে। এই শিল্প গোষ্ঠীর কর্ণধার সালমান এফ রহমান বর্তমানে খুনের মামলায় হাজতে রয়েছেন। তিনি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থ, স্বরাষ্ট্র, কৃষি, শিল্প , গৃহায়ন ও গণপূর্ত, বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা অংশগ্রহণ করেন। জানা গেছে, সভার শুরুতেই বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। জনতা ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সভাকে অবহিত করেন যে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের টাকা আজকে পরিশোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া দুই মাসের বেতনের টাকা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে, ইতোমধ্যে যা ছাড়ও করা হয়েছে।
সভায় বলা হয়, সরকার এ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের পর যেহেতু আর কোনো আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করতে পারবে না সেহেতু বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষের কোম্পানিসমূহের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সে সম্পর্কে সভার অন্য সদস্যদের মতামত আহ্বান করা হয়। এ ছাড়া শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করার জন্য সভাপতি মালিকপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
তবে কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং এ পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব যেন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপর না পড়ে সে বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীসমূহকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়। বলা হয়, প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যেতে পারে। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে বলে সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
সভায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী জানান যে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কোম্পানিগুলোতে অর্ডার না থাকায় এবং কোম্পানি ঋণখেলাপি থাকার কারণে আর পরিচালনা করা সম্ভব না। এমতাবস্থায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষের কোম্পানিসমূহ লে-অফ বা বন্ধ ঘোষণা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া তিনি জানান যে, বেক্সিমকো টেক্সটাইল লি., টেক্সটাইল ও গার্মেন্টসের ১৬টি ফ্যাক্টরিতে কর্মরত সব কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শ্রমিকদের বর্তমানে কারখানায় কোনো কাজ না থাকার কারণে ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রি: থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ধারা মোতাবেক লে-অফ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জানা গেছে, ২০২৪ সালে ব্যাংক থেকে প্রচুর ঋণ নেয় বেক্সিমকো গ্রুপ। ২০২১ সালে জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকোর ঋণ ছিল ১৪ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, এখন যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৪৮২ কোটি টাকায়। এই ঋণের বেশির ভাগই এখন খেলাপি। এখন আবার নতুন করে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ করছে গ্রুপটি। অথচ হাজার কোটি টাকার বেশি রফতানি আয় দেশে ফেরত আনছে না বেক্সিমকো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা