২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
উড়োজাহাজ জব্দ সবার জন্য সতর্ক বার্তা

বিমানে স্বর্ণ পাচার রোধে কঠোর হচ্ছে কাস্টমস গোয়েন্দা

-

আকাশ পথে স্বর্ণ পাচার রোধে কঠোর হচ্ছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। তাদের কঠোর মনোভাবের কথা গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দেশী-বিদেশী বিমান সংস্থাগুলোকে লিখিতভাবে জানিয়ে দেয় সংস্থাটি। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ হতে চোরাচালান হয়ে আসা স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় কাগজে-কলমে সেটি জব্দ করে এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে সংস্থাটি। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, এটি এয়ারলাইন্সগুলোকে একটা সতর্কবার্তা মাত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাস্টম গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান নভেম্বরে বিমান সংস্থাগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী বা কান্ট্রি ম্যানেজারদের কাছে স্বর্ণ চোরাচালান প্রতিরোধে এয়ারলাইন্সগুলোর সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।
‘উড়োজাহাজের ভেতরে লুকানো স্বর্ণ চোরাচালান প্রতিরোধের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা প্রসঙ্গে’ শীর্ষক ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবতরণকৃত বিভিন্ন উড়োজাহাজের মাধ্যমে চোরাচালানের উদ্দেশ্যে আনীত স্বর্ণ কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে আটক করা হয়ে থাকে। পরে আটককৃত স্বর্ণ কাস্টমস আইনের বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ফৌজদারি মামলা করা হয়। কিন্তু যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিবেচনায় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাহাজগুলো অন্তর্বর্তীকালীন ছাড় দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, চোরাচালানকৃত স্বর্ণ অনেক ক্ষেত্রেই উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পয়েন্টে যেমন- সিটের নিচে, বাথরুমে, বাথরুমের পাইপের নিচে, ক্যাটারিং এরিয়া, ল্যাগেজ সংরক্ষণের স্থানসহ বিভিন্ন স্থানে এমন অভিনব কায়দায় লুকায়িত অবস্থায় থাকে যে, সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত না থাকলে এ ধরনের অপতৎপরতা সংঘটন সম্ভব নয়। এর দায় এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর বিশ্বাস করে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সচেতন ও কঠোর হলে এ ধরনের স্বর্ণ চোরাচালান প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

চিঠিতে বলা হয়, উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে বিভিন্নভাবে লুকিয়ে এ ধরনের চোরাচালান যেন সংঘটিত হতে না পারে সে লক্ষ্যে সুস্পষ্ট, সুদৃঢ় ও দৃশ্যমান পদপেক্ষ নেয়ার জন্য এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়। একই সাথে ভবিষ্যতে, এ ধরনের চোরাচালানের ঘটনা সংঘটিত হলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্যমান বিধিবিধান অনুযায়ী মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এ দিকে গত বৃহস্পতিবার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১৪৮ উড়োজাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), বিমান বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ ও কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এই উড়োজাহাজের ‘৯জে’ আসনের নিচ থেকে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ২ কেজি ৩৩০ গ্রাম ওজনের ২০টি সোনার বার জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ওই আসনের সংশ্লিষ্ট যাত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়। একই সাথে চোরাচালানের স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় উড়োজাহাজটিই জব্দ করে কাস্টমস গোয়েন্দা। মূলত বিমানটির পাইলট ক্রুদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতেই এমন উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি সব এয়ারলাইন্সগুলোকে এটি এক ধরনের সতর্কবার্তা হিসেবে বলছেন তারা।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো: মিনহাজ উদ্দিন গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর স্বর্ণের বড় চালান খুব একটা আসেনি। আমরা এই অবস্থাটা ধরে রাখতে চাই এবং আস্তে আস্তে স্বর্ণ চোরাচালানকে শূন্যে নামিয়ে আনতে চাই। তিনি বলেন, বিদেশের এয়ারপোর্টগুলোকে যাত্রীদের ফাইনাল চেকিংয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তল্লাশি করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিমানের অভ্যন্তরে স্বর্ণ আসে কিভাবে? তাই এ ব্যাপারে বিশেষ নজরদারির জন্য আমরা সব এয়ারলাইন্সকে চিঠি দিয়েছি।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, চোরাচালানের পণ্যের সাথে ক্যারিয়ার জব্দ করার নিয়ম আছে। বিমান যেহেতু ন্যাশনাল ক্যারিয়ার, আমরা ডকুমেন্টারি বিমানটি জব্ধ করেছি যাতে বিমানটির পাইলট-ক্রুদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়। বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহজটি জব্দ করার মাধ্যমে সব এয়ারলাইন্সগুলোকে একটা বার্তা দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সামনে এ ধরনের চোরাচালানের স্বর্ণ ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট এয়ারক্রাফট জব্দ করা হবে। একই সাথে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতেও এয়ারলাইনসগুলোকে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।

 


আরো সংবাদ



premium cement