নতুন বাংলাদেশে চাঁদাবাজ দখলদার থাকবে না
- এম. আইউব যশোর অফিস
- ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৩
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও স্বাধীনতার অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ করলে কথা বলে না। তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই প্রতিশোধ নিয়েছে। গত ১৫ বছর এই দলটি গায়ের জোরে গদি দখল করেছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বড়ি বিক্রি করে। অথচ যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তখন কোনো কথা বলে না। জবাব দেয় দেশপ্রেমিকরা। জামায়াত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, শেখ হাসিনার সরকার এ দেশকে এক প্রকার ধ্বংস করেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। ব্যাংকে টাকা নেই। রিজার্ভ শূন্যের কোটায়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে হাহাকার। মানুষ এক প্রকার আগুন খাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা তাতে বাজারে যাওয়া দায় হয়েছে।
তারা সিন্ডিকেট করেছিল। তবে একটি সিন্ডিকেট পালালেও নতুন করে সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে। নতুন করে আবির্ভাব হচ্ছে চাঁদাবাজ ও দখলদার। ৫ আগস্টের পর নতুন এই বাংলাদেশে চাঁদাবাজ ও দখলদার থাকবে না। এসবের মধ্যে আশার কথা হচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা হলেও রিজার্ভ বাড়িয়েছে। ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
বিগত স্বৈরাচারের আমলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামায়াত। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের তারা হত্যা করেছে। সারা দেশে কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দিয়েছে। লাখ লাখ মামলা করেছে। শেষ পর্যন্ত সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে। তারা বাংলাদেশকে জমিদারি নিয়েছিল। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। জামায়াত ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন দেখে। সংগঠনকে যদি আল্লাহতায়ালা রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য কবুল করেন তাহলে সব নাগরিককে সমান চোখে দেখবে। আকাশ-পাতাল ব্যবধান থাকবে না। কারো অধিকার খর্ব করা হবে না।
কেউ কেউ জামায়াত রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে নারীকে ঘরবন্দী করা হবে বলে অপপ্রচার করে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের যোগ্যতা অনুসারে কাজে লাগানো হবে। কুরআনের রাজ কায়েম হলে নারীরা সম্মানিত হবেন। অমুসলিমরা যথাযথ নিরাপত্তা পাবেন।
এ দেশে চাঁদাবাজ দখলদার থাকবে না। থাকবে না কোনো বৈষম্য। ফ্যাসিবাদ, সা¤্রাজ্যবাদ আধিপত্যবাদ মানবে না। মানবিক বাংলাদেশ হবে। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতা না, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সবার সহযোগিতা চাই।
ডা: শফিকুর রহমান আরো বলেন, যশোর একটি পুরনো জেলা। এখানে এখনো কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি মেডিক্যাল কলেজ থাকলেও নেই কোনো পার্ক, জলাকার। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও নেই। এই শহরকে নগরে পরিণত করা দরকার। সারা দেশে সুষম উন্নয়ন হওয়া দরকার। কোনো জেলা যেন উন্নয়ন বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজীজুর রহমান।
জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে আরো বক্তৃতা করেন ঝিনাইদহ জেলা আমির অধ্যাপক আলী আযম, মাগুরার সাবেক জেলা আমির ডক্টর আলমগীর বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য আব্দুল মতিন, সাতক্ষীরা জেলা আমির শহীদুল ইসলাম মুকুল, নড়াইলের জেলা আমির অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বাচ্চু, মাগুরার জেলা আমির এ বি এম বাকের প্রমুখ।
সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান ও তরঙ্গ শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস ও নুর আল মামুন।
আন্দোলনে নিহত আব্দুল্লাহর বাড়ি গেলেন ডা: শফিকুর রহমান
বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহত রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী মো: আব্দুল্লাহ তিন মাসেরও অধিক সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ইন্তেকাল করেন।
তার পরিবার-পরিজনদের সান্ত¡না দিতে গতকাল শুক্রবার বিকেলে যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল বড় আঁচড়া গ্রামে যান বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের আমিরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান। এ সময় তিনি নিহত আব্দুল্লাহর মা-বাবা, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে দেখা করেন এবং পরিবারের খোঁজ-খবর নেন।
পরে নানা-নানীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আব্দুল্লাহর কবর জিয়ারত করেন এবং তার রূহের মাগফিরাত কামনা করেন। এর আগে তিনি যশোর টাউনহল ময়দানে জামায়াতে ইসলামীর এক দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং দলের নেতাকর্মী উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।
এ সময় আমিরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান বলেন, আব্দুল্লাহ এলাকার গৌরব। তার কারণে আজ আমাদের এখানে আসা। আব্দুল্লাহ শহীদ না হলে আদৌও এখানে আসার সৌভাগ্য হতো কি না আমি জানি না। শহীদ আব্দুল্লাহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদ-মুক্ত করার জন্য নিজের সম্ভাবনাময় জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। তার আত্মত্যাগের জন্য জাতি গর্বিত। আমি আশা করি সারা দেশ তাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে এবং তাকে জাতীয় বীরের মর্যাদা প্রদান করবেন।
আমি মহান রবের নিকট দোয়া করি তিনি যেন তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন তার পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন। এ সময় তিনি শহীদ আব্দুল্লাহর পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং তার পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শাহাদত বরণকারী সবাই ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এবং তাদের সবার পরিবারের সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সব সময় পাশে থাকবে বলে জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিহত আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোর জেলা শাখার আমির গোলাম রসুল, শার্শা থানা আমির রেজাউল ইসলাম ও থানা শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা